ভোটের কাজে ব্যক্তিগত গাড়ি হুকুমদখল করা যাবে না বলে আগেই নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এ বার কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিল, আসন্নপ্রসবাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও জোর করে ব্যক্তিগত গাড়ি নেওয়া যাবে না। হাসপাতালে প্রসব নিশ্চিত করার জন্য মহিলাদের সেখানে পাঠাতে ব্যক্তিগত গাড়িও হুকুমদখল করতে হবে বলে রাজ্যের নতুন সরকার যে-বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত সোমবার সেটি খারিজ করে দিয়েছেন।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল বাড়ি থেকে দূরে হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে এখনও অধিকাংশ প্রসবই হয় বাড়িতে। কিন্তু শিশুমৃত্যু ঠেকানো এবং প্রসূতির স্বাস্থ্যের কারণেই হাসপাতালে প্রসব নিশ্চিত করার উদ্যোগ চলছে। কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, বাড়িতে প্রসব বন্ধ করতে হবে এবং সেই জন্য রাজ্য সরকার বিনামূল্যেই আসন্নপ্রসবাদের হাসপাতালে নিয়ে যাবে। হাসপাতালে প্রসব হলে শিশুমৃত্যুর হার কমবে। প্রসূতির স্বাস্থ্যের পক্ষেও সেটা মঙ্গলজনক।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পরেই রাজ্যের পরিবহণ দফতরের পরামর্শে মোটরযান বিভাগ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, আসন্নপ্রসবাদের দ্রুত হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনে ব্যক্তিগত গাড়িও হুকুমদখল করা যাবে। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সাঁতরাগাছির এক বাসিন্দা হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁর বক্তব্য, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের গাড়ি হুকুমদখল করা যেতে পারে। কিন্তু যিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে গাড়ি কেনেন, সরকার খুশিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে তাঁর গাড়ি হুকুমদখল করতে পারে না। তিনি ইচ্ছা করলে মানবিক কারণে প্রতিবেশী বা এলাকার অন্য বাসিন্দাদের জরুরি প্রয়োজনে সেই গাড়ি ব্যবহার করতে দিতে পারেন। কিন্তু হুকুম দিয়ে তাঁর গাড়ি দখল করা যায় না। সংবিধান ব্যক্তিকে যে-মৌলিক অধিকার দিয়েছে, ব্যক্তিগত গাড়ি হুকুমদখলের বিজ্ঞপ্তি তার বিরোধী। সরকারি বিধিও এই ধরনের বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে বলে জানান তিনি।
সরকার পক্ষের আইনজীবী সুশোভন সেনগুপ্ত বলেন, সরকার প্রসূতিদের হাসপাতালে পাঠানোর পরিষেবা দিচ্ছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। আসন্নপ্রসবাদের কাছ থেকে এই খাতে কোনও অর্থ নেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে যাতে প্রসব হতে পারে, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা। সরকার গাড়ি হুকুমদখল করবে না। তবে ব্যক্তিগত গাড়িকেও এই কাজে লাগানোর জন্য একটি তালিকা তৈরি করবে। প্রয়োজনে সেই তালিকা থেকে গাড়ি নেবে।
সব পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রায় দেন, সরকার কোনও অবস্থাতেই ব্যক্তিগত গাড়ি নিতে পারে না। নির্বাচনের কাজেও পারে না। প্রসূতি বহনের কাজেও পারবে না। সরকার প্রয়োজনে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত গাড়ি হুকুমদখল করতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়িকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যায় না। আসন্নপ্রসবাদের হাসপাতালে পাঠানোর জন্য যে-ব্যক্তিগত গাড়ি হুকুমদখল করা হবে, তা ব্যবহার করার জন্য সরকার গাড়ির মালিককে অর্থ দেবে। তার ফলে ব্যক্তিগত গাড়ির চরিত্র যাবে বদলে। ‘ব্যক্তিগত গাড়ি’ হয়ে যাবে ‘বাণিজ্যিক গাড়ি’। আইন অনুযায়ী সেটা মোটেই করা যায় না। ব্যক্তিগত গাড়ি এবং বাণিজ্যিক গাড়ির শংসাপত্র কিংবা পথকর এক নয়। |