জমি জটে আটকে থাকা উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে প্রস্তাবিত কলেজের জন্য ‘স্বেচ্ছায়’ জমি দান করলেন চার গ্রামবাসী।
বৃহস্পতিবার চাঁদপাড়ায় সাব-রেজিস্ট্রার দফতরে অতিরিক্ত সাব-রেজিস্ট্রার বিশ্বজিৎ সাহার উপস্থিতিতে ওই চারজন গ্রামবাসী রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের কাছে নিজেদের জমি দানপত্র করে দেন। এর ফলে প্রস্তাবিত কলেজ তৈরি নিয়ে জমিজট অনেকটাই কেটে গেল বলে দাবি করেছেন গাইঘাটার বিধায়ক ও রাজ্যের ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর।
এ দিন জমি দানপত্রের সময় সেখানে মঞ্জুলকৃষ্ণবাবু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস। এ দিন কলেজ তৈরির জন্য জমি দান করেন ব্রজলাল দেওয়ান, মিনু দাস, পূর্ণিমা দাস ও তারক হালদার। |
সুরজিৎবাবু বলেন, “কলেজ তৈরির জন্য চারজন গ্রামবাসী এ দিন প্রায় ৪ বিঘা জমি দান করেছেন। এ ছাড়া আরও তিনজন গ্রামবাসী জমি দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কলেজের জন্য মোট সাড়ে পাঁচ বিঘা জমি নেওয়া হবে।” জমি দানকারীদের তরফে তারকবাবু বলেন, “আমি ১০ কাটা জমি দান করেছি। মুখ্যমন্ত্রী ঠাকুরনগরে কলেজ তৈরি করতে চেয়েছেন। তাই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই আমরা কলেজের জন্য জমি দান করেছি। ভবিষ্যতে উনি আমাদের জন্য নিশ্চয়ই ভাববেন।” ব্রজবাবু বলেন, “এখানকার ছেলেমেয়েদের দূরদুরান্ত থেকে কলেজের যাতায়াত করতে হয়। এখানে কলেজ তৈরি হলে তাঁদের সুবিধা হবে। সেই কারণেই জমি দান করতে দু’বার ভাবিনি।”
তবে কলেজের উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়েছে, যাঁরা জমি দান করেছেন তাঁদের হাতে সামান্য কিছু অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে। মঞ্জুলকৃষ্ণবাবু ও সুজিৎবাবু বলেন, ‘‘কলেজের জন্য যে ভাবে ওঁরা জমি দান করে এগিয়ে এসেছেন তা দৃষ্টান্তমূলক।”
সুরজিৎবাবু আরও জানান, ঠাকুরনগরে চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ৬ একর ২৬ শতক জমি রয়েছে। ওই জমিতেই প্রস্তাবিত কলেজ তৈরি হওয়ার কথা। ওই জমির মধ্যে একটি পুকুরও রয়েছে। পুকুর বাদ দিয়ে জমির পরিমাণ ৩ একর ৩৯ শতক। কলেজ তৈরির জন্য ১৫ বিঘা জমি প্রয়োজন। তাই বাড়তি জমির দরকার ছিল। ওই চারজন জমি দান করায় সেই প্রয়োজনের অনেকটাই মিটেছে।
যাঁরা জমি দান করেছেন তাঁদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “যাঁরা জমি দান করেছেন তাঁদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। সরকারি চাকরি না হলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে যাতে তাঁদের কর্মসংস্থান হয় সে বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।” প্রস্তাবিত কলেজের নাম মঞ্জুলকৃষ্ণবাবুর বাবা প্রয়াত প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের নামে ‘প্রমথরঞ্জন ঠাকুর মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট কলেজ’ করার জন্য উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে মঞ্জুলকৃষ্ণবাবু জানিয়েছেন। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে কলেজের শিলান্যাসের দিন ঠিক করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীই এর শিলান্যাস করবেন।” তবে কলেজ তৈরি করতে গিয়ে পুকুর বুজিয়ে ফেলা হবে বলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা আপত্তি তোলায় এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করে সুরজিৎবাবু বলেন, “কোনওভাবেই ওই পুকুর বোজানো হবে না।” জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা যে আপত্তি তুলেছেন সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |