উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসের (এইমস) মতো একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু সে ব্যাপারে প্রশাসনিক কাজ এগোনো দূরস্থান, বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল চাপানউতোর এ বার গড়াল স্বাস্থ্য মন্ত্রক সংক্রান্ত সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটি পর্যন্ত।
সূত্রের খবর, চিকিৎসা পরিকাঠামো বাড়ানো, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় মানব সম্পদের জোগান বৃদ্ধি ও নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের বিষয়ে আজ ওই সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার কথা ছিল। সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের উপস্থিতিতে রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি এইমসের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বৈঠকে দীপা বলেন, রায়গঞ্জে এইমসের মতো একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গঠনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ২০০৯ সালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার তাতে সম্মতি দিয়ে রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলাশাসককে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশও দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্যে নতুন সরকার প্রস্তাবিত হাসপাতালটি দক্ষিণবঙ্গে সরিয়ে আনতে চাইছে। দীপার বক্তব্য, রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া হাসপাতাল গড়তে ২৫ একর জমি প্রয়োজন বলে আগে যে নির্দেশিকা ছিল কেন্দ্রের, তা-ও এখন শিথিল করা হয়েছে। এর পরেও রাজ্য সরকার কেন ঢিলেমি করছে, তা বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক হস্তক্ষেপ করুক।
বালুরঘাটের সাংসদ প্রশান্ত মজুমদারও এই নিয়ে গুলাম নবিকে প্রশ্ন করেন । স্বাস্থ্য মন্ত্রক সংক্রান্ত ওই সংসদীয় কমিটিতে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারও সদস্য। কিন্তু আজকের বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। দীপা বলেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের নেতা। কেন রাজ্য সরকার এমন করছে, তার ব্যাখ্যা হয়তো উনি করতে পারবেন।
জবাবে সুদীপবাবু বলেন, দ্বাদশ যোজনায় এইমসের মতো দু’টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। তার মধ্যে একটি পশ্চিমবঙ্গে। সেই চিকিৎসা কেন্দ্রটি রায়গঞ্জে করার প্রস্তাব থাকলেও রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর তা কল্যাণীতে করতে চায়। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে দু’টি এইমসের মতো প্রতিষ্ঠান গড়তে হবে কেন্দ্রকে। কল্যাণীতে হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য জমি রয়েছে। তাই প্রথম হাসপাতালটি সেখানেই গড়ে উঠুক। পরেরটি হবে উত্তরবঙ্গে। বৈঠকে সুদীপবাবু আরও বলেন, এরই পাশাপাশি রাজ্যের আরও ৬টি জেলায় ৬টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়তে চাইছে রাজ্য সরকার। সে ক্ষেত্রেও উত্তরবঙ্গ অগ্রাধিকার পাবে।
কংগ্রেস-তৃণমূল এই চাপানউতোরে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যান গুলাম নবি। বৈঠকে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে সুষ্ঠু সমাধানের ব্যাপারে সচেষ্ট হবেন। তবে নিষ্পত্তির কোনও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা তিনিও দেননি। যার অর্থ, পশ্চিমবঙ্গে এইমসের মতো হাসপাতাল গড়ার বিষয়টি ঝুলেই রইল। ২০০৯-এর মার্চে ওই হাসপাতাল গড়ে তোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। তিন বছরের বেশি ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছে। |