তিন বার উদ্বোধন, তবু বাস ঢোকে না স্ট্যান্ডে
ক বার নয়, তিন বার। বাম ও তৃণমূলের আমল মিলিয়ে ঘটা করে তিন-তিন বার পূর্ব মেদিনীপুরের গেঁওখালি বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধন হয়েছে। প্রথমবার উদ্বোধন হয়েছিল সেই ২০০৩ সালে। কিন্তু ৯ বছর কেটে গেলেও সংযোগকারী রাস্তা পিচের হয়নি। নেই আনুষঙ্গিক পরিকাঠামোও। ফলে তিন বার উদ্বোধনের পরেও এই বাসস্ট্যান্ডে বাস ঢোকে না। পরিকাঠামো তৈরি করার চেয়ে বাসস্ট্যান্ডের স্টল বিলিতেই দু’আমলের পঞ্চায়েত-পঞ্চায়েত সমিতির আগ্রহটা বেশি। সম্প্রতি এই স্টল বিলি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক আকচাআকচি। বাস আগের মতোই দাঁড়াচ্ছে রাস্তায়!
মহিষাদলের গেঁওখালির বাসিন্দারা মূলত সড়কপথেই যাতায়াত করেন। কলকাতা থেকে নুরপুর নদীঘাট পার হয়ে এই গেঁওখালি দিয়েই বাইরে থেকে আসা লোকজনও প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সড়কপথে গন্তব্যে পৌঁছন। গেঁওখালি থেকে দিঘা, মেচেদা, হলদিয়া টাউনশিপ, তমলুক-সহ একাধিক রুটে ৩৬টি বাস চলাচল করে মহিষাদল-গেঁওখালি রাস্তায়। এলাকায় স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড না-থাকায় গেঁওখালি বাজারের কাছেই রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকে বাসগুলি। ফলে যানজট হয় নিত্য। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যাত্রীরাও খোলা আকাশের নীচেই বাসের জন্য অপেক্ষা করেন। বহু দিন থেকেই একটি স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড তৈরির দাবি ছিল এলাকায়।
ছবি: আরিফ ইকবাল খান।
সেই দাবি মেনেই ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা নেয় বাম পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি। সেচ দফতরের খালের পাশে প্রায় ৫ একর জায়গায় তৈরি করা হয় বাসস্ট্যান্ড। ওই বছর ২ এপ্রিল জেলা পরিষদের তদানীন্তন কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ নিশিকান্ত ধারা উদ্বোধন করেন নতুন বাসস্ট্যান্ডটির। কিন্তু মূল রাস্তার সঙ্গে সংযোগকারী পিচের রাস্তা, পথবাতি-সহ পরিকাঠামো গড়ে না-ওঠায় বাস আসত না ওই স্ট্যান্ডে। ফের ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাম-নিয়ন্ত্রিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের তৎকালীন সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহি বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধন করেন। কিন্তু তখনও সংযোগকারী রাস্তা পিচের হয়নি। আলোর বন্দোবস্তও হয়নি। যথারীতি বাসও আসেনি নতুন বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ডের পরিকাঠামোর কাজ সম্পূর্ণ না করে বরং স্টল-নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাম-পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি। ঠিক হয়, তারা যৌথ ভাবে ৩০টি স্টল বানাবে (যদিও ২৩টি নির্মাণ হয়েছে)। ঠিক হয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতির ১৫টি স্টলের প্রতিটি এককালীন ৩০ হাজার টাকা ও মাসে ৩০০ টাকার ভাড়ায় বিলি করা হবে। আর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাকি স্টলগুলি এককালীন ১০ হাজার টাকা ও মাসে ১৫০ টাকার বিনিময়ে দেওয়া হবে।
স্টল-বিলি নিয়ে জটিলতা চলছিলই। তার মধ্যেই ২০০৮-এ ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতে পালাবদল হয়। ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ২০১১-র বিধানসভা ভোটে রাজ্য জুড়েই ঘটে যায় পরিবর্তন। বিধানসভা ভোটের পরেই পরিকাঠামোর এতটুকু উন্নতি না করেই সেই পুরনো বাসস্ট্যান্ডের ফের ‘লোক ভোলানো’ উদ্বোধন হয় গত ৮ অগস্ট। এ বার উদ্বোধন করেন তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুভ্রা মিশ্র। কিন্তু রাস্তা-আলো না থাকায় বাস আসে না এখনও। বিরক্ত এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা অমিত অধিকারীর কথায়, “একটাও যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই। যেটুকু ছাউনি আছে তাতে গরু-ছাগলের বিচরণ। আমরা চাই উদ্বোধনের চমক বন্ধ করে অবিলম্বে বাসস্ট্যান্ড চালু হোক।”
এ দিকে, বাস না-এলেও সম্প্রতি স্টল বিলি নিয়ে আকচা-আকচি শুরু হয়েছে সিপিএম-তৃণমূলে। বিরোধী সিপিএমের অভিযোগ, এখন যেখানে বাস দাঁড়ায় সেখানের দোকানদারদের অগ্রাধিকার না দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি চড়া দামে স্টল বিলি করছে। সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান শ্যাম ভুঁইয়ার অভিযোগ, “ওই দোকানদারদের স্টল না দিয়ে কন্ট্রাক্টরদের স্টল বিলি করা হচ্ছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি স্টলের ভাড়া বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা ও মাসে ২০০ টাকা করা হয়েছে।” যদিও বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান কৃষ্ণারানি সামন্ত, পরিকাঠামোগত সমস্যা ছাড়া অন্য অসুবিধা নেই বলেই দাবি করেছেন।
কিন্তু রাস্তা-আলোর ব্যবস্থা না করেই ফের উদ্বোধন করা হল কেন? পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুভ্রা মিশ্রের বক্তব্য, “আমরা বাস-মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা নেই জেনেই উদ্বোধন করেছিলাম। এখন বাসমালিকরা আবার পিচের রাস্তার দাবি করছেন।” যদিও গেঁওখালি বাস-মালিক সংগঠনের সম্পাদক শিবপ্রসাদ বেরার অভিযোগ, “পিচের রাস্তার দাবি আমরা সব সময়েই জানিয়ে এসেছি। বাসস্ট্যান্ডে বাস ঘোরানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে বলে জানিয়েছি পঞ্চায়েত সমিতিকে। তারও সমাধান হয়নি।” শুভ্রাদেবী এই সমস্ত সমস্যার কথা জানা নেই দাবি করলেও তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “আমরা সমস্যাগুলো জানি। এই নিয়ে সম্প্রতি ভাবনা-চিন্তাও শুরু করেছি। দেখেও এসেছি। আশা করছি সমস্যার সমাধান শীঘ্রই হবে।”
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের হয়তো উদ্বোধন হবে গেঁওখালি বাসস্ট্যান্ডের। কিন্তু বাস আসার মতো পরিকাঠামো তখনও গড়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে সংশয়েই এলাকাবাসী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.