কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে হস্ত এবং কুটির শিল্পের একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র কুটির শিল্প মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। প্রথমে কোচবিহারে অনুষ্ঠান সেরে মন্ত্রী দুপুরে আলিপুর দুয়ারে যান। দুই এলাকার নানাবিধ সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান মন্ত্রী মানসবাবু। সেচ দফতরের নানা কাজের কথা বলেন। বৃহস্পতিবার প্রথমে জেলার হস্ত ও তাঁত শিল্পীদের পরিচয়পত্র প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কোচবিহারে আসেন মানসবাবু। তার আগে জেলার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে সার্কিট হাউসে একটি বৈঠক করেন মানসবাবু। নদী ভাঙন রোধ, হস্তশিল্পীদের স্বাস্থ্যবীমা ও ক্রেডিট কার্ড প্রদান, শিল্প পরিকাঠামোর উন্নয়ন, দ্বিতীয় শিল্পতালুক গড়া, শীতলপাটি শিল্পীদের জন্য ক্লাস্টার সেন্টার তৈরি, রেশম চাষীদের সুতো বিক্রি করে বাড়তি লাভ নিশ্চিত করতে রেশম ও বস্ত্র বিভাগের যোগসূত্র বাড়ানোর মত নানা পরিকল্পনার কথা এ দিন জানিয়েছেন মন্ত্রী। |
মানসবাবু বলেন, “ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের উন্নয়ন, নদী ভাঙন মোকাবিলা জনিত বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার নদী ভাঙন সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন এলাকার বিধায়কদের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জেলার অন্তত ৩০টি নদীর ভাঙন সমস্যা মেটাতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে মন্ত্রীকে তাঁরা আর্জি জানান। মানসবাবু বলেন, “কোচবিহার-জলপাইগুড়ির বহু নদী ভূটান থেকে নেমে এসেছে। পাথর, ডলোমাইট নিয়ে ওই সব নদী প্রবাহিত হচ্ছে বলে এখানে সমস্যা আলাদা। নদীবক্ষ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হচ্ছে। সমস্যা মেটাতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে। আর ইন্দো-ভূটান নদী কমিশন গড়ার ব্যাপারেও কেন্দ্রীয় সরকার চিঠি দিয়েছি।” সেচ দফতরের কাজে স্বচ্ছতা আনতে ৫০ লক্ষ টাকার বেশি প্রকল্পের কাজে ই-টেন্ডার ডাকা, দফতরের কাজ পরিচালনার জন্য ভিজিল্যান্স মনিটরিং টিম গড়ার কথাও জানান মানসবাবু। একশো দিনের প্রকল্পে সেচের কাজে কোচবিহারের জন্য ৩ কোটি টাকার অনুদান মেলার কথাও মন্ত্রী এদিন জানান। হস্তশিল্পী ঠিকঠাক স্বাস্থ্য বিমার কার্ড পাচ্ছেন না বলে মন্ত্রীর কাছে নালিশ জানান। পরে আলিপুরদুয়ারে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিন কোটি টাকা ব্যায়ে আলিপুরদুয়ার তপসিখাতায় হস্তশিল্পীর জন্য গ্রামীণ হাট করার কথা ঘোষণা করেন মন্ত্রী। |
পুরসভার হলের ওই অনুষ্ঠানে হস্তশিল্পীদের হাতে পরিচয় পত্র এবং স্বাস্থ্য বিমার কার্ড তুলে দেন মন্ত্রী। মানসবাবু বলেন, “রাজ্যের চার জায়গায় হস্তশিল্পীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় গ্রামীণ হাট তৈরি হচ্ছে। আলিপুরদুয়ার ছাড়া ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া ও বিষ্ণুপুরে গ্রামীণ হাট হচ্ছে। দুর্গাপুর, সল্টলেক, শান্তিনিকেতনে ও শিলিগুড়িতে চারটি আর্বানহাট হচ্ছে।” মন্ত্রী জানান, হস্তশিল্পীদের কাজের উপর নজর রাখার জন্য জেলায় জেলায় মনিটারিং টিম তৈরি করা হচ্ছে। মুগা নিয়ে আরও প্রকল্প তৈরির জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাট, বাঁশ, বেত, তাঁত শিল্পীরা নিয়ে নানা প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। হস্তশিল্পীদের স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াও জনশ্রী বিমার আওতায় আনা হবে। এতে স্বভাবিক মৃত্যু হলে তিরিশ হাজার টাকা এবং দুর্ঘটনা জনিত কারণে মৃত্যু হলে শিল্পীরা ৭৫ হাজার টাকা পাবেন। পাশাপাশি, শিল্পীদের ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কংগ্রেসের তরফে এদিন মানসবাবুকে আলিপুরদুয়ার মহকুমার বাঁধ মেরামতি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ জানিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। |