ছেলেধরা সন্দেহে ৩ চালককে মেরে আধমরা করল উত্তেজিত বাসিন্দারা। শুধু তাই নয়, ওই তিন যুবকের সঙ্গে থাকা একটি ছোট গাড়িও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মালদহের চাঁচলের বিলাইডাঙি এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ এলাকায় গিয়ে উত্তেজিত বাসিন্দাদের হাত থেকে তিনজনকে উদ্ধার করে চাঁচল হাসপাতালে ভর্তি করায়। ঘটনার সময় ওই তিন জন বাঁধের রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বসে গল্প করছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “সন্দেহের বশেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, পিঙ্কু দাস, রবি সাহা ও হিমেল আলি নামে ওই যুবকদের বাড়ি চাঁচল লাগোয়া সিহিপুর এলাকায়। প্রত্যেকেরই বয়স ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে। গাড়িটি ওই এলাকারই ভোলা দাস নামে এক ব্যবসায়ীর। গাড়িটির চালক পিঙ্কু। ভোলাবাবুর অন্য একটি গাড়ি চালান রবি। হিমেলও পেশায় চালক। এদিন আশাপুর এলাকায় ভাড়া নিয়ে যান পিঙ্কু। সঙ্গে ছিলেন রবি। আশাপুরে ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে পরিচিত গাড়ি দেখে তাতে উঠে পড়েন হিমেলও। ভাড়ার যাত্রীদের পৌঁছে ফেরার সময়ে তাঁরা গাড়ি রেখে আমবাগানে বসে গল্প করছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বোরো চাষের মরসুম হওয়ায় মাঠে কাজ করছিলেন বহু কৃষক। দীর্ঘক্ষণ যুবকদের বসে থাকতে দেখে তাঁদের ওই এলাকায় বসে থাকার কারণ জানতে চান কয়েক জন। এমনকী, গাড়ির ‘ডিকি’ খুলে রাখা হয়েছে কেন তাও জানতে চান। এরপরই এলাকায় গুজব রটে যায়, গাড়ি নিয়ে ছেলে চুরি করতে এসে ৩ যুবক ধরা পড়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে জড়ো হয়ে যান কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। এমনকী, তাঁদের আগেও কয়েক দিন ওই এলাকায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই তিন জন প্রথমে ঘিরে ধরে আটকে রাখা হয়। তখন তাঁরা ছেলেধরা নয় বলে চেঁচাতে থাকে। শুরু হয় মারধর। তিন জনকে বাঁচাতে স্থানীয় একটি ক্লাব ঘরে নিয়ে যান বাসিন্দাদের কয়েক জন। কিন্তু বেড়ার তৈরি ওই ক্লাবঘর ভেঙে ঢুকে পড়ে জনতা। এরই মধ্যে গাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। দমকল পৌঁছানোর আগেই গাড়িটি ছাই হয়ে যায়। পুলিশ ৩ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, তিন জনই গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। তাদের পুরানো অপরাধের মামলা বা ঘটনা নেই। গণপ্রহারে তিন জনেরই সারা শরীর ফুলে গিয়েছে। হিমেলের মাথা ফেটেছে। চাঁচল হাসপাতালে শুয়ে হিমেল বলেন, “আমবাগানে বিড়ি খাচ্ছিলাম। তিন জনে সুখ-দুঃখের গল্প করছিলাম। কিন্তু কী যে হয়ে গেল! আমরা ছেলেধরা নই, গাড়ির চালক বললেও কেউ কথা শোনেনি।’ গাড়ির মালিক ভোলা এই প্রসঙ্গে বলেন, “গুজবে এমন ঘটতে পারে ভাবতে পারছি না। পুলিশকে অভিযোগ জানাব।” |