নিউ টাউন, রাজারহাট ও সংলগ্ন এলাকার প্রধান রাস্তাগুলিতে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাকে অত্যাধুনিক করতে শিবপুরের ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি’র (বেসু) বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে উদ্যোগী হয়েছে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারেট। নিউ টাউনের মতো একটি আধুনিক উপনগরীর রাস্তায় দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যেই এই আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে বেসু-র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কয়েক জন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হবে। তাঁরা এই সব রাস্তায় যানবাহনের গতি ও সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করে ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং ট্রাফিকের গতি কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে পরামর্শ দেবেন।” রাজীববাবু জানিয়েছেন, ওই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নিউ টাউন রোড, যশোহর রোড ও ভিআইপি রোডের ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হবে।
গত কয়েক মাসে নিউ টাউন রোড, ভিআইপি রোড ও যশোহর রোডে নানা ধরনের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ হয়েছে। নাগেরবাজার এলাকায় যশোহর রোডে তৈরি হয়েছে উড়ালপুল। ভিআইপি রোডের কেষ্টপুর-বাগুইআটি এলাকায় উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। নিউ টাউন রোডেও নিউ টাউন বাসস্ট্যান্ডের কাছে চালু হয়ে গিয়েছে উড়ালপুল। এ ছাড়াও, নিউ টাউন রোডে ট্রাফিকের গতি বাড়াতে সার্ভিস রোড তৈরি-সহ নানা ধরনের কাজ হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকদের কথায়, রাস্তার গতি বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু ওই সব রাস্তায় সেই প্রথাগত পুরনো সিগন্যাল ব্যবস্থাই রয়ে গিয়েছে। ফলে ওই সব রাস্তায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। পুলিশ কমিশনারেটের মতে, বেসু-র বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হলে শুধু দুর্ঘটনাই কমবে না, ওই সব রাস্তায় গাড়ির গতিও অনেকটা বাড়বে।
ওই রাস্তাগুলির আধুনিকীকরণের কাজে হাত লাগিয়েছে রাজারহাট পুরসভার পূর্ত দফতরও। ওই দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মনোদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভিআইপি রোডে যে উড়ালপুল হচ্ছে, সেটি দমদম পার্ক এলাকা থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে তেঘরিয়ার কাছে। উড়ালপুল চালু হওয়ার পরে যানজট এড়াতে ওই এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থার বিষয়ে বেসু-র বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে।” পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, যশোহর রোড, ভিআইপি রোড, নিউ টাউন রোডের বেশ কিছু সংযোগস্থলে ভুল জায়গায় ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তার কাট-আউটও রয়েছে ভুল জায়গায়। ফলে গাড়ি ঘোরানোর সময়েও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। গাড়ির গতিও কমে যায়। এই ভুলগুলো সংশোধন করে নেওয়া হবে। সেমি-অটো সিগন্যালগুলো পাল্টে অটো সিগন্যাল করার কথাও ভাবা হচ্ছে। এমনকী, ভিআইপি রোড বা নিউ টাউন রোডের সংযোগস্থলে অনেক জায়গাতেই ‘স্টপ লাইন’ নেই।
নতুন ব্যবস্থার রূপায়ণের আগে ওই রাস্তাগুলিতে গাড়ির গতি ও সংখ্যা দেখে নেওয়ার জন্য আধুনিক রেডার মিটারের সাহায্যে একটি সমীক্ষাও চালানো হবে।
বেসু-র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুদীপকুমার রায় বলেন, “রাস্তায় সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্য ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং-ও জানা দরকার। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে ওই রাস্তাগুলিতে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টিকে কার্যকর করার প্রস্তাব পেয়েছি। এটি কার্যকর হলে ট্রাফিকের গতি বাড়ার সঙ্গে দুর্ঘটনার প্রবণতাও অনেকটাই কমবে।” |