মাঠের ভিতর তাঁকে ছোঁয়ার জন্য হাজার খানেক লাল হলুদ সমর্থক পাগলের মতো ছুটে এসেছিলেন। ক্লাব ছাড়বেন না বলে, আকুতি তাঁদের। এই ঘটনার দু’ঘণ্টা বাদেই মহমেডানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিককারী টোলগে ওজবে মোহনবাগান প্রেসিডেন্টের বাড়িতে হাজির। সাংবাদিকদের সামনে তাঁর ঘোষণা, “মোহনবাগানের চুক্তিতে সই করব মঙ্গলবারই। দু’বছরের জন্য।” তার পরে সংযোজন, “আমি ভাগ্যবান। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম গোলও মহমেডানের বিরুদ্ধে। শেষ গোলও ওদের বিরুদ্ধে।”
একদা এই বাড়িতেই কৃশানু, বিকাশ, মনোরঞ্জন, চিমা, তরুণ দে রা এসে ঘোষণা করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার কথা। এ বার টোলগে। মোহনবাগান প্রেসিডেন্ট টুটু বসুর ঘোষণা, ব্যারেটোর দশ নম্বর জার্সি পরবেন টোলগে। যিনি এত দিন লাল হলুদে কুড়ি নম্বর জার্সি পরতেন। টোলগেকে সেই মোহনবাগান জার্সি আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর হাতে তুলে দেবেন গত এক যুগের মোহনবাগানের দশ নম্বর হোসে ব্যারেটো।
কিন্তু টোলগের এই নাটকীয় ঘোষণার পরেই তাঁকে আটকাতে নেমে পড়েছে ইস্টবেঙ্গল। ক্লাবের এক কর্তার চাঞ্চল্যকর দাবি, টোলগে তাঁদের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছেন পরের মরসুমের জন্য। সেই কাগজপত্র জমা দিয়েছেন আই এফ এতে। টোলগের ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, সেই অগ্রিম পরের মরসুমের জন্য নয়। সেটা এ বারেরই টাকা। তা নেওয়া হয়েছিল অনেক দিন আগে। এ দিনই মেল করে জানিয়ে দিয়েছেন, টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন। তবে ইস্টবেঙ্গল সচিব আর একটি চিঠি দিয়েছেন আই এফ এ-কে।
টোলগে কী করে মে মাসে মোহনবাগানে সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন, এই প্রশ্ন তুলে। তাঁদের দাবি, নিয়ম ভাঙা হয়েছে এতে। কেননা, টোলগে তাঁদের চুক্তিবদ্ধ। |
দুই টোলগে: বাঁদিকে ইস্টবেঙ্গলে হ্যাটট্রিক করে।
ডানদিকে মোহনবাগানে এসে। ছবি: সুমন বল্লভ ও উৎপল সরকার
|
টোলগে অবশ্য এ সব পাত্তা দিচ্ছেন না। সাংবাদিকদের সামনাসামনি হওয়ার আগে হঠাৎ খোঁজ পড়ল মোহনবাগান জার্সির। প্রেসিডেন্টের অফিসে সবুজ-মেরুন জার্সি খুঁজে পাওয়া গেল না। টোলগে কাজ চালালেন মোহনবাগানের ছাই রঙের অফিশিয়াল টি-শার্টে। টোলগের ব্যাখ্যা, “আমি কয়েক সপ্তাহ আগে ঠিক করি মোহনবাগানে যাব। কিন্তু তখনও আই লিগে ইস্টবেঙ্গল ভাল জায়গায়। আর কলকাতা লিগ জেতারও দোরগোড়ায় ছিলাম। তাই মনোঃসংযোগ যাতে নষ্ট না হয় কিছু জানাইনি।” তবে টোলগে স্বীকার করে নেন, কয়েক জন লাল-হলুদ কর্তা এবং কোচ ট্রেভর মর্গ্যান তাঁর এই দলবদলের কথা জানতেন। গত বছরের জানুয়ারিতে যখন টোলগের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করতে চেয়েছিল ইল্টবেঙ্গল তখন টোলগে রাজি হননি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেছিলেন, এত বেশি দিনের জন্য নিজেকে জড়াবেন না। সেই সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল সেটাই বোঝাতে চাইলেন টোলগে।
বলে দিলেন, “আমি খুশি মোহনবাগানে এসে।” কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার কারণ নিয়ে মুখ খুলতে চাইলেন না। এক বার বললেন, “সমস্যাটা ব্যক্তিগত।” তার পরেই বললেন, “এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।” তবে মোহনবাগানকে পছন্দ করার কারণ খোলসা করলেন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। বলছিলেন, “ভারতীয় ফুটবলের খোঁজ নিতে গেলে সবার আগে দু’টো ক্লাবের নামই আসে। মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল। এ বার ওডাফার পাশে খেলতে চাই। ওডাফা ম্যাচ জেতানো স্ট্রাইকার। সত্যিকারের তারকা।” তবে অস্ট্রেলীয় তারকা মোটেই ভুলে যাচ্ছেন না পুরনো ক্লাবের সতীর্থদের, সমর্থকদেরও। টোলগের কথায়, “আমি চাই ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা আমাকে গোলগুলোর জন্য মনে রাখুক। যে ট্রফিগুলো ক্লাবের সঙ্গে জিতেছি তার জন্যও মনে রাখুক। আর ওই ড্রেসিংরুমটা আমার মনে থাকবে। গুরবিন্দর-সহ সবাই আমার খুব ভাল বন্ধু। ওদের সঙ্গে নিশ্চয়ই এক দিন খেতে যাব।” |