রাজ্য সরকার কোনও বিশেষজ্ঞ কমিটি বা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সঙ্গে কোনও আলোচনা না-করেই দুর্গম ও উপদ্রুত এলাকার হাসপাতালে কর্মরত সরকারি চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষায় বাড়তি ৩০ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। কয়েক জন চিকিৎসকের আইনজীবী সপ্তাংশু বসু এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উল্লেখ করে সোমবার বলেন, সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেই পারে না। কোনও রোগী জেনেশুনে ‘গ্রেস’ পাওয়া চিকিৎসকের হাতে নিজেকে তুলে দেবেন, এটা ভাবা যায় না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিচারপতি সুবল বৈদ্যের ডিভিশন বেঞ্চ এমএস এবং এমডি পাঠক্রমে ভর্তির কাউন্সেলিং ১৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে দেয়। বিচারপতি রায় জানিয়ে দেন, ১৮ মে তিনি রায় দেবেন। এ ভাবে বাড়তি ৩০ নম্বর দেওয়ার বিষয়টি যে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সুফল দেবে না, শুনানির সময় বারবার তার উল্লেখ করেছেন বিচারপতি। সরকার দুর্গম ও উপদ্রুত এলাকা চিহ্নিত করার ব্যাপারে এ দিন নতুন যে-সব কাগজপত্র জমা দিয়েছে, তাতেও এটা পরিষ্কার যে, দ্রুত কাজ করার জন্য দুর্গম ও উপদ্রুত এলাকার হাসপাতাল চিহ্নিত করার কাজ হয়েছে কোনও ভিত্তি ছাড়াই। এ দিন জমা দেওয়া তথ্যও হাইকোর্টকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
সপ্তাংশুবাবু বলেন, রাজ্য সরকার দুর্গম ও উপদ্রুত এলাকার হাসপাতাল চিহ্নিত করতেই পারে না। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়েই দুর্গম এলাকায় কাজ করার ব্যাপারে চিকিৎসকদের সম্মতি নিতে হবে। সেখানে কাজ করলে বাড়তি কী সুযোগ মিলবে, জানাতে হবে তা-ও। তিনি জানান, মধ্যপ্রদেশে পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার পরে চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁরা দুর্গম ও উপদ্রুত এলাকায় যেতে রাজি কি না।
চিকিৎসকদের একাংশের আইনজীবীরা এ দিন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, এক জন চিকিৎসক হাসপাতালে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে মেধার পরিচয় দিয়েছেন। এমডি, এমএসে ভর্তির পরীক্ষাতেও ভাল ফল করেছেন। কিন্তু তিনি পিছিয়ে যাবেন ওই ৩০ নম্বরের অভাবে। অথচ ভর্তি পরীক্ষায় অনেক কম নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও জেলা হাসপাতালে কাজ করে ৩০ নম্বর ফাউ পেয়ে অনেক চিকিৎসক এমডি-এমএস হয়ে যাবেন।
কিছু চিকিৎসকের আইনজীবী রাজর্ষি হালদার বলেন, কলকাতা থেকে সোজা পথে বর্ধমান যাওয়া আর পাহাড়ি পথে ১০০ কিলোমিটার যাওয়ার পার্থক্যটা কী, বাড়তি নম্বরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সেটা ভেবেই দেখা হয়নি। দুর্গম এলাকায় কর্মরত চিকিৎসকদের বাড়তি সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু সেটা অবশ্যই ঘোরানো পথে উচ্চ পাঠ্যক্রমে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া হতে পারে না। আজ, মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজ্য সরকারের পক্ষে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র সওয়াল করবেন। |