নেতৃত্বের উদ্বেগ বাড়িয়ে আচমকাই বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। বিজেপি
থেকে ইস্তফা দিয়ে আঞ্চলিক দল গড়ার হুমকি দিয়ে
বসেছেন ‘মহারানি’।
রাজস্থানে বসুন্ধরার মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময় স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বে ছিলেন গুলাবচাঁদ কাটারিয়া। বিজেপিতে সেই গুলাবচাঁদই এখন বসুন্ধরার প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয় নিশ্চিত জেনে কাটারিয়া নিজেকে ভবিষ্যতের মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন। অন্য দিকে মহারানি যথারীতি চান, তাঁর নেতৃত্বেই বিজেপি আসন্ন নির্বাচন লড়ুক।
এমতাবস্থায় কাটারিয়া ২৮ দিনের ‘লোক জাগরণ যাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ কাটারিয়া দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ীর থেকে অনুমতি নিয়েই এই যাত্রার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু গত কাল দলের কোর কমিটির বৈঠকে এই যাত্রা বাতিল করার দাবি জানান বসুন্ধরা। কিন্তু কাটারিয়া সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। বসুন্ধরা তখন শুধু বিজেপি থেকে ইস্তফা দিয়ে নতুন দল গড়ার হুমকিই দিয়ে ক্ষান্ত হননি, তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রায় ৫০ জন বিধায়কের ইস্তফাও আদায় করে নিয়েছেন। রাজস্থানের অনেক নেতাই বসুন্ধরার প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে ইস্তফা দিয়েছেন। তার মধ্যে টিম-গডকড়ীর অন্যতম সদস্যা কিরণ মহেশ্বরীও রয়েছেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গডকড়ী এখন হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে এসেছেন। লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে পরামর্শ করে তড়িঘড়ি কাটারিয়ার প্রস্তাবিত যাত্রা বাতিল করিয়েছেন তিনি। কাটারিয়া বলেছেন, “আমি দলের অনুগত সৈনিক। আমার যাত্রার জন্য যদি দলের সঙ্কট হয়, তা হলে সেই যাত্রা আমি বাতিল করছি।” ধাক্কা খেয়ে গডকড়ী বসুন্ধরাকেও বুঝিয়েছেন, তাঁকে ছাড়া আর কোনও নেতার নেতৃত্বে রাজ্য বিধানসভায় লড়ার কথা দল ভাবছে না। বসুন্ধরাই রাজস্থানের ভবিষ্যৎ মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লিতে গডকড়ী-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “কাটারিয়া তাঁর যাত্রার জন্য অনুমতি নিয়েছিলেন বটে। কিন্তু তার জন্য যে এমন বিবাদ হবে, সেটি অনুমানে ছিল না। রাজস্থানে বসুন্ধরাই যে দলের নেত্রী, সে বিষয়ে কারও সন্দেহ নেই।”
বসুন্ধরাকে বোঝানোর জন্য এনডিএর প্রাক্তন সহযোগী ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। বসুন্ধরাকে নবীন বোঝান, দল ছেড়ে জমি তৈরির কাজ সহজ নয়। বরং দলে থেকেই নিজের প্রাপ্য আদায় করে নেওয়া সঠিক কৌশল। বসুন্ধরাও এখন বলছেন, “দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় দলের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়া হবে।” কিন্তু মুখে বললেও তিনি নিজের শক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত। দল ও সঙ্ঘ নেতৃত্বের উপরে চাপ বাড়াতে তিনি অনুগামীদের একজোট করছেন। সকাল থেকে তাঁরা জয়পুরে বসুন্ধরার বাড়িতে জমায়েত করেছেন। বসুন্ধরা-ঘনিষ্ঠ এক নেতার মন্তব্য, “এর আগেও বসুন্ধরা দিল্লিতে গিয়ে দলের একাংশের গতিবিধি সম্পর্কে আডবাণী-গডকড়ী-জেটলিদের জানিয়েছেন। তার পরেও দল যদি এ ধরনের যাত্রার অনুমতি দেয়, তা হলে ইস্তফা দেওয়া ছাড়া গতি নেই।” গডকড়ী শিবিরের মতে, এর আগে সভাপতি পদে থাকার সময় বসুন্ধরাকে নিয়ে সঙ্কট মেটাতে পারেননি রাজনাথ সিংহ। গডকড়ী সভাপতি হওয়ার পর বসুন্ধরাকে বোঝানোর কাজটিই প্রথম হাতে নেন। লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির তখ্ত দখল করতে হলে রাজস্থানের মতো রাজ্যে ভাল ফল করা অনিবার্য। তাই এখন কোনও অস্থিরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না।
দিল্লিতে দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্য, “লালকৃষ্ণ আডবাণীর জনচেতনা যাত্রার সময় রাজস্থানে বসুন্ধরার উদ্যোগেই ভাল সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। তাই কোনও ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়। কাটারিয়ার যাত্রা বাতিল না হলে নিত্য দিন বিতর্কের মাত্রা বাড়ত।”
সেই বিতর্কের অভিমুখ ঘোরাতেই আজ রবিবারও বেনজির ভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে বিজেপি। জাতীয় সন্ত্রাসদমন কেন্দ্র নিয়ে গত কাল মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক নিয়ে চিদম্বরম ও মনমোহন সিংহকে এক হাত নেওয়া হয়েছে সেখানে। কাল, সোমবার বসুন্ধরা তাঁর অনুগামীদের নিয়ে দিল্লি আসছেন। গডকড়ীর সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। গোটা ব্যাপারটায় মধ্যস্থতা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অরুণ জেটলিকে। রাজস্থানে দলের অন্দরে সঙ্ঘ নেতৃত্বকে নাক গলাতে না দেওয়াই ভাল, এই বার্তাই দেবেন বসুন্ধরা। |