আগামী ৪ জুলাই দার্জিলিং জেলা বিশেষ আদালতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপের অভিযোগের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে মামলায় অভিযুক্তদের চার্জশিট-সহ অন্যান্য নথির কপি দেওয়া হয়। সেখানেই মামলার বিচারের জন্য ৪ জুলাই অভিযুক্তদের দার্জিলিঙের বিশেষ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের সরকারি আইনজীবী মানিক সাহা বলেন, “এদিন আদালতে অভিযুক্তদের চার্জশিটের কপি-সহ অন্যান্য নথি দেওয়া হয়। মামলার পরবর্তী পর্যায় জেলা আদালতের নির্দেশ মেনে হবে।” আদালত সূত্রের খবর, ২০১০ সালের এপ্রিলে তৎকালীন উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় দেড় কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে মামলা রুজু করে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অভিযোগ, ২০০৮ সাল থেকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপা সহ নানা খাতে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। তা নিয়ে দু’দফায় হিসেব পরীক্ষা করানে অরুণাভবাবু। ওই আর্থিক তদন্তে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি। দুটি রিপোর্ট খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত এক সদস্যের কমিটির। তার পরে বিষয়টি নিয়ে অভিমত জানতে চাওয়া হলে তৎকালীন অ্যাডভোকেট জেনারেল এফআইআরের পক্ষে মত দেন। কিন্তু, কর্মসমিতির অনুমোদন না-মেলায় এফআইআর তখন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের দাবি, পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অভিমত সাপেক্ষে এফআইআর করেন তদানীন্তন উপাচার্য। ওই এপ্রিলেই আগাম জামিন পান প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ামক তথা রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার। পরের বছর ২০১১ সালের জুন মাসে পুলিশের তরফে প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ামক তথা রেজিস্ট্রার দিলীপবাবু, প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহা সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়া হয়। বিশেষ ক্ষমতাবলে উপাচার্য চার্জশিট পেশের প্রয়োজনীয় দিলেন। তা আদালতে গ্রাহ্য হবে না বলে জানাল পুলিশ। তার পরেও চার্জশিট পেশের অনুমতি পায়নি পুলিশ। রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি মামলার বিষয়টি জানতে পারেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেন। তার দু’সপ্তাহের মধ্যেই ওই মামলায় পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিট পেশের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত কর্মসমিতি দিলীপবাবুকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। ওই মামলায় অভিযোগে নাম রয়েছে মোট ৬ জনের। তার মধ্যে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তিবাবু, রেজিস্ট্রার দিলীপবাবু ছাড়াও রয়েছেন রমেশ গ্রোভার, শুভেন্দু হাজরা, তপন ভাদুড়ি ও শ্রীজীব ভাদুড়ি। প্রত্যেকেই এদিন আদালতে হাজির ছিলেন। প্রাক্তন উপাচার্যের আইনজীবী দীপক নন্দী এবং অন্যদের আইনজীবী পার্থ চৌধুরী এদিনও দাবি করেন, তাঁদের মক্কেলরা প্রত্যেকেই নির্দোষ। এদিন দিলীপবাবু অভিযোগ করেন, “অন্যায় ভাবে আমায় দু’বার সাসপেন্ড করা হয়েছে। একবার উপাচার্য নিজেই সেটা করেছিলেন। হাইকোর্ট আমার পক্ষে রায় দিয়েছিল। উপাচার্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেটা এখনও বিবেচনাধীন। ফের গত ২৬ মার্চ বিচার শুরু হয়েছে বলে কর্মসমিতিকে ভুল বুঝিয়ে সাসপেন্ড করা হয়। অথচ আজ চার্জশিট হাতে পেয়েছি। এখনও বিচার শুরু হয়নি। তার আগেই কেন অসম্মান এবং হেনস্থা করা হল বুঝতে পারলাম না।” |