|
|
|
|
শুরু আদিগঙ্গা সংস্কার, উঠছে প্রশ্নও |
মিলন দত্ত • কলকাতা |
সেচ দফতর আদিগঙ্গায় পাঁক তোলার কাজ শুরু করলেও কার্যত বর্জ্য জলের ওই নালা দীর্ঘমেয়াদী ভাবে কতটা পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিশেষজ্ঞেরা।
আদিগঙ্গা তথা টালির নালা সংস্কারে হাত দিয়েছে সেচ দফতর। প্রথম পর্যায়ে দহিঘাট থেকে গড়িয়া, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে রাজপুর-সোনারপুর পেরিয়ে বিদ্যাধরী পর্যন্ত আদিগঙ্গার পাঁক তোলা হবে বলে জানান সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, “মোট খরচ হবে ১০ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। কলকাতা পুরসভার ৬টি ও রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৪টি ওয়ার্ড ছাড়া কিছু পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে অদিগঙ্গা গিয়েছে। গোটা এলাকা জুড়ে কাজ হবে।” তবে সেচ দফতর বুঝতে পারছে, কাজে সবচেয়ে বড় অন্তরায় জবরদখল। মন্ত্রীর কথায়, “আমরা চেষ্টা করছি কাজটি দ্রুত শেষ করার। জবরদখল না হটালে কাজ বহু জায়গায় থমকে যেতে পারে।”
যে ৬টি ওয়ার্ড দিয়ে আদিগঙ্গা গিয়েছে, সেখানে জবরদখল হটানোর দায়িত্ব কলকাতা পুরসভার। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আদিগঙ্গার পাঁক তুলে সংস্কার শুরু হয়েছে। সেচ দফতর যখন যেমন সাহায্য চাইবে, করার চেষ্টা করব।” কিন্তু আদিগঙ্গায় তো শুধু পাঁকের সমস্যা নয়, সমস্যা জঞ্জাল এবং অপরিচ্ছন্নতারও। সেটির দু’পাড় বাসের অযোগ্য। কিন্তু সংস্কার করলেই কি আদিগঙ্গা পরিষ্কার থাকবে? এই প্রশ্ন মেয়রেরও। তিনি মনে করেন, এলাকাবাসী যাতে ওই নালায় আর নোংরা না ফেলেন, তার জন্য লাগাতার প্রচার প্রয়োজন। |
|
আগে অবশ্য সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ওই নালার দুই পাড়ের প্রবীণ মানুষেরা ‘টালি নালা সংস্কার ও সংরক্ষণ সমিতি’ নামে সংগঠন গড়ে সচেতনতা কর্মসূচি শুরু করেছেন। সমিতির সভাপতি তপনকুমার বসু বলেন, “গড়িয়া থেকে কালীঘাট পর্যন্ত আদিগঙ্গার দু’পাড়ের মানুষকে বলছি এই হেরিটেজ নদীটি পরিষ্কার রাখতে। আমরা আগে এ নিয়ে লিফলেট বিলি করেছি। এ বার আরও বড় প্রচারে নামছি।”
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে সেচ দফতর হাত দিয়েছে বলে মনে করেন নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। তবে টালির নালার ভিতরে মেট্রো রেলের তিনশো থাম রেখে ওই খাল সংস্কার কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। কল্যাণবাবুর কথায়, “মেট্রো স্টেশনগুলি তৈরি হয়েছে টালির নালার উপরে। সেই জায়গাগুলি সাফ করার প্রায় উপায় নেই।” আদিগঙ্গা বা টালির নালায় গঙ্গার জোয়ারের জল যায় কালীঘাট মন্দির থেকে দক্ষিণে করুণাময়ী সেতু পর্যন্ত। ওই অংশটুকুও কার্যত নর্দমা। বাকি অংশটি তো একেবারেই নর্দমা।
টালির নালাকে বর্জ্যমুক্ত করতে না পারলে গঙ্গার দূষণও কমবে না। কারণ দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার বর্জ্য জল আদিগঙ্গা নিয়ে গিয়ে গঙ্গায় ফেলে। কলকাতা পুরসভাকে কল্যাণবাবুর পরামর্শ, “খালের দু’পাড়ে বর্জ্য জলের পাইপলাইন হোক। সেই পাইপ যাবতীয় বর্জ্য জল ট্রিটমেন্ট প্লান্টে ফেলবে। সেই নোংরা জল পরিশোধনের পরে গঙ্গাতেই ফেলা যেতে পারে।” তা করলে গঙ্গা এবং টালির নালা, দুটোই বাঁচবে। তিনি আরও বলেন, “সবচেয়ে আগে টালির নালায় শহরের নোংরা জল ফেলা বন্ধ করা দরকার। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উল্টো দিকে আলিপুর জেলের পাশে একটি পাম্পিং স্টেশন থেকে রোজ কয়েকশো গ্যালন নোংরা জল আদিগঙ্গায় পড়ছে। সেই নোংরা গঙ্গায় গিয়ে মিশছে।” কল্যাণবাবুর কথায়, “যে লক্ষ লক্ষ মানুষ গভীর বিশ্বাসে রোজ অদিগঙ্গার জলকে পবিত্র জ্ঞানে বোতলে করে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের ঠকানোর অধিকার আমাদের নেই।” আদিগঙ্গার মতো একটি ‘হেরিটেজ’ নদীর এই অবস্থা আদৌ কাম্য নয়।
দেরিতে হলেও আদিগঙ্গার পাঁক তোলার কাজ যে শুরু হয়েছে, সেটিও স্থানীয় মানুষের মধ্যে আশা বাড়িয়েছে। |
|
|
|
|
|