তেজারতি কারবারে সুদের ঝামেলার জেরেই পুরুলিয়া শহরের নীলকুঠিডাঙ্গা এলাকার স্বর্ণব্যবসায়ী রামশঙ্কর কোঠারি ও তাঁর স্ত্রী সুশীলা কোঠারি খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছে পুলিশ। এই জোড়া খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ শনিবার পুরুলিয়া শহরেরই এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে।
জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ধৃত বিজয় অগ্রবালকোঠারি দম্পতির পরিচিত। জেরার মুখে বিজয় পুলিশের কাছে খুন করার কথা কবুল করেছে। তবে তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।” নিহত রামশঙ্করবাবুর সুদের কারবারের সম্পর্ক ছিল বিজয়ের বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ সুপার জানান, আদালতে তুলে বিজয়কে সাত দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে আরও জেরা করা হচ্ছে।
গত ২৮ এপ্রিল রাতে এই দম্পতি নিজেদের বাড়িতেই খুন হন। শহরের বাইরে থেকে রামশঙ্করবাবুর ছেলে বারবার চেষ্টা করেও বাবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছেন না, ছেলের বন্ধুর কাছ থেকে এই খবর পেয়ে পর দিন সকালে পুলিশ বাড়ি থেকে ওই দম্পতির ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে। দু’জনেরই গলার নলি কাটা চিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আততায়ীরা বারবার কুপিয়েছিল ওই দম্পতিকে। |
শহরের বুকে জোড়া খুনের ঘটনা অস্বস্তিতে ফেলে পুলিশকে। শহরের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে। ঘটনার কিনারা করতে পুরুলিয়া সদর থানার ওসি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পুলিশের ডিএসপি(শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ পদস্থ পুলিশ কর্তাদের নিয়ে একটি টিম গড়ে তদন্ত শুরু হয়। পুলিশের দাবি, তদন্তেই উঠে আসে রামশঙ্করবাবু সোনা-রুপোর ব্যবসার পাশাপাশি তেজারতি কারবারও করতেন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ধৃত বিজয় বেশ কিছু পরিমাণ সোনা বন্ধক দিয়ে রামশঙ্করবাবুর কাছ থেকে ৩০ লক্ষেরও বেশি টাকা সুদে ধার নিয়েছিলেন। ইদানীং সুদের টাকা-পয়সা নিয়েই দু’জনের মধ্যে ঝামেলা বাধে। বিজয় সুদের কিছু টাকা দিতেও পারেননি।
তদন্তে পুলিশ এ-ও জেনেছে, কোঠারি দম্পতি এলাকায় রক্ষণশীল হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। পুলিশ সুপার বলেন, “নিজেদের বাড়িতে ওই দু’জনই থাকতেন। কেউ বাড়িতে এলে দরজার আই-হোলে দেখে তার পরেই দরজা খুলতেন। বিজয় জেরার মুখে জানিয়েছে, সুদের টাকার বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত কথাবার্তা বলতেই ঘটনার দিন সে রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ওই বাড়িতে যায়। ঠিক ছিল, পুরো টাকা মিটিয়ে দিয়ে বিজয় তাঁর সোনা নিয়ে চলে যাবে। সেই মোতাবেক বিজয় বাড়িতে এলে দম্পতি দরজাও খুলে দেন।”
পুলিশের সন্দেহ, ওই দিন বিজয়ের সঙ্গে এক বা একাধিক সঙ্গী ছিল। তবে, তাদের পরিচয় পুলিশ জানায়নি। তাদের কোঠারি দম্পতি চা, ভুজিয়া দিয়ে আপ্যায়নও করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সে সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণও পেয়েছে। পুলিশ সুপার জানান, এর পর পরিকল্পনা মাফিকই ওই দম্পতিকে খুন করা হয়। ঘটনার পরের দিন বিজয় পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও শ্মশানে যাননি। এই বিষয়টি পুলিশের সন্দেহের মধ্যে ছিল। পুলিশ সুপার বলেন, “বিজয়কে আরও জেরা করা হবে। তাতে আরও নতুন তথ্য ও সূত্র মিলবে বলে আমাদের ধারণা।” |