সবর্দল বৈঠক ডেকে আলিপুরদুয়ার মহকুমাকে পৃথক জেলার মর্যাদা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশে পৃথক জেলা গঠনের ব্যাপারে সমস্ত রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে ১৭ মে জলপাইগুড়িতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। নতুন সরকারের পৃথক জেলা ঘোষণার তৎপরতায় খুশির হাওয়া আলিপুরদুয়ার মহকুমায়। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। রবিবার ধূপগুড়িতে পুর নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও জানান, আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা গঠনের ব্যাপারে তাঁদের নীতিগত কোনও আপত্তি নেই। এই পরিস্থিতিতে ১৭ মে’র বৈঠকে আলিপুরদুয়ারকে জেলা গঠনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ার মহকুমাকে পৃথক জেলা ঘোষণার জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরে যুগ্ম সচিবই জলপাইগুড়ির জেলাশাসককে সর্বদল বৈঠক ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই বৈঠক ১৭ মে বিকেল সাড়ে তিনটেয় জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দফতরে হবে। গৌতমবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছোট ছোট জেলা গঠন করে উন্নয়নের পক্ষপাতী। ইতিমধ্যে বর্ধমান জেলা ভাগ নিয়ে কথা হয়েছে। তা ছাড়া দুই ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর ও জলপাইগুড়ি জেলা ভাগের কাজ চলছে। আলিপুরদুয়ার পৃথক জেলা হলে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ প্রশাসনিক কর্তারা এলাকায় উন্নয়নের কাজ দেখবেন। গঠিত হবে আরও মহকুমা। বাড়বে অর্থ বরাদ্দ। এতে উন্নয়নের কাজে আরও গতি আসবে।” গৌতমবাবুর দাবি, দেশের সমস্ত রাজ্যগুলিতেই জেলার আয়তন আকারে ছোট। তিনি বলেন, “আমরা ওই বৈঠকে সর্বদল ঐক্যমত নিয়ে আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা গঠনের পক্ষে মহাকরণে রিপোর্ট পাঠাব।” জলপাউগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “১৭ মে’র বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য জেলার সমস্ত সাংসদ, বিধায়ক, রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সম্পাদকদের জানানো হচ্ছে। বৈঠকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি উপস্থিত থাকার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক, তাই তাদের ডাকা হচ্ছে না।” জেলা গঠনের ব্যাপারে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় আলিপুরদুয়ারের খুশির হাওয়া। সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক মহলও। কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “ভৌগোলিক কারণেই আলিপুরদুয়ার মহকুমার বিভিন্ন এলাকার অবস্থান দুর্গম এলাকায়। সেই কারণেই দীর্ঘদিন ধরে পৃথক জেলার দাবি রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত আলিপুরদুয়ার মহকুমা পৃথক জেলা ঘোষণা করা হবে।” আরএসপির নেতা আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক নির্মল দাস জানান, তাঁরা ২৫ বছর আগে আলিপুরদুয়ার মহকুমাকে পৃথক জেলা ঘোষণার বিষয়ে কনভেনশন করেন। গঠিত হয় আলিপুরদুয়ার জেলা নির্মাণ দাবি মঞ্চ। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব রয়েছেন। তিনি বলেন, “সেই সময় তৎকালীন রাজ্যপাল বীরেন জে শাহ, গোপালকৃষ্ণ গাঁধী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে জেলা গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসনিক সংস্কার কমিটি আলিপুরদুয়ার মহকুমাকে পৃথক জেলার সুপারিশ করা সত্বেও বড় শরিক সিপিএমের আপত্তিতে তা বাস্তবায়িত হয়নি। তারপরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পৃথক জেলার দাবিপত্র দিয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।” ফালাকাটার বিধায়ক তথা তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনিল অধিকারী বলেন, “আলিপুরদুয়ার মহকুমাকে পৃথক জেলা গঠনে উদ্যোগী হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। আশা করছি শীঘ্র আলিপুরদুয়ার পৃথক জেলার মর্যাদা পাবে।” |