সেই ঐতিহ্য আজও চলছে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে থাকছে শহর। রীতিমতো যুদ্ধ করে নলহাটি শহরের নেতাজি রোডের মুখ থেকে রেলগেট পর্যন্ত, আবার পোস্টঅফিস মোড় থেকে মৌচাক মোড় পর্যন্ত যানজট ঠেলতে ঠেলতে যাতায়াত করতে হয় পুরবসীদের।
যানজটের জন্য সিংহভাগ বাসিন্দা রাস্তার উপরে সব্জি বাজার, ফলের দোকান এবং বেদখল হয়ে যাওয়া ফুটপাতকে দায়ী করেছেন। রাস্তার উপরে দেদার বিকোচ্ছে সব রকমের সব্জি, ফুল, হাতপাখা থেকে শুরু করে গৃহস্থালীর নানা সামগ্রী। নেতাজি মোড় থেকে মৌচাক মোড়, পোস্টঅফিস মোড় থেকে মৌচাক মোড়, মৌচাক মোড় থেকে রেলগেট। সাইকেল, মোটরবাইক, যন্ত্রচালিক রিকশা, গরুরগাড়ি, চার চাকা-সব দাঁড়িয়ে রয়েছে। দেখেশুনে পা ফেলতে হয়। না হলে পসরায় পা পড়লে বচসা থেকে মারামারি লেগে যাবে। এটাই ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মূল সমস্যা। এলাকার বাসিন্দা গৌতম দত্ত, ইন্দ্রনারায়ণ দত্ত, কৃষ্ণকুমার অটলদের ক্ষোভ, “সব্জি হাটের জন্য এলাকায় জায়গা আছে। অথচ হাট মালিকদের পরিকল্পনার অভাবে যাতায়াতের রাস্তায় বাজার বসছে।” তাঁদের অভিযোগ, “হাটমালিকদের পাশাপাশি এলাকার দোকানদারদের সঙ্গে অলিখিত একটা আর্থিক লেনদেন আছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।” তাঁদের আরও অভিযোগ, লাভের আশায় যে সব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা রাস্তায় বসেন তাঁদের কাছ থেকে তোলা আদায় করেন হাটমালিকেরা। |
এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানালেন, ১০ বছর বয়স থেকে রাস্তার ধারে সব্জি নিয়ে বসছেন। তাঁর অভিযোগ, “বাড়িওয়ালা বা দোকানদারদের মাসে ৩০০ টাকা করে দিতে হয়। আর হাট মালিকদের দৈনিক ৭ টাকা বা ১০ টাকা করে দিতে হয়।” বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পাইকারি বা খুচরো বাজারে সব্জি বিক্রি করার জন্য রাত ৩টে থেকে গরুরগাড়ি, যন্ত্রচালিত রিকশা, ট্রাক রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। তখন থেকেই তোলাবাজি শুরু হয়ে যায়। এই সব ঠেলে স্টেশনে ট্রেন ধরতে সময় লেগে যায়। এই সব দেখতে দেখতে সব্জি বাজারে এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা। তিনি দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। তিনি বললেন, “ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য দৈনিক ২-৩ টাকা, মাঝারিদের জন্য ৫ টাকা, আর আড়তদারদের কাছ থেকে ৭ টাকা নেওয়া হয়।” অভিযোগ, ওই সব টাকা হাটমালিক তথা নলহাটি পুরসভার প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী প্রকাশ প্রসাদ বা তাঁদের পরিবারকে দেওয়া হয়। যদিও প্রকাশবাবুর দাবি, “হাটের জন্য ৮০ শতক জায়গা আছে। রাস্তার উপর থেকে তাদের তুলে দিলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একপ্রকার যোগসাজোসে নতুন কেউ ব্যবসা করতে রাস্তায় পসরা সাজিয়ে বসে পড়েন। পুরপ্রধান সর্বদল বৈঠক করেও এখনও তেমন ব্যবস্থা নিতে পারেননি।”
বিদায়ী পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা বলেন, “রেল দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, সব্জি বাজার রাস্তার উপর থেকে সরানো হবে।” তাঁর দাবি, “যানজট ও তোলা আদায়ের জন্য দায়ী প্রকাশ প্রসাদের পরিবার।” প্রকাশবাবু অবশ্য বলেন, “হাট থেকে টাকা নিলেও ক্ষুদ্রব্যবসায়ীর কাছ থেকে আমরা টাকা নিই না।”
যানজটের পাশাপাশি সাফাই, পানীয় জল, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা নিয়েও রাজনৈতিক চাপানউতোর তৈরি হয়েছে এই ওয়ার্ডে। তৃণমূল প্রার্থী মধু ভকত বলেন, “ঐতিহ্যবাহী রাজাপুকুর নোংরায় ভর্তি, মালপাড়ায় জঞ্জাল জমে আছে। চালবাজারের নিকাশি নালা জঞ্জাল ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” এলাকার কাউন্সিলর আভা প্রসাদের আশ্বাস বলেন, “রাজাপুকুর খুব শীঘ্রই সংস্কার করা হবে এবং মালপাড়ায় জঞ্জাল সরিয়ে দেওয়া হবে।”
এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, রাজনৈতিক এই চাপান-উতোরের মধ্যে তাঁদের মূল সমস্যা মিটছে না। ঐতিহ্য বজায় রেখে আজও সেই সব সমস্যা টিকে রয়েছে! |
নজরে নলহাটি |
ওয়ার্ড ৫ |
• রাস্তায় সব্জি বাজার। যানজটে নাকাল মানুষ।
• সংস্কারের অভাবে রাজপুকুর থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
• কিছু কিছু এলাকায় নিকাশি ও পানীয় জলের সমস্যা মেটেনি। |
এলাকার লোকেরা কাউন্সিলরের মুখ
খুবই কম দেখেছেন। রাজপুকুরপাড়ের সৌন্দর্যায়ন
হয়নি। এলাকার উন্নয়নে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
মধু ভকত, বিরোধী প্রার্থী, তৃণমূল |
রাজাপুকুর পাড়া, বাগানপাড়া, পঞ্চায়েত পাড়া,
চালবাজারে ঢালাই রাস্তা হয়েছে। নিজেদের
উদ্যোগে নলকূপ বসানো, পথবাতি সারানো হয়েছে।
আভা প্রসাদ, কংগ্রেস কাউন্সিলর |
|