|
|
|
|
বহু লক্ষ নয়ছয়ে অভিযুক্ত এ বার রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ |
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
কর্মীর অস্তিত্বই নেই, অথচ তাঁদের মাইনে দিতে খরচ হল ৫০ লক্ষ টাকার বেশি! গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই, অথচ সেই ভাড়া গাড়ির জন্য মেটানো হল ১০ লক্ষ টাকার বেশি!
যে সংস্থা কম টাকায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কার্ড ও শংসাপত্র তৈরির বরাত পেয়েছে, তাদের বাতিল করে বরাত দেওয়া হল বেশি টাকা নেবে, এমন এক সংস্থাকে। এর জন্য বাড়তি সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বেশি খরচ হল সরকারের!
এ ভাবেই লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সল্টলেক স্বাস্থ্যভবনে, রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ (স্টেট ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিল বা এসবিটিসি)-এর সদর দফতরে। ২০১০-’১১ সালে পর্ষদের কাজকর্ম নিয়ে স্ট্যাটিউটরি অডিট করার পরে দিন কয়েক আগেই রিপোর্ট জমা পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। এর পরেই আলাদা করে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা।
কয়েক মাস আগেই রাজ্য এড্স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থায় (স্যাক্স) কোটি কোটি টাকা আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। তার জেরেই সরে যেতে হয় স্যাক্সের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর রাকেশকুমার বৎসকে। ঘটনাচক্রে ২০১০-’১১ সালে তিনিই রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের অধিকর্তার পদে ছিলেন। এ বার সেই পর্ষদেও টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। বার বার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি তখন পর্ষদের অ্যাকাউন্টস-এর দায়িত্বে থাকা, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত আর বি সিংহের সঙ্গে।
২০১০-’১১ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, “মন্ত্রীর পক্ষে তো সব ফাইল, কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ পড়া সম্ভব নয়। তাঁকে পদস্থ কর্তাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করেই চালাতে হয়। সেখানে যদি কেউ কোনও অনিয়ম করেন, তবে আইন তার নিজের পথেই চলবে।” অডিট রিপোর্টেই দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কের ‘ব্লাড টেকনিশিয়ান’দের বেতন বাবদ ২০১১ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা ও ওই বছরেরই মার্চ মাসে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের তহবিল থেকে তোলা হয়। তৎকালীন পর্ষদ-কর্তারা তাতে সইও করেছিলেন। কিন্তু যাঁদের নামে মাইনে তোলা হয়েছে, আসলে সেই টেকনিশিয়ানদের অস্তিত্বই ছিল না। রক্তদাতা ও রক্তদান শিবিরের আয়োজকদের শংসাপত্র তৈরির জন্য ২০১০ সালের মে মাসে দরপত্র ডেকে বরাত দেওয়া হয় একটি সংস্থাকে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, অকিঞ্চিৎকর কারণ দেখিয়ে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেই বরাত বাতিল করে অন্য এক সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়। প্রথম সংস্থার কাছ থেকে জিনিস কিনলে খরচ হত ৫ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু তা না কিনে দ্বিতীয় সংস্থার থেকে কেনায় খরচ পড়ে প্রায় ৮ লক্ষ ৯০ হাজার।
ওই বছরই প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ডোনার্স কার্ড ও সার্টিফিকেট কেনার ব্যাপারে পর্ষদ কোনও সংবাদপত্রে দরপত্র দেয়নি। শুধু নিজেদের ওয়েবসাইট আর অফিসের নোটিসবোর্ডে তা টাঙিয়েছিল। তদন্তকারীরা জানান, এটি সম্পূর্ণ আইনবিরুদ্ধ। ওই সময়ে ১৬ লক্ষ টাকা দিয়ে ৯৬ হাজার এইচআইভি র্যাপিড টেস্টিং কিট কেনা হয়, যেগুলি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় এক বছরের মধ্যে ছিল। রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের কর্তারাই পরে স্বীকার করেছেন, এত অল্প সময়ে এত কিট ব্যবহার করা অসম্ভব। ফলে ধরে নেওয়া যায়, অনেক কিট নষ্ট হয়েছিল। |
|
|
|
|
|