|
|
|
|
মেদিনীপুরের ‘আপনজন’ ছিলেন নন্দগোপাল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগনার খলিসাকোটা গ্রামে। তবু রাজনীতির সূত্রে মেদিনীপুরের ‘আপনজন’ হয়ে উঠেছিলেন। সেই কাছের মানুষ, দাঁতনের প্রাক্তন সিপিআই বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নন্দগোপাল ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে মেদিনীপুরে।
রবিবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন নন্দগোপালবাবু। বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ছিল তাঁর বিধানসভা এলাকা। বামফ্রন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দাঁতন বিধানসভা আসনটি সিপিআইয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল। ওই কেন্দ্র থেকে জিতেই রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন সিপিআইয়ের কানাই ভৌমিক। পরবর্তীকালে সিপিআইয়ের রঞ্জিত পাত্র বিধায়ক হন। অসুস্থতার জন্য রঞ্জিতবাবু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ১৯৯৬ সালে। কাকে প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে দলে জোর আলোচনা শুরু হয়। উঠে আসে নন্দগোপাল ভট্টাচার্যের নাম। তখনও মেদিনীপুর জেলা ভাগ হয়নি। মেদিনীপুরের মানুষ নন, এমন একজনকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের মধ্যে ধন্দও ছিল। তবে নন্দগোপালবাবু মেদিনীপুরে রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন দলের সর্বক্ষণের কর্মী। ফলে, রাজ্যের যে কোনও প্রান্তেই নির্বাচনে লড়তে পারেন। সেই মতো ১৯৯৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দাঁতন থেকে প্রার্থী হন তিনি। বিধায়ক হিসাবে সে বারই অভিষেক হয়। তারপর একটানা জয়। বয়সজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২০১১ সালে তাঁকে আর প্রার্থী করেনি দল। অরুণ মহাপাত্রকে প্রার্থী করা হয়। বর্তমানে তিনিই দাঁতনের বিধায়ক। অরুণবাবুর কথায়, “ওঁর (নন্দগোপালবাবু) সঙ্গে আমার অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আমার বাড়িতেও আসতেন। শুধু আমার সঙ্গে নয়, দাঁতন এলাকার প্রতিটি মানুষের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও ছিল সুসম্পর্ক। মেদিনীপুরের মানুষ তাঁকে চিরদিন মনে রাখবে।”
ছাত্র রাজনীতি দিয়েই নন্দগোপালবাবুর উত্থান। প্রথমে ছাত্র সংগঠন এআইএসএফ, পরে যুব সংগঠন এআইওয়াইএফ। পঞ্চাশের দশকে সিপিআইয়ের সদস্যপদ গ্রহণ। ধীরে ধীরে রাজ্য কমিটি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। অন্য দিকে বিধায়ক থেকে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও সেচ দফতরের মন্ত্রী। সিপিআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক সন্তোষ রাণার কথায়, “ক্ষুদ্র সেচের মাধ্যমে কী ভাবে কৃষির উন্নয়ন ঘটানো যায়, তার সফল রূপায়ণ হয়েছিল নন্দগোপালবাবুর আমলে। ফলে সেচসেবিত এলাকা বেড়েছে অনেকটাই। কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছে, যার সুফল বর্তমানে কৃষকেরা পাচ্ছেন।”
জেলার বাসিন্দা না হলেও বিধায়ক হওয়ায় প্রায়ই মেদিনীপুরে আসতেন। মেদিনীপুরে জেলা পার্টি অফিসের পাশাপাশি নিজের বিধানসভা এলাকা দাঁতনেও থাকতেন। মন্ত্রী থাকাকালীন খুব বেশি দিন থাকতে পারতেন না। কিন্তু যখন আসতেন তখন এলাকার মানুষের অভাব-অভিযোগ মন দিয়ে শুনতেন। দাঁতনের বর্তমান বিধায়কের কথায়, “ওঁর সময় রাস্তা হয়েছে, বিদ্যুতের সাবস্টেশন হয়েছে। বিধানসভা এলাকার ৭৫ শতাশংই এখন সেচসেবিত। আরও অনেক কাজের পরিকল্পনা ছিল তাঁর। সেগুলিও ধীরে ধীরে রূপায়িত হচ্ছে। তাঁর কাজের গুণেই এলাকার মানুষ তাঁকে মনে রাখবেন। |
|
|
|
|
|