পরিবারের দাবি, তাঁর মৃত্যুর কারণ দুষ্কৃতীদের ধারাল অস্ত্র। যদিও পুলিশের সন্দেহ, বছর বাহান্নর সত্য ঘোষ খুন হয়েছেন বটে। তবে ডাকাতের হাতে নয়।
তাঁকে ভারী কোনও অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করায় মারা গিয়েছেন সত্যবাবু। তবে সে কাজ ‘ডাকাতদের’ কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ নদিয়া জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্রই। তিনি এ দিন কৃষ্ণগঞ্জের হাসপাতাল পাড়ার ওই ঘটনা নিয়ে স্পষ্টই বলেন, “ওই বাড়িতে ডাকাতির কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ডাকাতির ঘটনা সাজানো বলেই মনে হচ্ছে। এই খুনের পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে। মৃতের স্ত্রী, মেয়ে ও জামাইকে আটক করে জেরা করা হচ্ছে।”
|
সত্য ঘোষ। |
ডাকাতি হল কখন? বৃহস্পতিবার সকালে এক পড়শিকে ফোন করেন সত্যবাবুর স্ত্রী রিনাদেবী। জানান, বাড়িতে ডাকাত ঢুকে খুন করে দিয়ে গিয়েছে তাঁর স্বামীকে। তিনি বলেন, “রাতে বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল। দুষ্কৃতীরাই ওঁকে কুপিয়ে মেরেছে।” খবর পেয়ে পড়শিরা এসে দেখেন, ঘরের মধ্যে সতত্যবাবুর রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। আসে পুলিশও। পুলিশ জানায়, মৃতের মাথায় আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। রীনাদেবীর শোওয়ার ঘরের আলমারি খোলা ছিল। তবে গোটা ব্যাপারটাই পুলিশের চোকে বেশ ‘সাজানো’ বলে মনে হচ্ছে।
রিনাদেবী বলেন, “স্বামী মদ খেয়ে অনেক রাতে বাড়ি ফিরত। বুধবার রাত করেই বানি পিরে নিজেই চাবি দিয়ে দরজা খোলেন। রাত দেড়টা নাগাদ পাশের ঘরে ধস্তাধস্তির আওয়াজে আমরা ছুটে যাই। দেখি ঘরে চার-পাঁচ জন অপরিচিত লোক ওঁকে মারছে। আমাদের অন্য ঘরে ঢুকিয়ে ওরা বাইরে থেকে শিকল তুলে দিল। ঘণ্টা দেড়েক পরে ডাকাতরা আমার ঘরে ঢুকে আলমারি খুলে কিছু সোনার গয়না বের করে নেয়। তারা চলে গেলে পাশের ঘরে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন উনি।”
পুলিশ অবশ্য জানায়, মৃতের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও জামাইকে জেরা করে ডাকাতির ঘটনায় সম্পর্কে কিছু ‘অসঙ্গতি’ খুঁজে পেয়েছে। তদন্তকারী অফিসারদের এক জন বলেন, “রিনাদেবী ও তাঁর দুই মেয়ে প্রীতি ঘোষ ও টুম্পা ঘোষের কথায় অসঙ্গতি রয়েছে। পরিকল্পিত ভাবেই খুন করা হয়ে বলে মনে হচ্ছে।” পুলিশের প্রশ্ন, বাড়িতে ঢুকে এক দল দুষ্কৃতী এক জনকে খুন করে পালালো, কিন্তু পড়শিরা কিছু টেরই পেল না কেন? বাড়ির কোনও দরজার তালাই ভাঙা নেই। দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকলো কী করে? বাড়ির সামনে কাদায় কোনও পায়ের দাগও মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। আলমারি খোলা থাকলেও বিশেষ কোনও জিনিসই খোয়া যায়নি।
সত্যবাবুর খুড়তুতো ভাই ও পড়শি অসীত ঘোষও ডাকাতির ঘটনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি এ দিনও ভোরে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। ওদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে কোনও খটকাই লাগেনি। সব স্বাভাবিক ছিল। কান্নার শব্দও তো পেলাম না!” সত্যবাবুর বড় মেয়ে প্রীতি ঘোষ বলেন, “বাবাকে ও ভাবে পড়ে থাকতে দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কান্নাকাটি করার অবস্থা ছিল না।” কিন্তু কেনই বা তাঁকে খুন করা হল? বাড়ির লোক তা আড়াল করতেই বা চাইছেন কেন? তার উত্তরই খুজছে পুলিশ। |