গাঁয়ের গরিব ছেলে ভোলা, লঙ্কা সারাদিন গুলতি হাতে ঘুরে বেড়ায়। পিছনের জঙ্গলে অনেক পাখি রয়েছে, গুলতি দিয়ে একটা পাখি ‘নামাতে’ পারলেই হল। ঠ্যাং ভাঙা, ডানা ভাঙা সেই পাখি হাতে ঝুলিয়ে তারপরে গ্রামের গা ঘেঁসে বড় রাস্তার এক পাশে দাঁড়াতে পারলেই হল। একটা না একটা গাড়ি থামবেই। তারপরে পঞ্চাশ, একশো টাকা রোজগার করতে খুব বেশি সময় লাগে না।
সে দিন একটা বড় স্কুলবাস সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। আহত পাখি নিয়ে সে দিকে ছুটে গেল ভোলা আর লঙ্কা। কিন্তু যা ভেবেছিল, হল তার উল্টো। পাখি কেনা তো দূরের কথা, স্কুলের ছেলেমেয়েরা সেই পাখির অবস্থা দেখে কেঁদে আকুল। সারা দিন তারা সেই পাখির শুশ্রুষা শুরু করল। ভোলা লঙ্কা দেখল, যতটা পরিশ্রম করে পাখি মারতে হয়, ততটাই পরিশ্রম লাগে তাকে সারিয়ে তুলতে। তারপরে বিকেলের দিকে সেই পাখি অনেকটা সেরে উঠল। তখন স্কুলের সেই ছাত্রছাত্রীদের মতো ভোলা, লঙ্কাও খুশি। তারা ঠিক করল, আর পাখি মারবে না।
বীরনগর মালঞ্চ গোষ্ঠীর খুদে অভিনেতাদের ‘জন্মান্তর’ নামে এই নাটকের বিষয় ও তার উপস্থাপনা মন কেড়ে নিল নবদ্বীপের। নবদ্বীপ কালচারাল ফোরাম আয়োজিত নবদ্বীপ সাধারণ গ্রন্থাগার মঞ্চে তিন দিনের শিশু কিশোর নাট্যোৎসবের প্রথম দিনেই উপস্থাপিত হয়েছিল এই নাটকটি। পরিচালক তারক গুহ বলেন, “আমাদের চারপাশে বহু জলা বিলে পরিযায়ী পাখিদের দেখতে পাওয়া যায়। তাদের মারাও হয়। তাই সেই বিষয়টাই নিয়ে আমাদের নাটক।” নাটোৎসবে মোট ১৪টি নাটক অভিনীত হয়েছে। আর বেশিরভাগ নাটকেরই বিষয়বস্তু অভিনব। কোনও নাটকে রয়েছে শিশু মনের আতঙ্ক দূর করা নিয়ে ভাবনা কোথাও বা রয়েছে পড়াশোনার চাপে শৈশব হারিয়ে যাওয়ার বেদনা। বগুলার অন্যজনের ‘আলো’ নাটক তাই যেমন দর্শকদের আকর্ষণ করেছে, তেমনই নবদ্বীপের শিশুতীর্থের ‘শেয়ালদের গপ্পো’ নাটকে পুরোনো বাড়ি ভেঙে নতুন বড় বড় বাড়ি তৈরির সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। বর্ধমানের ইনসাইড আউট নাট্যগোষ্ঠী মঞ্চস্থ করেছে রূপক ধর্মী নাটক ‘টাক ডুমা ডুম’।
এই নাট্যোৎসবে বিবেকানন্দ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন থেকে আধুনিক মন, নানা প্রসঙ্গ এসেছে। |