এতদিন বুঝতেই পারেননি কিছু। কয়েকদিন ধরে হাঁটাহাঁটির সময়ে কেবল শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছিল ৫২ বছর বয়সী নেপালবাবুর। সমস্যা বাড়তে কালনা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। সেখানেই ধরা পড়ল হৃদযন্ত্রের একটি ভাল্ভই নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাঁর। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন মোটা টাকার।
সারাজীবন যজমানি করে সংসার চালানো নেপালবাবুর ন্যূনতম চিকিৎসাটুকুও হয়তো হত না, যদি না প্রতিবেশিরা তাঁর পাশে দাঁড়াতেন। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সমুদ্রগড় পঞ্চায়েতের জ্বালাহাটি গ্রামের পাঁচশো পরিবার এখন নেপালবাবুর পাশে। বেশিরভাগই তাঁত চালান। তাতে রোজগারই বা কী এমন হয়! তাও সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই সোমবার নেপালবাবুর জন্য তাঁরা নিজেরা চাঁদা তুলে জোগাড় করলেন প্রায় সতেরোশো টাকা। গুনে গেঁথে সব টাকাই তুলে দিলেন নেপালবাবুর হাতে। উদ্যোক্তারা জানালেন, শুধু নিজেদের গ্রামে নয়, তাঁরা নেপালবাবুকে সুস্থ করে তোলার জন্য হাটে-বাজারেও প্রচার করবেন, টাকা তুলবেন তাঁর চিকিৎসার জন্য। |
টাকা তুলতে প্রচার সমুদ্রগড়ে। ছবিটি তুলেছেন কেদারনাথ ভট্টাচার্য। |
গ্রামবাসীরা জানান, অসুখ ধরা পড়তেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়েছিল নেপালবাবুর পরিবারের। তাঁর এক মাত্র ছেলে গ্রামে টিভি সারানোর কাজ করেন। তাতে যা রোজগার হয়, তাতে বাবাকে এত ব্যয়সাধ্য চিকিৎসা করানো সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে। বাধ্য হয়ে নিখরচায় চিকিৎসার আশায় নেপালবাবুকে তাঁর পরিবার নিয়ে যায় বেঙ্গালুরুতে। কিন্তু, যাওয়াই সার। নিখরচায় চিকিৎসা মেলেনি তাঁদের। অগত্যা ফিরে আসেন তাঁরা। মাস দেড়েক আগে বাড়াবাড়ি হওয়াতে তাঁকে ভর্তি করা হয় কল্যাণী গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে। একটি নয়, দু’টি ভাল্ভই নষ্ট হয়ে গিয়েছে নেপালবাবুর। চিকিৎসার জন্য দ্রুত প্রায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। গ্রামবাসী সুবীর দাস, শ্যামল চৌধুরী, শচীন সরকারেরা বলেন, “টানাটানির সংসারে চিকিৎসার জন্য এতগুলো টাকা এখন ওঁদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই আমরাই ওঁদের জন্য অর্থ-সংগ্রহে নেমেছি।”
কিন্তু মাত্র সতেরোশো টাকাতে কীই বা হয়? প্রয়োজনের তুলনায় তো তা যৎসামান্য!
গ্রামবাসীরা অবশ্য হতাশ নন। তাঁরা বলছেন, “দেখবেন, বিন্দু বিন্দু করে ঠিক সিন্ধু হয়ে যাবে!” তাঁদের আশা, সাধারণ মানুষের ছোট ছোট সাহায্যের পাশাপাশি কেউ না কেউ ঠিকই একটু বেশি সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসবেন!
প্রতিবেশিদের পাশে পেয়ে মনের জোর পাচ্ছেন নেপালবাবুও। তিনি বলছেন, “বাঁচার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। ছেলেরা যেভাবে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে আবার সুস্থ হয়ে উঠব আমি। গ্রামবাসীদের কাছে কৃতজ্ঞ।” তাঁর ছেলেও বলেন, “সবাই যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে মনে জোর পাচ্ছি।” |