শতবর্ষ ছুঁতে চলা জলপাইগুড়ির বান্ধব নাট্য সমাজ অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে। ইংরেজ আমলে উত্তরবঙ্গের প্রথম সারির ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তৈরি হয় সাংস্কৃতিক সংস্থা বান্ধব নাট্য সমাজ। জলপাইগুড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলায় প্রায় দুই বিঘে জমিতে ১০৬টি আসন বিশিষ্ট একটি নাট্যমঞ্চ, একটি পৃথক মহড়া হল এবং একটি বড় আকারের সাজঘর রয়েছে। টাকার জন্য পরবর্তীতে নাট্যমঞ্চটি প্রেক্ষাগৃহ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। টাকার অভাবের কারণেই বান্ধব নাট্য সমাজের রক্ষণাবেক্ষনের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নাট্যগৃহের ছাদ ক্রমশ নিচু হতে হতে মাটির দিকে নেমে এসেছে। আসনগুলি ভগ্নপ্রায় দশা। যে কোনও সময় বড়মাপের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই চলছে প্রেক্ষাগৃহটি। সমাজের সুবর্ণজয়ন্তীর সময় মহড়া হলটির উদ্বোধন হয়। সেই সময় এসেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সির্দ্ধাথশঙ্কর রায়, সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শিল্পী সাহিত্যিকেরা। সেই স্মৃতি বিজড়িত মহড়া হলটিরও অবস্থা জরাজীর্ণ। সাজঘরের দেওয়াল ফুঁড়ে দিয়েছে গাছের শিকড়। অযন্তে নষ্ট হয়ে গিয়েছে ঝুলতে থাকা আলো, শব্দের বিভিন্ন যন্ত্র। আগাছা বেরিয়েছে মেঝে ফুঁড়ে। জলপাইগুড়ি শহরের এই সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রকে এমন অযত্নের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সমাজের বর্তমান পরিচালন সমিতি। গত এপ্রিল মাসেই জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের কাছে লিখিত প্রস্তাব পাঠিয়ে সমাজের নিজস্ব প্রায় দুই বিঘা জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার বিনিময়ে সমাজের তরফে একটি অডিটোরিয়াম তথা আধুনিক নাট্যমঞ্চ তৈরি করে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। বাকি জমি সরকার নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবে। প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরেও। |
একসময়ে নাটক আর সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমেই বান্ধব নাট্য সমাজ রাজ্যে প্রতিষ্ঠা পায়। চারুচন্দ্র সান্যাল, খানবাহাদুর মকলেশ রহমান-সহ জলপাইগুড়ির নানা ব্যাক্তিত্বরা সমাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মূলত নাটকের শো টিকিট থেকেই যোগাড় করা টাকা দিয়ে সমাজের কাজকর্ম রক্ষণাবেক্ষন, নতুন নাটকের মঞ্চস্থনার খরচ চালান হত। আশির দশকের মাঝামাঝি নাটকের শো-র টিকিট বিক্রি কমতে থাকে। বান্ধব নাট্য সমাজও আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে। ক্রমে ক্রমে ধুঁকতে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি। ইতিহাসবীদ উমেশ শর্মা বলেন, “ইংরেজ আমলে নাট্য আন্দোলনের মাধ্যমে স্বদেশি চিন্তার উন্মেষ জলপাইগুড়ি থেকেই উত্তরবঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার অন্যতম বাহক ছিল এই বান্ধব নাট্য সমাজ। এই স্মৃতি রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজনীয়।’’ সমাজের বর্তমান পরিচালন সমিতির সম্পাদক সোমনাথ পাল বলেন, “তীব্র অর্থ সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। তিনটে বড় বড় ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যোগানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে এখনও সমাজের নাটক হয়। তবে টিকিট বিক্রি আশানুরূপ নয়। সেই কারণেই সমিতির তরফে জেলা প্রশসানকে জমি অধিগ্রহনের আর্জি জানানো হয়েছে। বিনিময়ে আমাদের শুধু একটি আধুনিক মঞ্চ তৈরি করে দেওয়া হোক। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রকে আমাদের প্রস্তাব পাঠিয়েছি।” |