যেন দশমীর রাত! ‘করব, লড়ব, জিতব রে’-র গা গরম করে দেওয়া হুঙ্কারের মধ্যেও কোথাও যেন করুণ হয়ে বাজছে ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’-এর সুর। বাজবেই তো। সৌরভের সংসারে যেমন আইপিএলের প্রথম তিন বছর বিসর্জনের বাজনা বেজেছে, ঠিক তেমনই ইডেনে এ বার আইপিএলের শেষ ম্যাচে গম্ভীরের সংসারেও যেন সেই এক ছবি। শোকস্তব্ধ। বিপর্যস্ত। বিপন্ন। গত চার বছরে যা হয়নি, এ বার সেই শেষ বলে ছক্কার ধাক্কাও হজম করতে হল নাইটদের। প্লে অফে যা-ই হোক না কেন, আইপিএলের পাঁচ সংস্করণে কেকেআরের রেকর্ড নিয়ে এখনই লিখে ফেলা যায় একটা বই। নাম: ‘জিততে জিততে হারব রে!’
বাউন্ডারির ঠিক বাইরে নীল সোফায় একাকী বসে থাকা শাহরুখ খান যেন নাইট সমর্থকদের জলজ্যান্ত প্রতিচ্ছবি। সুনীল নারিন আর রজত ভাটিয়া মিলে যে স্বপ্নটা দেখাতে শুরু করেছিলেন, ডোয়েন ব্র্যাভোর এক ছক্কায় সেটা চুরমার। চেন্নাই ডাগআউট থেকে যখন মাঠে ছুটে যাচ্ছে হলুদ ঝড়, নাইট মালিকের মুখ তখন এত বিষণ্ণ, যেন মন খারাপের ছবি আঁকা। শেষ বলের ছয়ে বুক ভেঙে দেওয়া হার ভোলার আপ্রাণ চেষ্টা ধরা পড়ে গম্ভীরের গলায়, “ওটা ছেড়ে দিন। আমি ভাবছি পরের দুটো ম্যাচের কথা। পরপর দুটো ম্যাচ হারলেও গো-হারান হারিনি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছে টিম।” আর রাতের ইডেনে নাইটদের কাঁদালেন যিনি, সেই ডোয়েন ব্র্যাভোর গলায় উচ্ছাস, “শেষ বলটা ও রকম লো ফুলটস আসবে ভাবিনি। আগের পাঁচটা বলে যা চাপ ছিল!”
সত্যিই তো, রজত ভাটিয়ার দেওয়া শেষ বলে লো ফুলটসের আগে ইডেনের জন্য যেন অপেক্ষায় ছিল ‘সব ভাল যার শেষ ভাল’। টেনশন ছিল, কিন্তু তার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে ছিল ‘ছোটি সি আশা’ও। নয়তো কেনই বা শাহরুখের টিমের মঙ্গলকামনায় চিরাগ বক্সে বসে তুকতাক করবেন রাজ্যের যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস? কেনই বা ভিআইপি বক্সের বাইরের করিডরে টেনশনে পায়চারি করবেন প্রিয়ঙ্কা টোডি?
আর ইডেন? দেড় মাস ব্যাপী বিনোদন যজ্ঞের দশমী বলে কথা! ৪১ ডিগ্রি গরম আর ঘেমে চান করে যাওয়া হেলায় উড়িয়ে দিয়ে অফিসফেরত শহর সন্ধে থেকেই ছিল ইডেনমুখী। ভিআইপি বক্সে টলিউডের জমজমাট আসর। ছিলেন দেব, জিৎ, শরদ কপূর, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রাইমা, রূপম, কাঞ্চনা, কণীনিকা, রাহুল, যীশু-রা। সন্ধে সাড়ে সাতটায় যখন টস করতে যাচ্ছেন দুই অধিনায়ক, গ্যালারিতে তিলধারণের জায়গা নেই। হইহই করে বাজছে ‘টু হট, টু কুল’। যে দিকে তাকাবেন, খালি সোনালি-বেগুনি পতাকার গর্বিত ওড়াউড়ি।
সেখানেই ইডেনের ‘আইপিএল-দশমী’র রাত ট্র্যাজিক হয়ে আবির্ভূত। মুখের সোনালি-বেগুনি রঙ তুলে দলে দলে মাঠ ছাড়ছেন দর্শক। ঘোর কেকেআর সমর্থক জিৎয়ের গলায় আছড়ে পড়ছে হতাশা, “বুকটা ভেঙে দিয়ে গেল!”
এ বারের মতো ইডেনে আইপিএল যজ্ঞ শেষ। শোকের আবহেই। মন খারাপ নিয়েই ফিরছে রাতের ইডেন। কিন্তু সঙ্গে থাকছে ক্রিকেটকে ভালবেসে সেই চেনা স্লোগান, ‘আসছে বছর আবার হবে!’
|