শৈশবেই হারিয়ে গিয়েছিল মেয়েটা। নিজের নাম, কোথা থেকে এসেছে, বাবা-মায়ের নাম কিছুই বলতে পারেনি সে। শুধু বলেছিল, ‘‘মায়ের কাছে যাব।’’
১৭ বছর ধরে সেই মেয়ের ঠিকানা বিভিন্ন অনাথ আশ্রম। শেষ সাত বছর ধরে সে থিতু হয়েছে মধ্যমগ্রামের এক অনাথ আশ্রমে। সেখানেই বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়েটির পাশে এসে দাঁড়ালেন ‘রাজপুত্র’। তাঁর পরনে ঘন নীল রঙের স্যুটের সঙ্গে আকাশনীল টাই। রাজপুত্র মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়ে শাড়িতে নকশা তোলার কাজ দেখলেন মন দিয়ে। সব হারানো মেয়েটির তখন মনে হয়েছে, এতদিনের লড়াইটা সফল হল। আনন্দে তখন কেঁপে উঠেছে সে। আর ইংল্যান্ডের ‘ডিউক অফ ইয়র্ক’ প্রিন্স অ্যান্ড্রু তখন মিটিমিটি হাসছেন। |
শুধু সে-ই নয়, বারো বছরের যে মেয়েটি এ দিন ‘শিববন্দনা’র সঙ্গে ভরতনাট্যম নাচল, পিতৃপরিচয় নেই তারও। মা তাকে জানাননি বাবার নাম। সাত বছর বয়সে মা-ই তাকে রেখে যান ওই আশ্রমে। মায়ের স্বপ্ন, মেয়ে ভাল করে নাচ শিখুক। মুগ্ধ রাজপুত্র মেয়ের নাচ দেখে যখন হাততালি দিচ্ছেন, তখন পিছনের সারিতে চোখে আঁচল চেপে উঠে গেলেন মা। তাঁরও লড়াইটাও যে সফল হল।
শুধু এই দু’টি মেয়েই নয়, খুশি আর প্রাপ্তির এই ছবিটা প্রায় একই রকম ওই আশ্রমের প্রায় ৭৫ জন আবাসিকের। প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে দেখে খুশির আলো জ্বলেছে তাঁদের সবার মধ্যে। খুশি প্রিন্সও। তিনি বললেন, “আশা করি, আপনারা সবাই ভাল জীবন কাটাবেন।”
ব্রিটিশ দূতাবাস সূত্রের খবর, প্রিন্স অ্যান্ড্রুর এই সফরের উদ্দেশ্য, এ দেশের সঙ্গে ইংল্যান্ডের সর্ম্পক আরও নিবিড় করে তোলা। প্রিন্স প্রথমে দিল্লি হয়ে নাগাল্যান্ডের কোহিমায় যান। তার পরে কলকাতায় আসেন।
কলকাতার ‘উইমেন্স ইন্টারলিঙ্ক ফাউন্ডেশন’-এর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের সাহায্যপুষ্ট ওই আশ্রমে পাচারচক্রের হাত থেকে নারী ও শিশুদের উদ্ধার করে রাখা হয়। রাজ্যে তাদের ১১টি আশ্রম আছে। এই সব আশ্রমে ওই নারী ও শিশুদের হাতের কাজ ও কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হয়। আশ্রিতদের কর্মশিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ দূতাবাস প্রতি বছরই অর্থ সাহায্য করে থাকে। |