ব্যান্ডেল থেকে ধৃত ১
দিনভর স্টেশনে স্টেশনে ছুটে অবশেষে মিলল মেয়ে
নেকটা যেন থ্রিলারের চিত্রনাট্য!
মোবাইলে মিনিটে-মিনিটে অপহরণকারীদের ফোন। তাদের দাবিমতো মুক্তিপণের লক্ষাধিক টাকা নিয়ে ভিড় ট্রেনে এক স্টেশন থেকে অন্যত্র ছুটছেন কলেজছাত্রী মেয়ের ব্যবসায়ী-বাবা। পুলিশে খবর দিলেই মেয়েকে গুলি করা হবে রয়েছে সেই শাসানিও। তবে পুলিশ হাল ছাড়েনি। সাদা পোশাকে ব্যবসায়ীর পিছু নিয়েছে তারাও।
শেষ পর্যন্ত গপ্পো কিন্তু জমল না। সোমবার দুপুরে ব্যান্ডেল স্টেশনে ‘অপহরণকারীদের’ ঘিরে ফেলে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। উদ্ধার হয় কলেজছাত্রী। এক জন পালালেও অন্য ‘অপহরণকারী’কে ধরতে পেরেছে পুলিশ।
তাকে জেরা করে জানা গেল, অপহরণের ব্যাপারটা সাজানো। দিন তিনেক ধরে ‘নিখোঁজ’ ঘোলা থানার নবপল্লির বাসিন্দা করিশ্মা জয়সোয়াল বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন বিপিনপ্রসাদ গুপ্তকে। মুক্তিপণের টাকায় নিশ্চিন্তে সংসার শুরুর ছকও ছিল তাঁদের। চিত্রনাট্যের নায়ক ‘অপহরণকারী’ বিপিন পলাতক।
শুক্রবার বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন করিশ্মা। সেই রাতে তৃতীয় বর্ষের ওই কলেজছাত্রীর মোবাইল নম্বর থেকেই অপহরণের কথা জানায় এক ব্যক্তি। মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এক কোটি টাকা মুক্তিপণও চাওয়া হয়। পরে রফা হয় ৮ লক্ষে।
বাবা রাজকুমার জয়সোয়ালের সঙ্গে করিশ্মা। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য
করিশ্মার বাবা, পরিবহণ ব্যবসায়ী রাজকুমার জয়সোয়ালের কাছে রবিবার রাতে ফের ফোন আসে। বলা হয়, সোমবার সকাল ১০টায় টাকা নিয়ে সোদপুর স্টেশনে আসতে। কোন প্ল্যাটফর্মে, কোথায় টাকার ব্যাগ রাখতে হবে, জানানো হয় তা-ও। সঙ্গে হুমকি টাকা না-দিলে করিশ্মাকে ‘জ্যান্ত’ ফেরত পাওয়া যাবে না। এর পরে পুলিশের পরামর্শমতো ‘অপহরণকারীদের’ সঙ্গে মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষিও করেন ওই ব্যবসায়ী। কালো একটি ব্যাগে কাগজের বান্ডিলের উপর টাকা সাজিয়ে নেন রাজকুমারবাবু। খুঁটিয়ে না-দেখলে টাকার পরিমাণ বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছিল না। বেলা ১০টাতেই সোদপুর স্টেশনে পৌঁছে যান তিনি। সাদা পোশাকে তাঁকে অনুসরণ করছিলেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশকর্মীরা।
সোদপুরে স্টেশনেই ফের ফোন পান রাজকুমারবাবু। বলা হয়, ‘বর্ধমান লোকাল ধরে বর্ধমানে চলে যান। টাকাটা সেখানেই নেব।’ কোন কামরায় উঠতে হবে, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়। ১০টা ৫০-এর বর্ধমান লোকালে ওঠেন
ধৃত আফতাব
ওই ব্যবসায়ী। সাদা পোশাকের পুলিশ ছিল অন্য কামরায়। নৈহাটি স্টেশনে ঢোকার আগে ফের ফোন। রাজকুমারবাবুকে বলা হয় নৈহাটিতে নেমে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে। সেইমতো ফুটব্রিজ দিয়ে এগোচ্ছিলেন রাজকুমারবাবু। কিন্তু ফের মত বদলে ‘অপহরণকারীরা’ জানায়, ‘জলদি ওই বর্ধমান লোকালেই উঠুন। ব্যান্ডেলে নামবেন।’ নৈহাটি স্টেশনে কিছুক্ষণ থামে ট্রেনটি। কোনওমতে ছুটে ফের উঠে পড়েন ‘অপহৃত’ তরুণীর বাবা। সাদা পোশাকের পুলিশও ফের ওঠে ট্রেনে।
ট্রেন ব্যান্ডেলে আসতেই ফের ফোন। ব্যান্ডেলেও নামতে নিষেধ করা হয়। ট্রেন রওনা দিলে আবার বলা হয়, খন্যান স্টেশনে ট্রেন থেকে না-নেমে টাকার ব্যাগ প্ল্যাটফর্মে ছুঁড়ে ফেলতে হবে। তা হলেই মেয়েকে ফেরত পাবেন। তখন মানসিক চাপ সত্ত্বেও পুলিশকর্তাদের ‘সাবধানবাণী’ ভোলেননি রাজকুমারবাবু। তিনি জানিয়ে দেন, ‘এক হাতে টাকার ব্যাগ দেব, অন্য হাতে মেয়েকে চাই। না হলে টাকা দেব না।’
তখন তাঁকে ফের ব্যান্ডেল স্টেশনে ফিরতে বলা হয়। ঘড়িতে তখন দুপুর ৩টে। ফোনে এ বার বলা হয় কাঁকিনাড়ায় যেতে। ব্যান্ডেল স্টেশনে তখন লোকজন কম। কাঁকিনাড়া যাবেন বলে ফুটব্রিজ ধরে হাঁটছিলেন রাজকুমারবাবু। হঠাৎ নীল ওড়নায় মুখ ঢাকা বোরখা পরা একটি মেয়ের দিকে চোখ পড়ে। মেয়েটির সঙ্গে ছিল দু’জন যুবক। চটি আর পায়ের গড়ন দেখে নিজের মেয়েকে চিনতে পারেন বাবা। মেয়ের নাম ধরে ডাকেন তিনি। কিছুটা দূরেই ছিলেন তিন পুলিশ অফিসার। তাঁরা দ্রুত এগিয়ে যান। গণ্ডগোল বুঝেই পালায় এক যুবক। ধরা পড়ে যায় আফতাব আনসারি নামে আর এক জন।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় এ দিন সন্ধ্যায় জানান, দু’বছর ধরে বিপিনপ্রসাদ গুপ্তর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল করিশ্মার। দেরাদুনের বাসিন্দা বিপিন বর্তমানে নৈহাটিতে ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে থাকেন। এমসিএ পড়তে পড়তে ছেড়ে দিয়েছিলেন। অপরাধের কোনও রেকর্ড নেই। পুলিশের দাবি, বিপিনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতেন করিশ্মার বন্ধুরাও। করিশ্মা স্বেচ্ছায় বিপিনের সঙ্গে গিয়েছিলেন। শুক্রবার থেকে তাঁরা নৈহাটিতেই ছিলেন।
করিশ্মা প্রথমে পুলিশকে বলেছিলেন, কলেজ থেকে ফেরার সময় জোর করে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি জেরায় জানান, সোমবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে ব্যান্ডেল স্টেশনে ছিল বিপিনও। আফতাবের দাবি, অপহরণ নিয়ে সে কিছুই জানে না। বিপিনের কথায় স্টেশনে এসেছিল। সঞ্জয়বাবু বলেন, অপহরণ-কাণ্ডের রহস্যভেদে পাঁচ জনের একটি দল তৈরি করা হয়েছিল। তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.