রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় • উদয়নারায়ণপুর |
এখন আর সেই রাজা-রানি নেই। হদিস মেলে না সেই গড়ের। আগাছার মধ্যে থেকে শুধু উঁকি দেয় জরাজীর্ণ গোপীনাথ জিউয়ের মন্দিরের অংশ। তারও কোথাও ইটে নোনা ধরে খসে পড়ছে। গাছগাছালির শিকড়ের চাপে কোথাও ভেঙে পড়ে আছে মন্দিরের চূড়া। সংস্কারের অভাবে কোনওমতে দাঁড়িয়ে আছে হাওড়ার গড়ভবানীপুরের রাজার তৈরি মন্দিরের একাংশ।
গ্রামবাসীরা জানালেন, প্রায় সাড়ে চারশো-পাঁচশো বছর আগে মুঘল আমলে প্রায় তিনশো বিঘা জমির উপর গড় দিয়ে ঘেরা প্রাসাদ ছিল গড়ভবানীপুরে। সেনানিবাস, অস্ত্রাগার, পুকুর সবই ছিল সেখানে। বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনীর লোক থাকত। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রয়েছে শুধু ভাঙা মন্দিরটির অংশ বিশেষ। শোনা যায়, মন্দিরটির ডান দিকে ছিল ঠাকুরপুকুর। রানি ওই পুকুর থেকে জল এনে পুজোয় বসতেন। সেই পুকুর এখন আর নেই। মাটি দিয়ে সেটিকে ভরাট করে চাষ চলছে। জনশ্রুতি, রাজা রুদ্রনারায়ণের স্ত্রী রানি ভবশঙ্করী পাঠানদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর বীরত্বের জন্য ‘রায়বাঘিনি’ উপাধি পেয়েছিলেন। রাজা পরিচিত ছিলেন ‘ভূরিশ্রেষ্ঠ’ নামে। সেই মতোই পরগনার নাম হয় ডিহিভূরসুট। |
উদয়নারায়ণপুর-গড়ভবানীপুরে ঐতিহাসিক গোপীনাথ জিউয়ের মন্দির সংস্কারের ব্যাপারে পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “২০১০ সালের ১২ এপ্রিল মন্দিরের কাছে পরীক্ষামূলক খননকার্য চালিয়ে বেশ কিছু মাটির পাত্র, টেরাকোটার কাজ, চিনামাটির পাত্র, মাটির প্রদীপ ইত্যাদি পাওয়া যায়। এগুলি সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো বছর আগে মুঘল আমলের বলেই ধরা হচ্ছে। আর গোপীনাথ জিউয়ের ভগ্ন মন্দিরটি সংস্কারের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে।” উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক তৃণমূলের সমীর পাঁজা বলেন, “ঐতিহাসিক গড়ভবানীপুরের গোপীনাথ জিউয়ের মন্দিরটির সংস্কারের বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে আলোচনাও চলছে। এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র যাতে গড়ে ওঠে তারও চেষ্টা চলছে।”
রায়বাঘিনি রানি ভবশঙ্করী স্মৃতি মেলা কমিটির সম্পাদক সুখেন্দুচন্দ্র বলেন, “গড় ভবানীপুরের ইতিহাস পুনরুদ্ধারের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসে চাচা রোডের কাছে রায়বাঘিনী রানি ভবশঙ্করী স্মৃতি মেলা হয়েছে। এই মেলা এখন থেকে প্রতি বছরই হবে। মন্দিরটিকে ঘিরে এখানে একটি পর্যটনকেন্দ্রের জন্য চিন্তাভাবনা চলছে। এখানের মাদুর শিল্প, শোলা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যও মেলায় প্রদর্শনীর কথা ভাবা হচ্ছে।” গড়ভবানীপুর-সোনাতলা পঞ্চায়েতের প্রধান রানু পাল বলেন, “এই মেলা শুরু হওয়ার আগে গড়ভবানীপুরে গোপীনাথ জিউয়ের মন্দিরের কাছে জঙ্গল ও রাস্তা পরিষ্কার করে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দূষণমূক্ত করে মন্দির দেখার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে রাতে আলোর ব্যবস্থাও করা হয়ে। আশপাশের এলাকা থেকে বহু লোক এসেছিলেন মেলায়।” |