গাড়ি শিখতে গিয়ে ধাক্কা পথচারীকে, উত্তাল শিবপুর
গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে এক পথচারীকে ধাক্কা মেরেছিলেন এক মহিলা। আর তার জেরেই শেষমেশ এতটা উত্তপ্ত হল পরিস্থিতি যে, র্যাফ নামল এলাকায়।
গাড়িটি চালাচ্ছিলেন হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তার স্ত্রী। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাড়ির ধাক্কা খেয়ে ওই বৃদ্ধ পথচারী প্রতিবাদ করলে সেই পুলিশকর্তা ঘটনাস্থলে এসে তাঁকে মারধর করেন। এ নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হলে পুলিশ উল্টে স্থানীয় বস্তিতে ঢুকে সাধারণ মানুষকেও বেধড়ক মারধর করে। পুলিশের আবার পাল্টা অভিযোগ, ‘সামান্য একটি ঘটনা’কে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দারাই পুলিশের উপরে চড়াও হয়েছিলেন। শেষে বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি সামলাতে মৃদু লাঠি চালাতে হয়েছে।
এই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের জেরে সোমবার সকালে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হাওড়ার শিবপুর থানার কাজীপাড়া এলাকা। প্রায় এক ঘণ্টা পুলিশ ও জনতার খণ্ডযুদ্ধ চলে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (ট্রাফিক) গণেশ বিশ্বাসের স্ত্রী ও এক আত্মীয় কাজীপাড়ার জগৎ ব্যানার্জি ঘাট রোডে গাড়ি চালানো শিখছিলেন। সেই সময়ে স্থানীয় বস্তির বাসিন্দা, সত্তর বছরের বৃদ্ধ শিবনন্দন প্রসাদ বাজার করতে যাওয়ার জন্য হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। অভিযোগ, গণেশবাবুর স্ত্রীর গাড়ি ওই বৃদ্ধকে ধাক্কা মারলে তিনি পড়ে যান। সামান্য আঘাতও পান। এর পরেই তাঁর সঙ্গে গণেশবাবুর স্ত্রীর বচসা বাধে।
সেই সময়ে গণেশবাবুকে ফোন করে ডাকেন তাঁর স্ত্রী। খবর পেয়েই তিনি সেখানে চলে আসেন। শিবনন্দনবাবু বলেন, “আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে ওই অফিসার নিজের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেই আমাকে মারতে শুরু করেন। তা দেখেই প্রতিবাদ করেন স্থানীয় বস্তির লোকেরা।” যদিও পুলিশের অভিযোগ, গণেশবাবু কাজীপাড়ায় আসার পরে তাঁদের উপরে চড়াও হয় বস্তির কিছু লোকজন। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে সেখানে পৌঁছন শিবপুর থানার ওসি জুলফিকার আলি মোল্লা। অভিযোগ, তাঁকেও বস্তির লোকেরা নিগ্রহ করে। পাশাপাশি, পুলিশকর্মীদেরও মারধর করা হয়। ছ’জন পুলিশকর্মী আহত হন। তার মধ্যে দু’জন হাসপাতালে ভর্তি।
ঘটনাস্থলে পুলিশ। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় বস্তির বাসিন্দারা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, শিবপুর থানার পুলিশ অন্যায় ভাবে সকলকে মারধর করছিল। এমনকী, শিবনন্দনবাবুকেও হেনস্থা করছিল। তা দেখেই প্রতিবাদ করা হয়েছিল। তখনই ঢিল-ছোড়া দূরত্বের শিবপুর পুলিশ-লাইন থেকে র্যাফ এসে বস্তিতে ঢুকে ঘর থেকে লোকজনকে টেনে বার করে মারধর শুরু করে। ঘরে ঢুকে টিভি, টালির ছাউনি ভেঙে দেয়। এমনকী, রাতে এসে ফের মারধর করবে বলেও ভয় দেখায়। স্থানীয় বাসিন্দা অনিতা সাউ বলেন, “আমি অন্তঃসত্ত্বা বলার পরেও পুলিশ আমাকে টেনে ঘর থেকে বার করে নিয়ে যায়। পরে ঠেলে রাস্তায় ফেলে দেয়।” তিন জন বস্তিবাসীও আহত হয়েছেন এই ঘটনায়।
পুলিশ জানায়, শিবপুর থানার পুলিশকর্মীদের উপরে হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় র্যাফ। স্থানীয় লোকেরা অভিযুক্তদের ধরতে বাধা দিচ্ছিলেন। রাস্তা অবরোধ করে রেখে পুলিশের উপরে চড়াও হয় জনতা। ঘর থেকে বার করে মারধরের অভিযোগ মানতে নারাজ হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ বলেন, “পুলিশ কাউকে ঘর থেকে বার করে মারেনি। এমন অভিযোগও কারও থেকে পাইনি। পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে গিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়েরা তাঁদের উপরে চড়াও হয়েছিল বলেই মৃদু লাঠি চালিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।”
পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শিবনন্দনবাবু ও তিন জন মহিলা-সহ মোট ১৬ জনকে প্রথমে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে শিবপুর থানা ঘেরাও করেও কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান কাজীপাড়া বস্তির বাসিন্দারা। নিশাদ পারভেজ বলেন, “ওই বৃদ্ধের কোনও ধাক্কা লাগেনি। আচমকা ওই বৃদ্ধ গাড়ির সামনে চলে আসায় জোরে ব্রেক কষে গাড়িটি থামিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই বৃদ্ধ অহেতুক গণেশবাবুর স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.