শিক্ষকের মৃত্যু, অভিযুক্ত ভাড়াটে
তাঁরা তৃণমূলের ‘লোক’। দলের তাবড় ‘নেতা-নেত্রীদের’ সঙ্গে তাঁদের হরবখৎ ওঠাবসা, এমনই দাবি করে গত কয়েক মাস ধরে বিনা ভাড়ায় এক শিক্ষকের বাড়ির একতলা কার্যত দখল করে রেখেছিলেন একটি পরিবার। প্রতিকার চেয়ে বার বার পুলিশ-প্রশাসনের কাছে দরবার করেও ফল মেলেনি বাড়ির মালিক অমিয় চট্ট্যোপাধ্যায়ের। সেই অবসাদেই ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন ওই শিক্ষক।
বুধবার সন্ধেয় নিজের ঘরে অমিয়বাবুর (৫৪) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ভাড়াটেদের ক্রমাগত ‘হুমকিতে’ মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন অমিয়বাবু। শেষমেস সমস্যার কোনও সুরাহা না হওয়ায় আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই কান্দি কালীবাড়ি রোডে অমিয়বাবুর পড়শিরা ক্ষেপে ওঠেন। তাঁর ভাড়াটে অরবিন্দ ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী মধুশ্রীদেবীর উপরে চড়াও হন তাঁরা। গালমন্দ থেকে শুরু করে বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে কিঞ্চিৎ হেনস্তাও করা হয়। অমিয়বাবুর বাড়ির লোকের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দম্পতিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয়। এ দিন সকালে তাঁদের কান্দি আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিনের জেলহাজতের নির্দেশ দেন।
অমিয়বাবুর বাড়ির এক তলায় কিছু দিন ধরে ভাড়া থাকতেন অরবিন্দবাবু। তিনিও পেশায় শিক্ষক। কিন্তু গত নভেম্বর মাস থেকে অরবিন্দবাবু ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন। তা নিয়েই অশান্তির সূত্রপাত। এ ব্যাপারে বেশ কয়েক বার থানা-পুলিশ এমনকী প্রশাসনের কাছে দরবার করেও কোনও সাড়া পাননি অমিয়বাবু। অভিযোগ, ভাড়া চাইতে গেলে পাল্টা হুমকি দিতেন অরবিন্দবাবুর স্ত্রী মধুশ্রীদেবী। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপরে ভাড়া চইতে গেলে অমিয়বাবুর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করারও হুমকি দিয়েছিলেন ওই মহিলা।
অমিয়বাবুর ভাই বিকাশবাবুর অভিযোগ, “ভাড়াটে উচ্ছেদের ব্যাপারে দাদা প্রশাসনের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। মানসিক ভাবে তাই কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন দাদা। সেই কারণেই আত্মহত্যা করেছেন।” অমিয়বাবুর অন্য এক ভাই অসীমবাবু জানান, ওই মহিলা তাঁর দাদাকে এই ধরনের ‘নোংরা’ হুমকি দিতেন। কিছু দিন ধরে তাই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। অমিয়বাবুর মৃত্যুর খবরে পাড়ার লোকজন অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার রাতেই বিক্ষোভ দেখান। রাতেই ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করে পূলিশ। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “অভিযোগ পেয়েই ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে।” আগে এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হল না কেন? পুলিশরে কাছে তার কোনও সদুত্তোর মেলেনি। ভাড়া না পেয়ে, অমিয়বাবু গত ফেব্রুয়ারি মাসে মহকুমাশাসকের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কান্দির মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “এমন তো কতই অভিযোগ হয়। সব কী মনে থাকে!”
কান্দি আদালতের সরকারি আইনজীবী তথা তৃণমূল শহর কংগ্রেসের সভাপতি সুনীল চক্রবর্তী স্থানীয় বাসিন্দা। এ দিন গণ্ডগোলের খবর শুনে তিনি ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকেও হেনস্থা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে কান্দি আদালতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত আইনজীবী সঙ্ঘ। জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি দেবাশিস রায় বলেন, “কান্দিতে শুক্রবার আইনজীবীরা ধমর্ঘট করছেন। জেলার অন্য বার অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ করা হচ্ছে, ধর্মঘট করতে। কারণ আইনজীবীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।” জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বাক্কার সিদ্দিকির বক্তব্য, “কান্দিতে যা ঘটেছে, তা অবশ্যই নিন্দ্যনীয়। তবে আমরা এখনই কোনও ধর্মঘটের পথে যাচ্ছি না।” জেলা তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “কোনও তৃণমূলের নেতার নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি কোনও হুমকি দিয়ে থাকেন, তা কোনওমতেই দল সহ্য করবে না। তবে সুনীলবাবুকে নিগ্রহ করা ঠিক হয়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.