নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ভোরে একটি পেট্রোল পাম্পে ঢুকে কর্মীদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে লক্ষাধিক টাকা লুঠ করল দুষ্কৃতীরা। বেলার দিকে ওই পেট্রোল পাম্পেরই এক কর্মী ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে যাওয়ার সময়ে তাঁকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে তারা। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ওই কর্মী। খোয়া যায়নি তাঁর সঙ্গে থাকা টাকা। সোমবার, হাওড়ার জগাছা থানার উনসানি এলাকার ঘটনা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, দু’টি ঘটনাই একই দুষ্কৃতীদলের কাজ। তবে, এই ঘটনায় পাম্পেরও কেউ জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
পুলিশ জানায়, কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কোনা ট্রাক টার্মিনালের উল্টো দিকে উনসানি এলাকায় ইন্ডিয়ান অয়েলের ওই পেট্রোল পাম্পটি। এ দিন ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ দু’টি মোটরবাইকে ছ’জন দুষ্কৃতী সেখানে আসে। মোটরবাইকে তেল ভরার অছিলায় পাম্পের ভিতরে ঢোকে তারা। অভিযোগ, তেল ভরার সময়ে দুই দুষ্কৃতী আচমকাই কোমরে গোঁজা রিভলভার বার করে পাম্পের দুই কর্মীর কপালে ধরে। তার পরে এক কর্মীর পকেট থেকে ৪০ হাজার
টাকা ছিনিয়ে নেয়।
ওই পাম্পের কর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ১০-১১ জন কর্মী ছিলেন। ছয় দুষ্কৃতীর মধ্যে দু’জন পাম্পের দুই কর্মীর মাথায় রিভলভার ধরে রাখলে, বাকিরা অন্য কর্মীদের রিভলভার দেখিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। |
এর পরে তাঁদের থেকে ক্যাশবাক্সের চাবি কেড়ে
নেয়। সমীরণ হালদার, সীতারাম মাইতি ও কাশীনাথ হালদার নামে তিন কর্মী প্রথমে চাবি দিতে অস্বীকার করায় দুষ্কৃতীরা বন্দুকের বাঁট দিয়ে মেরে তাঁদের মাথা ফাটিয়ে দেয়। পরে ওই তিন কর্মীকে অফিসঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। এর পরে ক্যাশবাক্স খুলে নগদ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয়।
ঘটনার পর থেকেই তদন্তের জন্য দফায় দফায় ওই পেট্রোল পাম্পে আসতে থাকেন পুলিশকর্তারা। ১১টা নাগাদ আসে পুলিশ। সেই সময়ে প্রবীর দাস নামে পাম্পেরই এক কর্মী গাড়িতে ছ’লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে জমা দিতে যাচ্ছিলেন।
অভিযোগ, গাড়ি থেকে নামার পরেই এক দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালায়। কিন্তু গুলিটি তাঁর গায়ে লাগেনি। তখনই টাকাভর্তি ব্যাগটি নিয়ে দৌড়ে ব্যাঙ্কে ঢুকে যান প্রবীরবাবু। স্থানীয় লোকেরা তাড়া করলে ওই দুষ্কৃতী রাস্তার ধারে
দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরবাইকে চেপে পালায়। প্রবীরবাবু বলেন, “গাড়ি থেকে নামার পরে দেখি উল্টো দিক থেকে এক যুবক এগিয়ে এল। আমাকে পার করে চলে গিয়ে আচমকাই পিছন থেকে গুলি ছুড়ল। ভাগ্য ভাল গুলিটা লাগেনি।” ঘটনার খবর পেয়েই ওই পেট্রোল পাম্প থেকে ব্যাঙ্কের সামনে ছুটে যায় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোল উদ্ধার হয়েছে।
উনসানির ওই পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার শম্ভুনাথ সাহা বলেন, “দু’মাস আগে পাম্পটির মালিকানা বদল হয়েছে। এখন এক মহিলা পাম্পের মালিক। কর্মীদের কেউ এই ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ হচ্ছে।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পেট্রোল পাম্পেরই কোনও কর্মী এই ঘটনায় ‘টিপারের’ কাজ করেছে। কারণ প্রশ্ন উঠেছে, ভোরে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা ডাকাতির পরে বেলায় ফের এক কর্মী কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে কোন ব্যাঙ্কে জমা দিতে যাচ্ছেন, তা দুষ্কৃতীরা জানল কী ভাবে। পুলিশ পাম্পের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। |