নিতিন গডকড়ী, অরুণ জেটলিরা পাল্টা চাপ দিতেই ভোলবদল ইয়েদুরাপ্পার। কখনও সনিয়া গাঁধীর প্রশস্তি গেয়ে দল ছাড়ার ইঙ্গিত, কখনও বা অনুগামীদের নিয়ে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার হুমকি ক’দিন ধরেই বিজেপি নেতৃত্বকে চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। নেতৃত্ব পাল্টা চাপ দিতেই আপাতত পিছু হঠলেন তিনি। বেঙ্গালুরুতে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন আপাতত তিনি বা তাঁর অনুগামীরা কেউই ইস্তফা দিচ্ছেন না। ছাড়ছেন না দলও। তবে গদি ফিরে পাওয়াই যে তাঁর মূল লক্ষ্য, সেটা মনে করিয়ে দিতে ইয়েদুরাপ্পা আজ যথেচ্ছ বিষোদ্গার করেন রাজ্যের বর্তমান সরকার ও রাজ্য নেতৃত্ব সম্পর্কে।
আক্রমণের প্রথম নিশানা মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া। ইয়েদুরাপ্পার দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর পদে ব্যর্থ হয়েও পদ আঁকড়ে রয়েছেন গৌড়া। অবিলম্বে ইস্তফা দিতে হবে তাঁকে।” গৌড়া তাঁর সঙ্গেও ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন বলে অভিযোগ ইয়েদুরাপ্পার।
দ্বিতীয় নিশানা বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি ঈশ্বরাপ্পা। তৃতীয় জন অনন্ত কুমার। ইয়েদুরাপ্পার মতে, দলের এই নেতাটি লাগাতার লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো শীর্ষ নেতাদের কান বিষিয়ে রাজ্যে তাঁকে হয়রান করার চেষ্টা করেছেন। চাইছেন নিজে মুখ্যমন্ত্রী হতে। |
সাংবাদিক বৈঠকে ইয়েদুরাপ্পা। বেঙ্গালুরুতে। ছবি: পি টি আই |
ইস্তফার হুমকি দিয়েও কেন শুধু ক্ষোভ উগড়েই আজ ক্ষান্ত হলেন ইয়েদুরাপ্পা?
দলের মন বুঝতে কাল রাতে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ নেত্রী শোভাকে পাঠিয়েছিলেন অরুণ জেটলির কাছে। ইয়েদুরাপ্পার বার্তা পৌঁছে দেন তিনি। তা হল, সদানন্দ গৌড়া ও রাজ্য সভাপতি ঈশ্বরাপ্পা বিধায়কদের মুখোমুখি হতে পারছেন না সাহসের অভাবে। জেটলি আশ্বস্ত করেন, “বিধায়কদের বৈঠক ডাকার বিষয়টি দল দেখবে। তবে চাপের রাজনীতি আগে ছাড়তে হবে।” আপাত ভাবে ইয়েদুরাপ্পার ভোল বদল হয় এতেই। আজ বিকেল চারটের সাংবাদিক বৈঠকে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা না করে পিছু হঠেন তিনি।
তবে বিজেপি-র শীর্ষ সূত্রের মতে, ইয়েদুরাপ্পা প্রকাশ্যে ৫০ জনের বেশি বিধায়কের সমর্থনের দাবি করলেও বাস্তবে তিনি দল ছাড়লে দশ জনের বেশি সঙ্গী পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে জন্য গত কালই ইয়েদুরাপ্পাকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়, “দল ছাড়লে ছাড়ুন। আমরা নির্বাচনে চলে যাব। প্রচারে বলব, দুর্নীতিগ্রস্ত ইয়েদুরাপ্পাকে বিজেপি পরিত্যাগ করল।” পাশাপাশি ইয়েদুরাপ্পাকে এ-ও বোঝানো হয়, কংগ্রেস তাঁকে বিজেপিতে ভাঙন ধরানোর জন্য ব্যবহার করে পরে ছুড়ে ফেলে দেবে। আপাতত সিবিআই ঢিলেঢালা ভাবে চললেও ভবিষ্যতে এই কংগ্রেসই তাঁকে জেলে পুরে দেবে। এক বার দল ছাড়লে তাঁর অবস্থাও হবে অমর সিংহের মতো। এক সময় প্রবল পরাক্রম থাকলেও রাজনীতির পরিসরে এখন যাঁকে খুঁজেই পাওয়াই দুষ্কর।
দলের এক শীর্ষ নেতার মতে, ইয়েদুরাপ্পা পরিবারের ‘প্রব্লেম চাইল্ড’। সময় সময় যিনি বিদ্রোহ করে দলের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর পর তাঁর অভিমান ঘুচিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। বিধায়ক দলের বৈঠক ডাকার আশ্বাস দিয়ে আপাতত কিছুটা সময় কিনল দল। কিন্তু আবার কবে বিদ্রোহী হবেন ইয়েদুরাপ্পা, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ইয়েদুরাপ্পা বলে রেখেছেন, “রাজনীতি থেকে সরব না। খুব শীঘ্রই নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।” |