|
|
|
|
বৃহত্তর বাম ঐক্য |
সিপিএমের সামনে ‘শর্ত’ লিবারেশনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সিপিএমের আহ্বানে ‘বৃহত্তর বাম ঐক্যে’র মঞ্চে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের সামনে শর্ত রেখেছে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন। শর্তটি হল সিপিএমকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-নেতাই কাণ্ডে ‘নির্মম আত্মসমালোচনা’ করে আসতে হবে। তবে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর ‘আক্রমণে’র প্রতিবাদে সিপিএমের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ লড়াইতে যেতে লিবারেশনের আপত্তি নেই। সিপিএম তাদের রাজ্য সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়তে উদ্যোগী হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু গত শুক্রবার লিবারেশনের দফতরে গিয়ে তাদের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৃহস্পতিবার সেই বৈঠকের কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দীপঙ্করবাবু দাবি করেন, সেটি নিছকই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ ছিল। দীপঙ্করবাবুর কথায়, “সিপিএম এ রাজ্যের ক্ষমতায় থাকাকালীন তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস এক বার আমাদের দফতরে বৈঠক করতে এসেছিলেন। এ বার বিমানবাবু এলেন।” কিন্তু হঠাৎ এখনই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ প্রয়োজন হল কেন? এত দিন তো দু’ পক্ষের কারও তরফেই ওই উদ্যোগ দেখা যায়নি? দীপঙ্করবাবুর জবাব, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিমানবাবু এসেছিলেন। এটা তাঁরই উদ্যোগ। তিনি বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদের বিপদ এবং গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ বাড়ছে। সে ব্যাপারে খুবই প্রাথমিক স্তরে কিছু কথা হয়েছে।”
বৃহত্তম বাম ঐক্যের প্রশ্নে দীপঙ্করবাবু আরও বলেছেন, “এসইউসি এবং মাওবাদীদের একাংশ তৃণমূলের দিকে ছিল। তারা অবস্থান বদলালে তাদের সঙ্গেও ঐক্য হতে পারে।” মাওবাদীরা অস্ত্র না-ছাড়লে কি তা সম্ভব? দীপঙ্করবাবুর জবাব, “আমরা ও রকম শর্ত দিই না। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার অধিকার সকলেরই আছে। হত্যার রাজনীতির আমরা নিন্দা করি। হত্যার ঘটনা ঘটলে তার প্রতিবাদ করব। কিন্তু তার মানে এই নয়, গণ আন্দোলনে তাদের বয়কট করতে হবে।” লিবারেশনের বক্তব্য, সমস্ত বামপন্থী দলই মনে করে ‘সাম্রাজ্যবাদের বিপদ’ এবং গণতন্ত্রের উপর ‘আক্রমণ’-এর মোকাবিলায় বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়া প্রয়োজন। ওই দুই প্রশ্নে যারাই লড়ছে, সকলের সঙ্গেই লিবারেশন আছে এবং থাকবে। এমনকী, সিপিএমও ওই দুই প্রশ্নে যৌথ লড়াইয়ে এলে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু স্থায়ী বৃহত্তর বাম ঐক্যের প্রশ্নে দীপঙ্করবাবু বলেছেন, “গণতন্ত্রের উপর আঘাতের প্রতিবাদে সিপিএমের সঙ্গে এক মিছিলে হাঁটতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু পাকাপাকি বৃহত্তর বাম ঐক্যে আসতে হলে সিপিএমকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-নেতাই কাণ্ড নিয়ে নির্মম আত্মসমালোচনা করে আসতে হবে। কারণ, তারা সরকারে থাকাকালে ওই কাণ্ডগুলিতে সাম্রাজ্যবাদের বিপদ এবং গণতন্ত্রের উপর আঘাত তাদের হাত দিয়েই নেমে এসেছিল। এখন তাদের অবস্থান বদলাল কিনা, তা-ও মানুষ জানতে চান। এ কথা সে দিন বিমানবাবুকেও বলেছি।” দীপঙ্করবাবু আরও বলেন, “বিমানবাবু বলেছেন, রাজ্য সম্মেলনে তাঁরা আত্মসমালোচনা করেছেন। আমরা বলেছি, তাঁদের ওই বিষয়ের দলিল দেখে ভাবব।” জরুরি অবস্থার স্মরণে আগামী ২৬ জুন ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে গণতন্ত্র রক্ষা বিষয়ে কনভেনশনে সিপিএমকে ডাকা হবে কিনা জানতে চাওয়ায় দীপঙ্করবাবু বলেন, “সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য কমিটি।”
লিবারেশনের ছাত্র-যুব সংগঠন দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং শিক্ষা ও কাজের অধিকারের দাবিতে ১ মে থেকে ১০০ দিনের প্রচার-আন্দোলন শুরু করেছে। আগামী ৯ অগস্ট সংসদ অভিযানের মধ্য দিয়ে ওই কর্মসূচি শেষ হবে। অগস্টের শেষে লিবারেশন এবং ‘সারা ভারত বাম সমন্বয়’ ভূমি সংরক্ষণ, এফডিআই বাতিল, গণতন্ত্র রক্ষা-সহ একগুচ্ছ দাবিতে ‘জেল ভরো’ আন্দোলন করবে। |
|
|
|
|
|