নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
গত তিন দিনে ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচাবাড়ি। প্রবল ঝড়ে তার ছিঁড়ে গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুৎহীন। গাছ পড়ে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারকেশ্বর ব্লকের ২টি পঞ্চায়েতের ১০-১২টি গ্রামে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকটাই বেশি। বোরো ধান ওঠার মুখে ঝড়বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়েছে প্রচুর। ঝড়জলের দাপট সহ্য করে পাকা ধান কতটা ঘরে তোলা যাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে নজর রাখা হচ্ছে পরিস্থিতির দিকে। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব-নিকেশের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। টানা বেশ কয়েক দিন ভ্যাপসা গরমের পরে গত দু’দিন ধরে কালবৈশাখীতে তছনছ হয়ে গিয়েছে হুগলির আরামবাগ এবং চন্দননগর মহকুমার বেশ কিছু গ্রাম। ঝড়বৃষ্টিতে মাটির বাড়ি যেমন ভেঙে পড়েছে, তেমনই উড়ে গিয়েছে টিনের চাল। গাছ ভেঙে পড়ে টালি এবং অ্যাসবেসটস ভেঙেছে। বৃষ্টি মানুষকে টানা গরম থেকে সাময়িক স্বস্তি দিলেও ঝড়বৃষ্টিতে হুগলির গ্রামগুলিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নিছক কম নয়। মাথায় হাত পড়েছে চাষিদেরও।
ঝড়ে বসত বাড়ির যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনই অনেক জায়গাতেই ফসলের ক্ষতিও হয়েছে মারাত্মক। চলতি মরসুমে আলুর দাম চাষির মুখে হাসি ফোটালেও কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ফসল নষ্ট হওয়ায় চাষির কপালে ফের দুশ্চিন্তা। ঝড়ের পাশাপাশি শিলাবৃষ্টিতে পাট এবং তিলের ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে পটল, ঢ্যাঁড়সের মতো গরমের সব্জিরও ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি বাজারে কতটা প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার।
তারকেশ্বর ব্লকের চাঁপাডাঙ্গা পঞ্চায়েতের বিনগ্রাম, সাহাচক, বেড়মূল, নাইটা-মালপাহাড়পুর পঞ্চায়েতের তাজপুর, জগন্নাথপুর, রামচন্দ্রপুরে ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। পিয়াসারার বাসিন্দা শ্যামাপদ মোদক জানান, মঙ্গলবারের ঝড়ে তাঁর বাড়ির চালে গাছ পড়ে যায়। রামচন্দ্রপুরের শ্রীকান্ত সাঁতরা ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর পেয়েছিলেন। ঝড়ে সেই ঘরের চাল উড়ে আপাতত তিনি গৃহহীন। এ সবের পাশাপাশি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় নাকাল হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি ক্ষতিয়ে দেখতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলিতে যান রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক রচপাল সিংহ। তারকেশ্বরের বিডিও সুমন মজুমদার বলেন, “প্রশাসনের তরফে গ্রামে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অনেক জায়গায় ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি বিধায়কের তহবিল থেকেও প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হচ্ছে।” হরিপাল ব্লকের আশুতোষ পঞ্চায়েতের গোপীনগর, খামারচণ্ডী, দুলেপাড়া, সহদেব পঞ্চায়েতের রঘুনাথপুর, কালুবাটি, নালিকুল পশ্চিম পঞ্চায়েতের হামিরাগাছি, মালিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে অনেক কাঁচা বাড়ি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সব জায়গাতেই বোরো ধানে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঝড়ের দাপটে বিদ্যুতের তার ছিড়ে রঘুনাথপুর গ্রাম অন্ধকারে ডুবে যায়। বৃহস্পতিবার আরামবাগেও প্রবল ঝড় হয়। দু’-একটি জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায়। ফলে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এলাকা। নাকাল হন মানুষ। |