“যেখানেই যাই আমি মোহনবাগানের”
ভিমান নয়, মোহনবাগান থেকে ‘আক্ষেপ’ সঙ্গী করেই বিদায় নিলেন হোসে রামিরেজ ব্যারেটো।
“এ বছর একজন ভাল ফিজিক্যাল ট্রেনার সঙ্গে পেলে আরও অন্তত দু’তিন বছর মোহনবাগান জার্সি পরে খেলতে পারতাম। কিন্তু চোট-আঘাত আমাকে সরে যেতে বাধ্য করল,” বলার সময় মাথাটা সামান্য নিচু হল সবুজ তোতার। “কাল থেকে আবার নতুন জীবন শুরু করব। নতুন জীবন।” সোজা তাকালেন। চোখের কোণে চিকচিক করছে জল। “আজ গোলের বলটা যখন মারলাম মনে হচ্ছিল সেটা গোলের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু যখন তা গোলে ঢুকল তখন মনে হল ঈশ্বর আজও আমার সঙ্গে রয়েছেন। ঈশ্বরের জন্যই তো সব পাওয়া।”
১৭ জানুয়ারি ২০০০ মারগাওতে ডেম্পোর বিরুদ্ধে দশ নম্বর সবুজ-মেরুন জার্সি পরে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের প্রথম গোল। আর ধারাবাহিক সাফল্যের সেই ইতিহাস রবিবার থামল পুণের সুব্রত পালকে টপকে। নিজের ২২৪ তম গোলে। ১১ বছর আগে দেশের এক নম্বর টিমের বিরুদ্ধে গোল করে ‘আগমন’ জানান দিয়েছিলেন ব্যারেটো। আর দেশের একনম্বর গোলকিপারের নাগাল এড়িয়ে গোল করে শেষ হল মোহনবাগানে ব্যারেটো-যুগ। মাঝে পালতোলা নৌকোয় উঠে ৩৯৮-টা ম্যাচ খেলে ফেলা!
প্রচার মাধ্যমের সামনে।
“গত কাল রাত পর্যন্ত, এমনকী আজ সকালেও ঘুম থেকে ওঠার পর মনে হয়েছিল জীবনে এ রকম দুঃখের দিন কখনও আসেনি। কিন্তু আজ সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে এটা একটা বিশেষ দিন। পোর্তো আলেগ্রা থেকে যে দিন বিমানে উঠেছিলাম, সে দিন ভাবতেও পারিনি এত বছর মোহনবাগানে খেলব। জার্সি পরে মাঠে না নামলেও আমি কিন্তু মোহনবাগানের জন্য সব সময় আছি। যখন আমার খারাপ সময় গিয়েছে, যখন গোল পাইনি, যখন চোট পেয়ে গ্যালারিতে বসে থেকেছি তখন সবাই আমার সঙ্গে থেকেছেন। সমর্থক, সতীর্থ, ক্লাব কর্তা। যেখানেই যাই তাদের ভুলব কেমন করে? আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। সবার...।” ভাষা হাতড়াচ্ছিলেন বহু ম্যাচে মোহনবাগান সমর্থকদের ‘ভাষা’ দেওয়ার নায়ক। গলা বুজে আসছে। বারবার পায়ের সামনে রাখা বোতল থেকে জল খাচ্ছেন।
শেষ বার যখন ড্রেসিংরুম থেকে মাঠের দিকে বিদায় সংবর্ধনা নেওয়ার জন্য পা বাড়ালেন, তখন ব্যারেটোকে জড়িয়ে ধরছিলেন ওডাফা, সংগ্রাম, আনোয়াররা। ফেরার পরও একই দৃশ্য। মাঝে হাজার পঁয়তাল্লিশ মানুষের ভালবাসা, আবেগের বিস্ফোরণ। নানা অনুষ্ঠান, উপহার। মাঝে একবার ব্যারেটো মোহনবাগান জার্সি ছেড়ে মহীন্দ্রায় গিয়ে জাতীয় লিগ জিতিয়েছিলেন। তখন যিনি মুম্বইয়ের অফিস টিমটার কোচ ছিলেন সেই ডেরিক পেরিরা এ দিন ছিলেন পুণের রিজার্ভ বেঞ্চে। কোচ হয়ে। রবিবারের বিকেলে ব্যারেটো-বিদায়ের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে ডেরিক বলছিলেন, “এত দিন নাগাড়ে একই টিমের হয়ে খেলে যাওয়া। দলের প্রতি কমিটমেন্ট। ব্যারেটো সত্যিই ভগবানদত্ত প্রতিভা। ওর জন্য এই আবেগ স্বাভাবিক।” ব্যারেটোও তো স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পারছিলেন কই”।
“সারা জীবনই আমি পজিটিভ থেকেছি। আজও যে আমাকে নিয়ে এত কিছু হচ্ছিল তার মধ্যেও ম্যাচটা জেতার ব্যাপারে ফোকাস ঠিক রাখার চেষ্টা করে গিয়েছি। আজও গোল করেছি। ম্যাচটা আমরা জিতেছি,” মোহনবাগান আর তিনি যে সমার্থক সেটা বোঝাতেই সম্ভবত বলছিলেন ব্যারেটো। আর সেখান থেকেই ধরা পড়ছিল আক্ষেপ। পঁয়ত্রিশের পরেও আরও কিছু দিন শতবর্ষ পেরিয়ে আসা ক্লাবের হয়ে খেলার তীব্র আকুতি। “এ বছর আমি টিমের অধিনায়ক ছিলাম। কিন্তু ট্রফি পায়নি ক্লাব। সেই দুঃখটা রয়েই গেল।”
পরিবারের সঙ্গে। সবুজ-মেরুনে শেষ দিন ব্যারেটো।
কলকাতায় থাকলে প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে তাঁর গন্তব্যস্থল এ দিনের পর বদলে যাবে। আজ সোমবার থেকে তাকে দেখা যাবে না গঙ্গাপারের ক্লাবে কিট নিয়ে ঢুকতে। ব্যারেটো দীর্ঘশ্বাস নিতে নিতে বলছিলেন, “এখন কিছু দিন বিশ্রাম নেব। ১৯ মে মালয়েশিয়া যাচ্ছি দেড় মাসের ছুটি কাটাতে। তার পর আবার নতুন দল। নতুন জার্সি। নতুন চ্যালেঞ্জ।” বৃহস্পতিবারই প্রিমিয়ার ডিভিসনের ক্লাব ভবানীপুরের ফুটবলার হিসাবে সরকারি ভাবে ঘোষিত হবে হোসে ব্যারেটোর নাম। সে হোক। কিন্তু বাগান ছেড়ে যেখানেই শিকল কেটে উড়ে যান, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চুনী, সুব্রত, সত্যজিতের মতো ব্যারেটোকে দেখলেও লোকে বলবে, “ওই যে মোহনবাগানের ব্যারেটো যাচ্ছে।”
প্রসঙ্গ তুললে ব্যারেটো বেশ নস্টালজিক “গতকাল রাতে এটাই আমাকে বোঝাচ্ছিল আমার স্ত্রী ভেরোনিকা। আসলে আমি তো একটু আবেগপ্রবণ। সত্যিই তো যেখানেই যাই আমি মোহনবাগানেরই!”

ছবি: উৎপল সরকার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.