প্রস্তাবিত মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে (এমএমসি) আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই পঠনপাঠন শুরু হবে।
রাজ্যের মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা ওই কলেজের স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি সুব্রত সাহা সোমবার এমনই জানিয়েছেন। ওই কলেজে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১০০ জন করে ছাত্র ভর্তি করা হবে বলেও তিনি জানান। কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপকুমার সাহা ও পূর্ত দফতরের সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার সমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে সোমবার দুপুরে তিনি ওই কলেজের নির্মীয়মাণ ভবন ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, “চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে পঠনপাঠান চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিকাঠামোগত কিছু খামতি থাকায় মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার অনুমোদন মেলেনি।” ফলে চলতি শিক্ষাবর্ষে কলেজ চালু করা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সম্প্রতি এমসিআইয়ের ৪ পরিদর্শক দল সরজমিনে ঘুরে দেখে পরিকাঠামো সংক্রান্ত বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। |
মন্ত্রী ওই কথা বললেও গত ২৭ এপ্রিল সরজমিনে এমএমসি ঘুরে দেখার সময় কাউন্সিলের সদস্যদের কাছে পরিকাঠামো গত অভাব ফের ধরা পড়ে। ওই দিন বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসাপাতাল ঘুরে দেখার সময় এমসিআই প্রতিনিধিরা জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের জানান, ইউএসজি মেশিন খারাপ, চক্ষু বিভাগের দু’টো ও পিডি রুম থাকার কথা কিন্তু রয়েছে একটি। নার্সিং স্টাফ কম। ব্লাডব্যাঙ্কের স্টাফও অনেক কম। এমনকী ওই দিন মেয়াদ উর্ত্তীণ প্রায় ৫০টি ইঞ্জেকশন দেখেও অবাক হয়ে যান তাঁরা। অধ্যক্ষ প্রদীপকুমার সাহা বলেন, “পরিকাঠামোগত খামতিগুলি পূরণ করে প্রথম বর্ষের উপযোগী করা হয়েছে। ফলে এমসিআই প্রতিনিধিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বছর দুয়েক আগে প্রস্তাবিত মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রায় ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। তারপরই কলেজ ভবন তৈরির জন্য ২০১০ সালের ২৬ অক্টোবর ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতাল এলাকা ঘুরে দেখে ওই দিনই সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে মেডিক্যাল কলেজে পঠনপাঠন শুরু হবে। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে সম্ভব হয়নি।
বহরমপুরের স্টেট জেনারেল হাসপাতালটি দু’টি ভাগে বিভক্ত। মেডিসিন বিভাগ ও প্রসূতি বিভাগ ‘মাতৃসদন’ রয়েছে বহরমপুর শহরের পশ্চিমপ্রান্তে ভাগীরথীর পাড়ে। সেটি ‘পুরনো হাসপাতাল’ বা ‘সদর হাসপাতাল’ নামে পরিচিত। সেখান থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় রয়েছে সার্জারি বিভাগ। সেটি নিউ জেনারেল হাসপাতাল। নিউ জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে রয়েছে প্রায় ২৭ একর জমি। জমি সমস্যা না থাকলেও পরিকাঠামোর শর্ত পূরণ না করায় ওই শিক্ষাবর্ষে কলেজ চালু করা যায়নি। সেই সঙ্গে এম সি আই-এর থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন পাওয়ার বিষয়ে আরও একটি সমস্যা রয়েছে।
পুবর্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রস্তাব ছিল, পৃথক দু’টি ক্যাম্পাস, নিউ জেনারেল হাসপাতাল আর পুরনো হাসপাতাল মিলে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ গড়ার । মৎস্যমন্ত্রী সুব্রত সাহা অবশ্য বলেন, “পুরনো হাসপাতালটি যেমন রয়েছে তেমনি ভাবেই পৃথক একটি হাসপাতাল হিসাবে থাকবে। নিউ জেনারেল হাসপাতাল চত্বরের মেডিক্যাল কলেজে নতুন একটি মেডিসিন বিভাগ ও প্রসূতি বিভাগ খোলা হবে।” মন্ত্রীর পাশে বসেই কিন্তু এ দিন পৃথক কথা শোনালেন কলেজের অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ বলেন, “পুরনো হাসপাতাল ও মাতৃসদন মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে স্থানান্তারিত করা হবে।” ওই বিষয়ে কে সঠিক— মন্ত্রী, না অধ্যক্ষ? সময়ই তা বলবে। |