ঝাড়খণ্ডে রাজ্যসভা নির্বাচনে সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়ার পরাজয়ের পর বিজেপিতে আরও একঘরে হয়ে পড়লেন সুষমা স্বরাজ।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, শিবু সোরেনের ‘অনুগত’ ঝাড়খণ্ডের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা গোড়া থেকেই দলকে বলে আসছিলেন, তাঁর সরকারের স্থায়িত্বকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়ে অহলুওয়ালিয়াকে জিতিয়ে আনা সম্ভব নয়। বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীও এই বাস্তব সত্যটি বিলক্ষণ জানতেন। কিন্তু সুষমা স্বরাজ অহলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী করানোর জন্য যে ভাবে জেদ ধরেছিলেন, চাপের মুখে পড়ে গডকড়ী তা মেনে নেন। তবে জেএমএম ও তাদের সহযোগী আজসু-র মনোভাব বুঝে গডকড়ী আগেই জানতেন, অহলুওয়ালিয়াকে জেতানো সহজ নয়। আজ বিজেপি প্রার্থীর পরাজয়ের পরে ক্ষুব্ধ গডকড়ী পরোক্ষে বার্তা দিতে সক্ষম হলেন সুষমাকে।
এমনিতেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে দলের কৌশল আগ বাড়িয়ে সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়ায় অরুণ জেটলি, নিতিন গডকড়ীরা সুষমার উপর বেজায় চটে রয়েছেন। দলীয় স্তরে উষ্মা প্রকাশ করেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণীও। জেটলি-গডকড়ীরা মনে করেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সনিয়া গাঁধীর মতোই ধাপে ধাপে এগোলে ভবিষ্যতে অনেক বেশি রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যেত। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের জোটের হাত শক্ত করার পাশাপাশি এনডিএ-র বাইরের দলগুলিকে সুকৌশলে সঙ্গে নেওয়া সম্ভব ছিল। লোকসভা ভোটের আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে বৃহত্তর এনডিএ গঠন তো করা যেতই, ইউপিএ-র শরিক দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব রচনাও করা যেত। কিন্তু সুষমার মন্তব্যে ইউপিএ-তে ফাটল ধরানো তো দূরস্থান, উল্টে এনডিএ-র মধ্যেই চিড় ধরতে শুরু করল!
এই পরিস্থিতিতেই অহলুওয়ালিয়ার পরাজয়কে কেন্দ্র করে সুষমাকে চেপে ধরার আর একটি সুযোগ পেলেন গডকড়ীরা। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা সফরেও সুষমা দিল্লিতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন, যাতে অহলুওয়ালিয়ার জেতার পথ প্রশস্ত হয়। সুষমার দাবি মেনেই তাঁর ঘনিষ্ঠ দলের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত কুমারকে রাঁচিতে পাঠানো হয় পর্যবেক্ষক করে। কিন্তু গডকড়ী শিবিরের এক নেতার কথায়, “ঝাড়খণ্ডে যা ভবিতব্য ছিল, তা-ই হয়েছে। সুষমা স্বরাজ ছাড়া সেটি সকলেই বুঝেছিলেন। কিন্তু তাঁর জোরাজুরিতে প্রার্থী দিতে গিয়ে আজ গোটা দলেরই ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়ল।”
এ দিন দুপুরের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, অহলুওয়ালিয়াকে জেতানো আর সম্ভব নয়। এর পর থেকে সুষমাও আর কারও সঙ্গে কথা বলেননি। দলে সুষমা-বিরোধী এক নেতার মন্তব্য, “এর আগে সিভিসি নিয়োগ নিয়ে যখন গোটা বিজেপি নেতৃত্ব মনমোহন সিংহের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তখন ট্যুইটারে আগ বাড়িয়ে সুষমা মন্তব্য করেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিবাদের অধ্যায় সমাপ্ত’!” ওই নেতা জানান, তখনও গডকড়ী প্রকাশ্যেই সুষমাকে একহাত নিয়েছিলেন। তার পরে দলীয় বিষয়ে ঘনঘন ট্যুইটারে নিজের মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় সুষমার থেকে।
গডকড়ী-বিরোধী গোষ্ঠীর এক নেতার কথায়, “উত্তরপ্রদেশে বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে দলে আনা, অংশুমান মিশ্রকে টিকিট দেওয়ার মতো নানান বিষয়ে বিজেপি সভাপতিকে একযোগে কোণঠাসা করার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু একের পর এক ‘ভুল’ করে সুষমা সেই সুযোগ নিজের অজান্তেই ভেস্তে দিলেন।” |