‘তরুণ ব্রিগেড’ এনে উত্তরে দলের হাল ধরলেন গৌতম
গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে বিভক্ত জেলায় তাঁকে সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আলিমুদ্দিনের হস্তক্ষেপে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে এ বার নিজের মতো করে ‘ঘুঁটি’ সাজিয়ে নিলেন গৌতম দেব। জেলা নেতৃত্বে তুলে আনলেন তরুণ-ত্রয়ীকে। সিপিএমের জেলা সমীকরণের বিন্যাসে যাকে গৌতমবাবুর ‘প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা’ এবং অমিতাভ নন্দীর আরও ‘ডানা ছাঁটা’র প্রয়াস হিসাবেই দেখা হচ্ছে!
সম্মেলন-পর্বের পরে নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তৈরি হয়েছে সিপিএমে। তার পরেই এ বার জেলায় জেলায় সম্পাদকমণ্ডলী তৈরির কাজে হাত পড়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির বৈঠক থেকে বৃহস্পতিবার যে নতুন সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে, তাতে নতুন মুখ চার জন। তার মধ্যে তন্ময় ভট্টাচার্য, সোমনাথ ভট্টাচার্য ও পলাশ দাস দলের ‘তরুণ ব্রিগেডের সদস্য’ হিসাবেই পরিচিত। এবং ডিওয়াইএফআই থেকে উঠে-আসা নেতা হিসাবে এঁরা সকলেই প্রাক্তন যুব নেতা গৌতমবাবুর ‘অনুগামী’। এ ছাড়াও সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বাবুল কর। হাবড়া এলাকায় তিনিও হালফিল গৌতমবাবুর শিবিরের নেতা হিসাবেই দলীয় মহলে পরিচিত। জেলা কমিটির এক সদস্যের কথায়, “বৃহত্তর ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এবং বারাসত-বনগাঁ অঞ্চল, দুই ক্ষেত্র থেকেই যাঁরা নেতৃত্বে নতুন এলেন, তাতে দল চালাতে জেলা সম্পাদকেরই সুবিধা হবে।” জেলা সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট গৌতমবাবুর নেতৃত্বাধীন ‘নতুন সিপিএমে’র প্রথম বড় পরীক্ষা হতে চলেছে।
জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর কলেবর ১৯ থেকে কমে ১৮ হয়েছে। পাঁচ জন বাদ গিয়ে চার জন নতুন এসেছেন। যাঁরা বাদ গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পল্টু দাশগুপ্ত, তানিয়া চক্রবর্তী ও মিহির সান্যাল। আনুষ্ঠানিক ভাবে এঁদের ভগ্ন স্বাস্থ্যের কথা দলের কোনও কোনও মহল থেকে বলা হলেও জেলা রাজনীতিতে তাঁরা অমিতাভ নন্দীর শিবিরের অনুগামী বলেই পরিচিত ছিলেন। পল্টুবাবুকে সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে এ দিন জেলা কমিটিতে কিছু প্রশ্নও উঠেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আপত্তি মানা হয়নি। পানিহাটির প্রাক্তন বিধায়ক তানিয়াদেবী রাজ্য সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসাবে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাঁদের জেলায় ‘উপর থেকে’ সম্পাদক বসিয়ে দেওয়ায় তাঁরা ‘দুঃখ’ পেয়েছেন। তাঁর ইঙ্গিত ছিল গৌতমবাবুর প্রতিই। রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অবশ্য সেই রাজ্য সম্মেলনেই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ‘সচেতন ভাবে’ই গৌতমবাবুকে জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল ও দমদম এলাকার দুই নেতা-নেত্রী এবং বারাসত এলাকার এক নেতা ছাড়াও এ বারের সম্পাদকমণ্ডলীতে রাখা হয়নি প্রাক্তন মন্ত্রী রেখা গোস্বামীকে। বাদ গিয়েছেন বাদুড়িয়া এলাকার নেতা শম্ভু বিশ্বাসও। রেখাদেবী এ বার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন। রাজ্য কমিটিরও সদস্য রয়েছেন। এক সঙ্গে তিনটি স্তরের কমিটিতে থাকা যায় না বলে তাঁকে জেলা থেকে ‘অব্যাহতি’ দেওয়া হয়েছে। অমিতাভবাবুর শিবিরের প্রশ্ন, জেলা সম্পাদক গৌতমবাবু নিজেই যদি একসঙ্গে তিনটি কমিটিতে থাকতে পারেন, তা হলে অন্য কেউ পারবেন না কেন? আবার গৌতমবাবুর শিবিরের পক্ষে যুক্তি, পলিটব্যুরোর ‘অনুমোদন’ নিয়েই তিনি জেলা সম্পাদক হয়েছেন। কাজেই জেলা, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে তাঁর ‘বাধা’ নেই।
প্রাক্তন জেলা সম্পাদক অমিতাভ বসু, তড়িৎ তোপদার, মানস মুখোপাধ্যায়, রঞ্জিৎ কুণ্ডু, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, রঞ্জিৎ মিত্রের মতো জেলা সিপিএমের পরিচিত নেতারা নতুন সম্পাদকমণ্ডলীতে বহাল আছেন। রয়েছেন ‘বিতর্কিত’ মজিদ মাস্টারও। অমিতাভবাবু নিজেও আছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-গৌতমবাবুদের হস্তক্ষেপে এ বারের রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়ে অমিতাভবাবু রাজ্য নেতৃত্বের দিকে আঙুল তোলা অব্যাহত রেখেছেন। জেলা নেতৃত্বে গৌতমবাবুর ‘প্রভাব’ বিস্তারের পরে তিনি কী অবস্থান নেন, তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে নতুন কৌতূহল তৈরি হয়েছে! সিপিএমের মধ্যেই একাংশের ধারণা, বিমানবাবুর পরে পরবর্তী রাজ্য সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন গৌতমবাবু। তাঁর নিজের জেলায় দলের সমস্যা তিনি কী ভাবে সামাল দেন, তা প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রীরও পরীক্ষা। আপাতত দলের ‘ঐক্যবদ্ধ’ এবং ‘লড়াকু’ চেহারা তুলে ধরতে পলিটব্যুরোর একাধিক নেতাদের এনে চলতি মাসেই লাগাতার কর্মসূচি নিয়েছেন জেলা সম্পাদক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.