নির্দেশ বিদ্যুৎ পর্ষদকে বাবার মৃত্যুতে চাকরি
পাবেন বিবাহিতা মেয়েও

জীবন এবং সমাজের কোনও ক্ষেত্রেই যে বিবাহিত ছেলে ও বিবাহিতা মেয়ের মধ্যে কোনও ফারাক করা যায় না, ফের তা সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যু হলে বিবাহিত ছেলে যদি চাকরি পেতে পারে, বিবাহিতা মেয়েও তার সমান দাবিদার। আদালত জানিয়ে দিয়েছে, বাবার সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ের যেমন সমান অধিকার, এই ধরনের পরিস্থিতিতে চাকরির ক্ষেত্রেও তা-ই। একটি মামলায় আবেদনকারিণীকে তাই বাবার মৃত্যুর দরুন প্রাপ্য চাকরি দিতেই হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, ছেলে বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে চলে যায় না, কিন্তু মেয়েকে যেতে হয়। তাই সমাজে সাধারণ ধারণা, বিবাহিত ছেলে বাবা-মাকে দেখবে। কিন্তু বিবাহিতা মেয়ে দেখবে না। আদালতের বক্তব্য, দীর্ঘদিনের একপেশে মানসিক অবস্থান থেকে এই ফারাক তৈরি হয়েছে। ছেলে আর মেয়ের মধ্যে তৈরি হয়েছে বৈষম্য। আইন এই বৈষম্য এবং এই একপেশে মানসিক অবস্থান সমর্থন করে না। এই ধরনের ফারাক করলে সেটা সম্পূর্ণ লিঙ্গবৈষম্যের ঘটনা বলেই বিবেচিত হবে।
কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যু হলে বিবাহিতা মেয়ে সেই চাকরি দাবি করতে পারবেন না কেন? এই প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন স্বাতী বসু (ঘোষ) নামে এক মহিলা। বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী সোমবার রায় দিয়ে জানিয়ে দেন, ১০ সপ্তাহের মধ্যে স্বাতীদেবীকে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদে চাকরি দিতে হবে। বিদ্যুৎ পর্ষদের যুক্তি ছিল, কর্মরত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে তারা বিবাহিতা মেয়েকে চাকরি দেয় না। কারণ বিবাহিতা মহিলা চাকরি পেলে প্রয়াত ব্যক্তির পরিবারের কোনও লাভ বা উপকার হয় না।
অমলকান্তি বসু বর্ধমানে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদে চাকরি করতেন। ২০০৭ সালে তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০০৪ সালে তিনি মারা যান। বাবার মৃত্যুর আগেই স্বাতীদেবীর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। পণের জন্য বিয়ের পর থেকেই তাঁর উপরে অত্যাচার শুরু হয়। এক সময় অত্যাচার এমন স্তরে পৌঁছয় যে, তাঁকে বাবার কাছে ফিরে যেতে হয়। বাবা তখন বেশ অসুস্থ। কিছু দিন পরেই অমলবাবুর মৃত্যু হয়। স্বাতীদেবী একটি বাড়িতে বাচ্চাদের দেখভালের কাজ নেন। সেই টাকায় এবং আরও নানা ধরনের কাজ করে তিনি সংসার প্রতিপালন করছিলেন। ছোট ভাইয়ের লেখাপড়াও চালিয়ে যান। কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যুতে নিয়ম অনুযায়ী পোষ্য হিসেবে চাকরি চেয়ে বিদ্যুৎ পর্ষদের কাছে আবেদন-নিবেদনও করতে থাকেন। প্রয়োজনীয় নথিপত্র দাখিল করা সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অসংখ্য বার ঘোরাঘুরি করার পরে পর্ষদ জানিয়ে দেয়, কর্মরত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে তারা পোষ্যকে চাকরি দেয় ঠিকই। কিন্তু বিবাহিতা মেয়েকে চাকরি দেওয়া হয় না।
অগত্যা আদালতের শরণাপন্ন হন ওই মহিলা। আবেদনকারিণীর পক্ষে আইনজীবী শম্পা দাস বলেন, কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যুর পরে কোনও বিবাহিত ছেলে যদি চাকরির আবেদন করেন, তা হলে পর্ষদ তাকে চাকরি দেয়। কিন্তু বিবাহিতা মেয়ে সেই চাকরি চাইলে তা দেওয়া হয় না। এটাই পর্ষদের বক্তব্য। শম্পাদেবী বলেন, এতে স্পষ্টতই বৈষম্য করা হচ্ছে। তাঁর যুক্তি, প্রথম থেকেই ধরে নেওয়া হয় যে, বিবাহিতা মেয়ে চাকরি পেলে তিনি পরিবারের অন্যদের দেখবেন না। যদিও বিবাহিত ছেলেও যে পরিবারের অন্যদের দেখেন না, এমন নজির কম নয়। কলকাতা হাইকোর্টেই বৃদ্ধ বাবা-মা প্রায় রোজই ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা করছেন। অভিযোগ জানাচ্ছেন, বাবা-মায়ের তৈরি বাড়িতে থেকেও ছেলে তাঁদের দেখছে না। উল্টে বাড়ি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। শম্পাদেবী সওয়ালে বলেন, লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়টি সমাজমানসে এমন ভাবে গেড়ে বসেছে যে, সর্বস্তরে সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিচার করা হচ্ছে। হাজারো অন্যায় করেও ছেলে পার পেয়ে যাচ্ছে। মেয়ে বঞ্চিত হচ্ছে অধিকার থেকে।
বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে জানান, আইনের চোখে ছেলে আর মেয়ে সমান। সুপ্রিম কোর্ট আগেই এই বিষয়ে সুস্পষ্ট রায় দিয়েছে। সে-কথা বলা আছে সংবিধানেও। কিন্তু এখনও বিবাহিত ছেলে আর বিবাহিত মেয়েকে এক ভাবে দেখা হয় না। বিয়ের পরে ছেলে যেমন বাবার পরিবারের সদস্য থাকে, মেয়েও তা-ই থাকে। তাই বিবাহিত ছেলে বা মেয়ের মধ্যে কোনও বৈষম্য করা যাবে না। বাবার বাড়িতে এবং অন্য সর্বত্র বিবাহিত ছেলে এবং বিবাহিতা মেয়ের সমান অধিকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.