|
|
|
|
ভূমি সংস্কার সংশোধনী |
আইন বোঝাতে শিল্পপতিদের সহজপাঠ দেবেন পার্থ |
রঞ্জন সেনগুপ্ত • কলকাতা |
কেউ বলছেন, ‘গুড মুভ’। কারও মতে, ‘গুড সিগন্যাল’। কেউ আবার এর মধ্যে সরকারের ‘সংস্কারমুখী’ মনোভাবেরও ইঙ্গিত দেখেছেন। কিন্তু প্রায় কেউ জানেন না, জমির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত ভূমি সংস্কার আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন হওয়ার ফলে এ রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের কতটা সুবিধা হল। আইন সংশোধনের খুঁটিনাটি জানতে তাই সরকারের কাছ থেকে সহজপাঠ নেওয়ার জন্য শিল্পমন্ত্রীকে ‘কর্মশালা’ করার আবেদন জানিয়েছিলেন বণিকসভার প্রতিনিধিরা। সেখানে এই নিয়ে তাদের মতামতও জানাতে চায় বণিকসভা। শিল্পমন্ত্রী রাজি। ওই কর্মশালা হতে পারে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে।
এ রাজ্যে শিল্পের জন্য জমির সমস্যা যখন বিনিয়োগের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন ভূমি সংস্কার আইনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন এনে শিল্পমহলের কাছে বার্তা দিতে চেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। উল্লেখযোগ্য সংশোধনীগুলো হল:
• আইনের ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনও মালিক (রায়ত) তাঁর জমির পুরো অথবা আংশিক শিল্প পার্ক/হাব/এস্টেট, অর্থতালুক, জৈবপ্রযুক্তি পার্ক ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প নির্মাণের জন্য ‘লিজ’ দিতে পারবেন।
• ৪সি ধারায় বলা হয়েছে, আগে যে সব জায়গায় আইন না মেনে জমির চরিত্র বদল ও ‘কনভারশন’ হয়েছে, সেই সব ক্ষেত্রে ‘জরিমানা’ নিয়ে সরকার তা ‘নিয়মিত’ করে দেবে। এটা অবশ্য এককালীন সুবিধা।
• সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনের ১৪ওয়াই ধারায় বলা হয়েছে, বেশ কিছু শিল্পক্ষেত্রের জন্য সিলিংয়ের বেশি (২৪.২২ একর) জমি রাখার অনুমতি দেবে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে মিল, কারখানা বা ওয়ার্কশপ, পল্ট্রি ফার্ম, ডেয়ারি, চা-বাগান, শিল্পপার্ক-হাব-এস্টেট, অর্থতালুক, বিদ্যুৎ প্রকল্প, পর্যটন শিল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট, ফিল্ম সিটি, জৈবপ্রযুক্তি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বিমানবন্দর, জাহাজ তৈরির যন্ত্রাংশ, তেল ও গ্যাস প্রকল্প, তথ্য ও পরিষেবা প্রযুক্তি, খনিজ সামগ্রী, ওয়্যারহাউসিং ইত্যাদি।
১৪ওয়াই-তে ছাড় পাওয়া শিল্পক্ষেত্রগুলি আইন সংশোধনের পরে ইচ্ছে করলে নিজেদের হেফাজতে
থাকা জমি শিল্পপার্ক-হাব-এস্টেট, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, অর্থতালুক ও জৈবপ্রযুক্তির প্রকল্পের জন্য অন্যকে ‘লিজ’ দিতে পারবে।
সরকারের এই নতুন পদক্ষেপে রাজ্যের শিল্পমহল খুশি। তারা ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন। তবু শিল্পের জমির সমস্যা মেটাতে এই সংশোধন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার বিস্তারিত জানা নেই বণিকসভা থেকে শিল্পমহলের বড় অংশের। অ্যাসোচেমের কো-চেয়ারম্যান সূর্য নন্দী যেমন বলেন, “অনেকে জানেনই না আসলে কী হয়েছে।” মার্চেন্ট চেম্বারের কর্ণধার ও ‘লিঙ্ক’ সংস্থার মালিক দীপক জালানের কথাতেও একই সুর, “জমি নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। বিস্তারিত না জানলে প্রশ্নগুলো থেকেই যাবে।” অম্বুজা গোষ্ঠীর কর্ণধার হর্ষ নেওটিয়া বলেন, “কাগজে পড়েছি। বিস্তারিত জানা নেই।” প্যাটন-এর মালিক সঞ্জয় বুধিয়াও মোটামুটি সেই কথাই বলেছেন।
বুধবার সরকারের তৈরি শিল্প বিষয়ক ‘কোর কমিটি’র বৈঠকে প্রসঙ্গটি তোলেন বণিকসভার প্রতিনিধিরা। দীপকবাবুর কথায়, “আমরাই বলি, একটা ‘ওয়ার্কশপ কাম ওপেন সেশন’ করা হোক, যেখানে খোলাখুলি আলোচনা হবে। মন্ত্রী এই প্রস্তাবে স্বাগত জানিয়েছেন।” সূর্যবাবু জানান, সংশোধনের ফলে সুযোগ অনেক বেড়েছে। কিন্তু তাঁরা ভাল করে সবটা খতিয়ে দেখেননি। ঠিক হয়েছে, প্রত্যেক বণিকসভা সংশোধনীগুলি খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট তৈরি করে তাদের মতামত দেবে। কর্মশালায় সরকারের বক্তব্য বিস্তারিত জানার পাশাপাশি সেই মতামতগুলো নিয়েও আলোচনা হবে। রাজ্যের মন্ত্রী, আমলা। বণিকসভার প্রতিনিধি ছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে শিল্পপতিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
বিনিয়োগকারীরা অবশ্য এই পদক্ষেপের মধ্যে জমি সমস্যা নিয়ে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন। হর্ষ নেওটিয়ার কথায়, “এ রাজ্যে শিল্পের একটি বড় সমস্যা হল জমি না পাওয়া। অন্যটি আইনি বাধায় জমি আটকে থাকার সমস্যা। সংশোধনের ফলে সেই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।” প্যাটনের মালিকের মতে, “এর ফলে সুযোগ অনেক বেড়ে গেল। আশা করা যায় এ বার অনেক বেশি বিনিয়োগ আসবে।” দীপকবাবু বলেন, “এই পদক্ষেপ করার পর মনে হচ্ছে সরকার নমনীয় হয়েছে। এটা ভাল বার্তা যাবে।” |
|
|
|
|
|