|
|
|
|
পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দল, মানছেন না পুরপ্রধান |
প্রকাশ পাল • রিষড়া |
পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। তার পর থেকে কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। কিন্তু পদত্যাগ করা দূরঅসৎ, আগাম কর্মসূচিও ঘোষণা করে দিচ্ছেন রিষড়া পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান শঙ্করপ্রসাদ সাউ। তিনি পদত্যাগ না করায় দলের শীর্ষনেতৃত্বের নির্দেশের ‘মান্যতা’ নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে এই নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ-ই মুখ খুলছেন না।
শঙ্করপ্রসাদবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, দল আদৌ তাঁকে পদত্যাগের কোনও নির্দেশ দেয়নি। সোমবার তিনি বলেন, “আমি কোনও নির্দেশ পাইনি। নির্দেশ পেলে তবে তো কার্যকর করব। আপনারা বাতাসে ভাসা খবর ছাপেন।” শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায় অবশ্য পরিষ্কার বলেন, “ উনি দলের নির্দেশ অমান্য করছেন। আমাদের দলে মৌখিক ভাবেই নির্দেশ দেওয়া রীতি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় নিজে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তা শঙ্করবাবুকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে দলের তরফে। এর পরেও কেন শঙ্করবাবু বলছেন যে তিনি নির্দেশ পাননি, তা বোধগম্য হচ্ছে না।”
দলের কর্মীদের একাংশও শঙ্করবাবুর পদত্যাগ না করা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। সোমবার দুপুরে এক দল কর্মী ওই বিষয়ে জানতে পুরসভায় চেয়ারম্যানের ঘরে যান। তখন শঙ্করপ্রসাদবাবু ছাড়াও দুই চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল এবং এক তৃণমূল নেতা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা হয় বলে পুরসভা সূত্রের খবর। গোটা বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। পুরপ্রধান অবশ্য বচসার বিষয়টি মানতে চাননি।
বরাবরই রিষড়ায় অ-বাম শিবির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বামবিরোধীদের ‘কোন্দল’কে নানা ভাবে কাজে লাগিয়ে রিষড়ায় প্রাক্তন পুরপ্রধান দিলীপ সরকারের নেতৃত্বে নিজেদের ‘ঘাঁটি’ মজবুত করেছিল বামেরা। শেষ পর্যন্ত গত পুরসভা নির্বাচনে বামবিরোধীরা জয়ী হলেও গোষ্ঠীকোন্দল থামেনি। পুরপ্রধান হন কংগ্রেসের শঙ্করপ্রসাদ সাউ। কিন্তু কংগ্রেস শিবিরে মতানৈক্যের জেরে (তৃণমূল শিবিরের খবর ভাগ-বাটোয়ারা এবং পুরপ্রধান পদ নিয়ে মন-কষাকষিতে) চেয়ারম্যান-বিরোধী গোষ্ঠীর চার কাউন্সিলর দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন গত জানুয়ারিতে। তাঁদের ‘অবাক করে’ দিন কয়েকের ব্যবধানে শঙ্করবাবু-সহ আরও ৪ কাউন্সিলর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে চলে আসেন। প্রথমে যে চার জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন শঙ্করবাবু দলে আসায় তাঁরা অসন্তুষ্ট হন। একে, কংগ্রেসে থাকতে দু’পক্ষের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিল। দু’পক্ষই তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেই কোন্দল আরও বেড়ে যায়। শঙ্করপ্রসাদবাবু অবশ্য চেয়ারম্যান থেকে যান। সেই নিয়ে দলেই নানা প্রশ্ন ওঠে।
শেষ পর্যন্ত, দলের রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। গত ৬ মে কলকাতার নিজাম প্যালেসে রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে জেলার নেতাদের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শঙ্করবাবুকে পদত্যাগ করতে বলবে দল। পরবর্তী পুরপ্রধান কে হবেন, তা-ও দলের রাজ্য নেতৃত্বই ঠিক করবেন। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক সুদীপ্ত রায়, দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত, কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূল শিবিরের খবর, ওই দিনই শঙ্করবাবুকে নির্দেশ পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে, কবে পদত্যাগ করবেন বা আদৌ করবেন কি না, শঙ্করপ্রসাদবাবু সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি।
পুরসভা সূত্রের খবর, গত ১০ তারিখে পুরপ্রধান একটি নোটিস দিয়ে ‘বোর্ড অফ কাউন্সিলর’ বৈঠক ডেকেছেন আগামী ২২ তারিখ। ফলে, তাঁর পদত্যাগ করা নিয়ে পুরসভায় জল্পনা তুঙ্গে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিষড়ার এক তৃণমূল নেতা বলেন, “প্রোমোটারদের রাখা নিয়ে দলে বিধিনিষেধ রয়েছে। অথচ শঙ্করবাবু নিজে প্রোমোটার। অনেক অনিয়মের সঙ্গে তিনি যুক্ত। এখন আবার দলের শীর্ষনেতৃত্বের কথাও দিব্যি অমান্য করছেন তিনি। দল ওঁর ব্যাপারে কি করে, সে দিকেই তাকিয়ে আছি।” |
|
|
|
|
|