পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে ইন্দ্রপতন হল রবিবার। রোগভোগের পরে প্রয়াত হলেন প্রবীণ সিপিআই নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নন্দগোপাল ভট্টাচার্য। পাঁচের দশকে বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলিতে যাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়েই থেকে যাবে।
মন্ত্রী থাকাকালীনই কয়েক বছর আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নন্দবাবু। তার পর থেকেই সক্রিয় রাজনীতির আসর থেকে কিছুটা আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী থেকে অব্যাহতি নেন, রাজ্যে কার্যনির্বাহী সমিতি থেকেও সরে দাঁড়ান শারীরিক কারণেই। বেসরকারি হাসপাতালে এ দিন সকালে ৭৭ বছরের নন্দবাবুর মৃত্যু প্রায় নিঃশব্দেই সেই অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির আমল থেকে এ রাজ্যের বামপন্থী আন্দোলনের একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটাল। নন্দবাবুর স্ত্রী, কন্যা এবং নাতি রয়েছেন।
অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির আমলে নন্দবাবু যখন বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশনের (বিপিএসএফ) সাধারণ সম্পাদক হন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেই সময় ওই সংগঠনের সদস্য হিসাবে নাম লিখিয়েছিলেন। রাজনীতির গতি এমনই যে, সেই বুদ্ধবাবুর মুখ্যমন্ত্রিত্বেই মহাকরণে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘অপমানিত’ হওয়ার ক্ষোভ গোপন রাখতে পারেননি নন্দবাবু! সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ঘটনার সময় দুই শরিক মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী এবং নন্দবাবু মহাকরণে বসে নিয়মিতই রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। ওই পর্বেই সিপিআই, আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক তিন শরিকের আলাদা বসে সিপিএমের উপরে চাপ সৃষ্টির রাজনীতিতে বিশেষ সক্রিয় ছিলেন দাঁতনের বিধায়ক নন্দবাবুই। ছাত্র আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, গোয়া মুক্তির আন্দোলনে নন্দবাবুর ভূমিকার নিরিখে বাম জমানার শেষ দিকে তাঁর প্রতিবাদ মোটেও বিস্ময়কর নয়। বরিশালের আদি বাসিন্দা নন্দবাবু ছিলেন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য পরিষদের কনিষ্ঠতম সদস্যদের অন্যতম। কলকাতার কলেজে বেতন বৃদ্ধি-বিরোধী আন্দোলনে পাঁচের দশকে জেলে গিয়েছেন। আবার আমৃত্যু দলীয় সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ কৃষক সভারও সভাপতি থেকেছেন। মাঝে সিপিআই রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনের সৈনিক নন্দবাবু বিদায় নিলেন মার্কিন বিদেশ সচিবের কলকাতায় পা দেওয়ার দিনই মৃত্যুতে এই সমাপতনও নজর এড়ানোর নয়! |