উত্তর-পূর্বের দুই তরুণ-তরুণীর মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলন আরও দানা বাঁধছে। উঠেছে সিবিআই তদন্ত ও পৃথক আইনের দাবি। কেবল মেঘালয় বা মণিপুর নয়, মিজোরাম, অসম, নাগাল্যান্ড-সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত ডানা সিলভা সাংমা ও রির্চাড লোইতামের মৃত্যুর ন্যায়বিচারের দাবিতে জোটবদ্ধ হয়েছে। রিচার্ডের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। আন্দোলনের চাপে, ‘পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু’-র মামলাকে ‘সংশোধন’ করে হত্যার মামলা রুজু করেছে কর্নাটক পুলিশ। আপাতদৃষ্টিতে পুলিশের খাতায় দু’টি ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’র মামলা এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ হয়ে দিল্লিতে এমন ঝড় তুলবে তা পুলিশ বা প্রশাসন ভাবতেই পারেনি।
এরই মধ্যে মণিপুরের আরও একটি মেয়ে গুড়গাঁওয়ে শ্লীলতাহানি ও পুলিশি অসহযোগিতার শিকার হওয়ায় উত্তর-পূর্বের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। ২৩ বছরের মেয়েটি একটি শপিং মলের কর্মী। তাঁর অভিযোগ, বুধবার ভোরে তাঁর পাশের ফ্ল্যাটের এক যুবক জোর করে তাঁর ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। প্রথমে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ অভিযুক্তকে আটকও করে। ওই যুবতীর অভিযোগ, পরে অভিযুক্ত যুবককে ছেড়ে দিয়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা তাঁকে হেনস্থা করতে শুরু করে। তাঁর চরিত্র, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে লাগাতার জেরা চালায় তারা। পুলিশের প্রশ্নে দিশেহারা ওই যুবতী নর্থ ইস্ট সাপোর্ট সেন্টার ও হেল্পলাইনের দ্বারস্থ হন। হেল্পলাইনের মুখপাত্র মধু চন্দ্র বলেন, “মেয়েটি গতকালের ঘটনা ও পুলিশের ব্যবহারে এতটাই আতঙ্কে রয়েছে যে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে চাইছে। চেহারা বা ভাষাগত ব্যবধানের জন্য ফের একটি মেয়ের সঙ্গে সভ্য সমাজ ও আইন রক্ষকদের এমন ব্যবহার দুর্ভাগ্যজনক। গুড়গাঁওয়ের ডিএসপি (অপরাধ) মহেশ্বর দয়াল, মেয়েটিকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন।
উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ‘মূল ভূখণ্ড’-এর মানুষের একাংশের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ব্যবহারের প্রতিবাদে অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিল করেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। যার নেতৃত্বে ছিলেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমার মেয়ে, মিয়ানি। মিয়ানি বলেন, “শ্রেণীকক্ষে মাত্র ১৯ জন ছাত্রী ছিলেন। ডানা প্রথম সারিতে বসে লিখছিল। তার পক্ষে দেখে লেখা সম্ভব? সে টুকছিল তার প্রমাণও মেলেনি। কেবল মোবাইল অন থাকার অপরাধে এতবড় গুরুদণ্ড!” এ দিকে, দেশজুড়ে আন্দোলনের চাপে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ডি সদানন্দ গৌড়া পুলিশকে রিচার্ডের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করার আদেশ দিয়েছেন। রিচার্ডের মৃত্যুর কারণ প্রথমে ‘পথ দুর্ঘটনা’ বললেও শেষ অবধি ছাত্রাবাসে রিচার্ডকে মারধরের ঘটনার উপরে ভিত্তি করে হত্যার মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, দুই অভিযুক্ত ছাত্র বিশাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৈয়দ আসফাল আলিকে আটক করা হয়েছে। ফরেনসিক ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে তাদের গ্রেফতার করা যাবে। |