নীলোৎপল রায়চৌধুরী • আসানসোল |
ইসিএল ‘ন্যায্য’ আবাসন ভাতা দিচ্ছে না বলে গত দেড় দশক ধরেই অভিযোগ তুলে আসছেন শ্রমিকেরা। কোর্ট-কাছারি সত্ত্বেও আজও তার সুরাহা হল না।
সমস্যা ছিল আগেই। ১৯৯৪ সালে জনসংখ্যার ভিত্তিতে থেকে ‘বি-টু’ শহরের তকমা পেয়েছিল আসানসোল। ১৯৯৬ সালে তার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আসানসোল পুর এলাকায় বসবাসকারী ইসিএল শ্রমিকদের ১৫ শতাংশ আবাসন ভাতা পাওয়ার কথা ছিল। অথচ, তা না মেনে কর্মীদের ১০ শতাংশ আবাসন ভাতাই দিয়ে আসছিল ইসিএল। ২০০১ সালে কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড ইসিএলকে দু’টি নির্দেশনামা পাঠায়। তাতে দেখা যায়, পুর এলাকায় বসবাসকারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আসানসোলকে ‘সি’ গোত্রের শহর দেখানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের প্রাপ্য ভাতার পরিমাণ ১০ শতাংশই রয়েছে। আধিকারিক স্তরের কর্মীদের জন্য পাঠানো অপর একটি নির্দেশনামায় আবার আসানসোলকে ‘এ’ গোত্রের শহর দেখিয়ে তাঁদের প্রাপ্য ভাতা ২৫ শতাংশ হিসেবে ধার্য করা হয়েছে।
এ দিকে আবার, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আসানসোলকে ‘ওয়াই’ গোত্রের শহর বলে চিহ্নিত করা হয়। সেই অনুযায়ী, কর্মীদের আবাসন ভাতা হওয়ার কথা ২০ শতাংশ। কিন্তু শ্রমিকরা এখনও সেই আগের মতোই ১০ শতাংশ ভাতা পেয়ে চলেছেন। ওই বছরই ইসিএল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, আধিকারিক স্তরের কর্মীদেরও ১০ শতাংশ আবাসন ভাতা দেওয়া হবে। কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়নের নরসামুদা কোলিয়ারি শাখার সভাপতি সঞ্জয় মাজির অভিযোগ, ২০০৯ সালেও কর্তৃপক্ষের আচরণে বৈষম্য রয়েছে। তিনি বলেন, “অধিকর্তাদের ১০ শতাংশ আবাসন ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও অন্য ভাতা দিয়ে ওই ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। আসানসোলে কোল ইন্ডিয়ার সিএমপিডিআই-র কর্মীরা ২০ শতাংশ ভাতা পাচ্ছেন।”
১৯৯৬ সালের রাষ্ট্রপতির নোটিফিকেশন অনুযায়ী আসানসোল ‘বি-টু’ শহরের তকমা পাওয়ার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শ্রমিকরা যে ৫ শতাংশ ‘প্রাপ্য ভাতা’ পাননি, তা আদায়ের জন্য ২০০০ সাল থেকে আন্দোলনে নামে কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়ন। ২০০৯ থেকে ৮টি শ্রমিক সংগঠন বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করে। অনশনের পথেও হাঁটে তাঁরা। মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত ইসিএলকে এক মাসের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তা মান্য করা হয়নি। শ্রমিকরা ফের আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তখনই সহকারী শ্রম কমিশনার এমকে ধুরুয়া বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। কিন্তু কোনও সমাধান সূত্র না মেলায় ওই বছর ডিসেম্বরে ‘নিষ্পত্তি ব্যর্থ’ জানিয়ে তিনি বিষয়টিকে দিল্লি শ্রম ভবনে পাঠান। সেখান থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাইব্যুনালে যায় বিষয়টি। কিন্তু গত দেড় বছর ওই ট্রাইবুনালের আসানসোল কোর্টে কোনও বিচারক না থাকায় গত ২ ফেব্রুয়ারি মামলা শুরু হয়। যদিও শুনানির দ্বিতীয় দিন থেকে ইসিএলের তরফে কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
ইতিমধ্যে ২০০৯ সালে ‘ওয়াই’ গোত্রের শহরের তকমা পাওয়ার পর থেকে শ্রমিকদের প্রাপ্যের ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১০ শতাংশ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বকেয়া আদায়ের বিষয়টি যখন ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়, তখনই ওই ৮টি সংগঠনের পক্ষে সঞ্জয় মাজি, হেমকান্ত দাস, বিজয় মণ্ডল, সুবোধ মণ্ডলেরা বলেছিলেন, “২০০৮ সাল পর্যন্ত বকেয়া ৫ শতাংশ ভাতার ক্ষেত্রে আদালতের রায়ই মেনে নেব। কিন্তু নতুন করে জারি হওয়া ২০ শতাংশ ভাতা আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করব।” তাঁরা শ্রম কমিশনারকে হস্তক্ষেপ না করার অনুরোধ জানান। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আদালতে চলে যাবে। তার চেয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করার পক্ষে ছিলেন তাঁরা। কিন্তু সহকারী শ্রম কমিশনার হস্তক্ষেপ করেন। বারবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরেও সমাধান সূত্র না মেলায় গত ২৯ মার্চ এই বিষয়টিকেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাইবুনালে পাঠায় শ্রম দফতর।
এই জট কবে খুলবে, ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা জানেন না। |