কামড়ায় আরও বেশি, ছড়ায় রোগ
ডেঙ্গি-জীবাণুর স্পর্শেই
রক্তের খোঁজে পাগল মশা
ডিস ইজিপ্টাই মশার শরীরে ডেঙ্গি ভাইরাস ঢুকলে সেই মশার জিনগত পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে স্ত্রী মশার রক্তের ‘খিদে’ বেড়ে যায়, তা কামড়ায় অনেক বেশি মানুষকে। এতে ডেঙ্গি সংক্রমণের হার ক্রমশ বাড়তে থাকে বলে দাবি করেছেন আমেরিকার এক দল গবেষক।
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজতে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশ যখন হিমশিম, তখন ‘জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’-এর গবেষকদের এ হেন তত্ত্ব নিঃসন্দেহে উদ্বেগের পারদ আরও চড়িয়ে দিল। পিএলওএল প্যাথোজেন জার্নালের ২৯ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে জর্জ ডিমপোলাস ও তাঁর সহযোগীরা দাবি করেছেন, স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশার লালাগ্রন্থির অন্তত ১৪৭টি জিনের পরিবর্তন ঘটায় ডেঙ্গি ভাইরাস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফি বছর সারা বিশ্বে ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। হেমারেজিক ডেঙ্গিতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এমনিতেই বিশ্বের ডেঙ্গি-মানচিত্রে ভারত প্রথম সারিতে। তার মধ্যে আবার পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে বেশ উপরের দিকেই। ডেঙ্গি-প্রকোপের নিরিখে চার মহানগরীর মধ্যে রাজধানী দিল্লির পরেই কলকাতার স্থান। পরজীবী-বিশেষজ্ঞদের আশা, ডেঙ্গি মারমুখী হয়ে ওঠার কারণ অনুসন্ধানে ডিমপোলাসদের গবেষণাটি যথেষ্ট সহায়ক সহায়ক হবে।
ডেঙ্গি ভাইরাস কী ভাবে স্ত্রী এডিস মশার ‘আচরণ’ বদলে দেয়, ডিমপোলাসেরা তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ওঁদের বক্তব্য, ডেঙ্গি ভাইরাস মশার শারীরবৃত্তীয় কোনও পরিবতর্ন না-ঘটালেও জিনের চরিত্র বদলে দেয়। যার প্রতিক্রিয়ায় স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশার ‘রক্তপিপাসা’ বৃদ্ধি পায়। মশাটি পাগলের মতো রক্তের উৎস খুঁজে বেড়ায়, তার ‘শিকারের’ প্রয়োজন হয় বেশি। আর ওই মশা যত বেশি মানুষকে কামড়ায়, তত বেশি করে ছড়ায় ডেঙ্গি।
জিনগত পরিবর্তনে ঠিক কী হয়? গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এতে স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশার ঘ্রাণেন্দ্রিয় ‘অতি সক্রিয়’ হয়ে ওঠে। মানুষ কিংবা অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্তের গন্ধ বহু দূর থেকে তাদের কাছে পৌঁছায়। ফলে নতুন নতুন শিকার খুঁজে পেতে সমস্যা হয় না। উল্লেখ্য, ডেঙ্গি ভাইরাস মূলত বাসা বাধে মশার লালাগ্রন্থি ও শুঁড়ে। তাই যখনই ওই মশা মানুষকে কামড়ায়, প্রথম চোটেই ডেঙ্গি ভাইরাস মিশে যায় মানুষের রক্তে।
ডিমপোলাসদের গবেষণা ডেঙ্গি প্রতিরোধে কতটা সাহায্য করবে?
গবেষণাপত্রে ওঁরা বলেছেন, ডেঙ্গির কোনও স্বীকৃত প্রতিষেধক এখনও বাজারে বেরোয়ানি। তাই প্রধানত মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণই ডেঙ্গি প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার। সে ক্ষেত্রে তাঁদের আবিষ্কৃত তথ্যটি মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলে মার্কিন গবেষকদের আশা।
অন্য দিকে ডিমপোসালদের গবেষণাপত্রে ‘অশনি সঙ্কেত’ দেখছেন পরজীবী-বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী। তিনি জানাচ্ছেন, স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশা প্রতি বার ডিম পাড়ার আগে বেশি বেশি রক্ত পান করে। কারণ, মেরুদণ্ডী প্রাণী অথবা পাখির রক্ত মশকীর ডিমের নিষেক প্রক্রিয়াকে ত্বরাণ্বিত করে। ওই রক্ত মশার ডিমের মধ্যে থাকা ভ্রূণের পুষ্টি যোগায়। আমিতাভবাবুর কথায়, “যত বেশি রক্ত মশকীর দেহে ঢুকবে, তত তাড়াতাড়ি ডিম নিষিক্ত হবে। অর্থাৎ, একটি স্ত্রী মশার ডিম দেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে। জীবনচক্র দ্রুত হবে। পরিবেশে এডিস ইজিপ্টাই মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।”
এবং এতে ডেঙ্গি পরিস্থিতি-ই জটিলতর হবে বলে আশঙ্কা অমিতাভবাবুর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.