|
|
|
|
বকেয়া না পেয়ে স্কুলে তালা ঝুলিয়েছে ঠিকাদার |
ফ্লাড সেন্টারেই ক্লাস চলছে পড়ুয়াদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট |
স্কুলবাড়ির বারান্দায় দিনের বেলায় গরু-ছাগল বাঁধা থাকে। সন্ধ্যায় সেখানে বসে তাসের আড্ডা। রাত বাড়তেই চোলাই মদ খেতে আসে দুষ্কৃতীরা। স্কুলের মাঠে খেলা করলেও ক্লাস করার অধিকার নেই ছাত্রছাত্রীদের। এমনই দশা নতুন তৈরি বিশপুর হাটখোলা শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, স্কুলবাড়ি তৈরি হওয়া সত্ত্বেও ফ্লাড সেন্টারে ক্লাস করতে বাধ্য হতে হচ্ছে শিশুরা। অভিযোগ, স্কুলবাড়ি তৈরির জন্য বরাদ্দ টাকা সম্পূর্ণ না মেটায় ঘরের চাবি খুলছে না ঠিকাদার। ফলে বাড়ি তৈরির পর রঙের কাজ শেষ হওয়া সত্ত্বেও গত দু’বছর ধরে শিশুদের ক্লাস হচ্ছে ফ্লাড সেন্টারে। এ জন্য ছাত্রছাত্রী, শিক্ষিকা এবং অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ।
ব্লক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিশপুর গ্রামে গৌড়েশ্বর নদী সংলগ্ন ফ্লাড সেন্টারে শুরু হয় বিশপুর হাটখোলা শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। বর্তমানে স্কুলটিতে ১০৪ জন ছাত্রছাত্রী এবং ৪ জন শিক্ষিকা আছেন। নদীর ভাঙন কিংবা অন্য দুর্যোগের সময়ে গ্রামের মানুষ ওই ফ্লাড সেন্টারে আশ্রয় নিলে ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার কথা ভেবে সে জন্য বিশপুর বাজারের পাশে নদীর ধারে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে স্কুলের জন্য বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১০ সালে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়। চারটি ঘরের দরজা, জানালাও লাগানো হয়। এমনকী রঙের কাজও শেষ করা হয়। কিন্তু সব কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ওই বাড়িতে আজও ক্লাস শুরু হয়নি। সেখানে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। |
|
তৈরি হওয়া নতুন স্কুলবাড়ি। ছবি: নির্মল বসু। |
দিনের পর দিন ব্যবহার না হয়ে পড়ে থাকায় স্কুলবাড়িটি দুষ্কৃতীদের আড্ডায় পরিণত হওয়ায় ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা খগেন্দ্রনাথ বর, নিশিরঞ্জন পড়ুয়া বলেন, “অত্যন্ত নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে স্কুলবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদও জানিয়েছিলাম। স্কুলবাড়িটি যেখানে তৈরি হয়েছে সেখানে পুকুর ছিল। দোকান করার জন্য গ্রামের কয়েক জন মাটি ফেলে সেই পুকুর ভরাট করে। সেই জমিতে স্কুল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হলে ঠিকাদার মাটি ভরাটের জন্য টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রক্ষা করেনি। তার উপর স্কুল তৈরির পরেও তা তালাবন্ধ করে রাখায় গ্রামের লোকজন ক্ষুব্ধ।” দীনেশ পাত্র, সন্ধ্যা পণ্ডিত বলেন, “ব্যবহারের অভাবে স্কুল বাড়িতে ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই তা নষ্ট হতে বসেছে। দিনের বেলায় গরু-ছাগলে নোংরা করছে। রাতে চোলাই বিক্রি হচ্ছে। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সব সহ্য করা যায়?”
হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা তথা বিশপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রমিলা বর বলেন, “ঠিকাদার স্কুলঘর তৈরি করার পরে ছাদ ফেটে জল পড়ত বলে বাসিন্দাদের প্রতিবাদের জেরে দ্বিতীয়বার ছাদ তৈরি করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষিকাদের জন্য শৌচালয় এবং রান্নাঘর নেই বলে কিছু অসুবিধা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কিছু সমস্যা থাকায় স্কুলটি চালু করা যাচ্ছে না। তবে দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে স্কুলটি চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
এ দিকে নতুন স্কুলঘর তৈরি হয়ে গেলেও ফ্লাড সেন্টারের মধ্যে মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। চতুর্থ শ্রেণির ঝুম্পা দাস, গোপা দাস, তৃতীয় শ্রেণির প্রীতম জানা বলে, “নতুন স্কুলঘরে বেঞ্চে বসে ক্লাস করব ভেবে আনন্দ হচ্ছিল। তা ছাড়া শীতকালে ঠাণ্ডায় মেঝেতে বসে ক্লাস করতে কষ্ট হয়। বর্ষায় ঝড়-বৃষ্টির জন্য অনেকে ফ্লাড সেন্টারে এসে ওঠে। দিদিমণিরা তখন স্কুল বন্ধ রাখেন। তাই আমরা চাই নতুন স্কুলবাড়িতে ক্লাস করতে।” স্কুলের শিক্ষিকা শোভারানি দাস, নীলিমা পরামাণিক বলেন, “নিজেদের স্কুলে ক্লাস করতে না পারলে ওদের তো খারাপ লাগবেই। কিন্তু আমরা কী করব। কাজের পুরো টাকা না পাওয়ায় ঠিকিদার নতুন স্কুলঘরের চাবি দিচ্ছে না বলে শুনেছি। প্রধান শিক্ষিকা শিপ্রা জানা স্কুলে ক্লাস করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে জানিয়েছেন।”
এ বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতের সমিতির সভাপতি আবুবক্কর গাজি বলেন, “ঠিকাদার স্কুলঘরের চাবি দিচ্ছে না বলে সম্প্রতি আমাকে জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই ঠিকাদারের পাওনা মিটিয়ে অনুষ্ঠান করে নতুন স্কুলবাড়িতে ক্লাস শুরু করা হবে।” |
|
|
|
|
|