ইনফোসিস-প্রশ্নে তুলোধোনা
এই সরকারের ‘বিচার’ করুন, সুর চড়ালেন বুদ্ধ
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ঠিক প্রথম বর্ষপূর্তির মুখে দাঁড়িয়ে সুর চড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন তাঁর পূর্বসূরি। মানুষের কাছে আবেদন করলেন ‘বিচার’ শুরু করার। বললেন, একটা সরকার ৩৪ বছরেও সব কাজ করা যায়নি বলে মেনে নিত। ভুলভ্রান্তি মেনে নিয়েই আরও এগোনোর কথা বলত। তাদের সরিয়ে রাজ্যের মানুষ যে সরকারকে এনেছেন, তারা এক বছর যেতে না-যেতে নিজেরাই বলছে, ১০০ ভাগ কাজ হয়ে গিয়েছে! ক্ষমতাচ্যুত পূর্বসূরি তাই ‘বিচার’ চাইছেন!
বিচার চাইতে গিয়ে টেনে আনছেন রাজ্যে মমতা-জমানায় ইনফোসিসকে নিয়ে জটিলতার প্রসঙ্গ। তুলে আনছেন ‘টানাটানির সংসারে’ খরচে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন। কটাক্ষ করছেন নিজেদের খরচে লাগাম না-দিয়ে ‘দিল্লির টাকার থলি’র পিছনে রাজ্য সরকারের ছুটে বেড়ানোকে!
পার্টি কংগ্রেসের পরে রবিবারই ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের আয়োজনে খড়দহে এক জনসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “অনেকেই বলছেন, এই সরকারকে আরও সময় দিতে হবে। আমরাও তা-ই বলেছি। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই সমস্যাগুলো তো দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে আমার আবেদন, আপনারা বিচার করুন। ৩৪ বছরে কি কিছুই হয়নি? হ্যাঁ, আরও কাজ দরকার ছিল, আরও এগোনো উচিত ছিল। আর এখন একটা সরকার এসে বলছে, এক বছরে ১০০% কাজ হয়ে গিয়েছে!” জনতার কাছে বুদ্ধবাবুর আর্জি, “মানুষকে ভাবতে হবে, তাঁরা কী চেয়েছিলেন? আর এখন কী হচ্ছে? মানুষই শেষ ভরসা!”
রাজ্যে সরকার বদলের পরে শিল্পায়নে যে গতি আসেনি, সেই অভিযোগে ফের সরব হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বিনিয়োগের অঙ্ক হিসেবে রাজ্য সরকার এখন যা দাবি করছে, তার সিংহভাগই বাম আমলের সে কথাও ফের বলেছেন। আর শিল্পের শ্লথতার কথা বলতে গিয়েই ইনফোসিস-প্রসঙ্গ এনে তুলোধোনা করেছেন মমতার সরকারের নীতিকে। বুদ্ধবাবুর বক্তব্য, “নারায়ণমূর্তিকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলাম। ইনফোসিস কলকাতায় আসবে বলেছিল। জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। ওরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) মর্যাদা চেয়েছিল। কিন্তু এখন সরকার বলছে, এসইজেড দিতে পারব না! তা হলে ওরা থাকবে কেন? জমি তো ওরা পেয়েইছিল। ধমক দিয়ে সবাইকে কাজ করানো যায় নাকি?”
একই মঞ্চে খড়দহের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেছেন, “এক বছরে চাইলে অনেক কাজ করা যায়। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে ১৯৭৭ থেকে ’৭৮ পর্যন্ত কোন কোন দিকে নজর দিয়েছিল, তুলনা করে দেখলেই বোঝা যাবে।” আর ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদারের দাবি, “যে কোনও কথায় ৩৪ বছর দেখানোটা এ বার বন্ধ হোক! ৩৪ বছরে সব চেয়ে বড় সাফল্য ছিল নারীর নিরাপত্তা। আর এখন কী অবস্থা হয়েছে?”
বস্তুত, নতুন সরকারের ‘সময়’ যে শেষ হয়ে যায়নি, তা এ দিনও ফের বলেছেন বুদ্ধবাবু। কিন্তু সময়ের মধ্যে থেকেও সরকারের কাজের ‘বিচার’ যে তাঁরা শুরু করতে চাইছেন, বুদ্ধবাবুর সুরে সেই পরিবর্তনের ইঙ্গিতও এ দিন ধরা পড়েছে। বুদ্ধবাবুর কথায়, “পাঁচ বছর পরে রাজ্যের কী অবস্থা হবে, জানি না। কিন্তু আপনারা (মানুষ) বিচার করুন। একটা সরকার যদি এক বছরের মধ্যেই বলে সব কাজ করে ফেলেছি, তা হলে তো বলতে হয় কী কাজ করতে হবে, তা-ই তোমরা জানো না!” মুখ্যমন্ত্রী ১০০% কাজ করে ফেলার যে ঘোষণা করেছেন, তার সূত্র ধরেই রাজ্যের জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সহায়তা চাওয়ার বিষয়টিকে কটাক্ষ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “ন্যায্য দাবি আদায়ে আমরা সমর্থন করব, আগেই বলেছি। কিন্তু যেটা হয় না, সেটা চাওয়ার মানে কি? মনমোহন-সরকার দুর্বল হয়ে গিয়েছে বলে সবাই চাইছে চাপ দিতে! দিল্লি কি টাকার থলে নিয়ে বসে আছে? চাপ দিলে হবে কি?”
বুদ্ধবাবুর প্রশ্ন, “তুমি তো বলছো ১০০ ভাগ কাজ হয়ে গিয়েছে! তা হলে আর টাকা চাইছো কীসের জন্য?” রাজ্য সরকারের অগ্রাধিকারের ভিত্তি নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, “মনে হল, হঠাৎ সাদা-নীল রং করা শুরু হল। চলল কিছু দিন! এর খরচা কোথা থেকে আসছে? পরিবহণ শ্রমিকের মাইনে না-হলেই বলছো, টাকা নেই! এর মধ্যেই মন্ত্রীদের মাইনে বেড়ে গেল। আমাদেরও টানাটানির সংসার ছিল। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারী-শ্রমিকদের মাইনেতে হাতটান করিনি কোনও দিন।”
বুদ্ধবাবুর উপস্থিতিতেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে ‘ভুলে’র প্রসঙ্গ তুলেছিলেন অসীমবাবু। বুদ্ধবাবুও সেই ‘ভুল’ মানার পাশাপাশিই দলের কর্মীদের বার্তা দিয়েছেন, সব কিছুতে ‘হাত দেওয়া’, ‘অত্যাচার’, ‘মাতব্বরি’ চলবে না। প্রত্যাশিত ভাবেই, তাঁর সেই বার্তা শুনতে এ দিনের সভায় ছিলেন না রাজ্য কমিটি থেকে বাদ-যাওয়া দমদমের প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ নন্দী!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.