পুরনো অভ্যাস ছাড়ুন, বর্তমানকে বললেন প্রাক্তন
ক জনের কোঝিকোড়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ছিলেন না।
এক জনের কোঝিকোড় যাওয়ার কথা ছিল। এবং পুরোদস্তুর ছিলেন।
তৃতীয় জনের সেখানে থাকার প্রশ্ন ছিল না। ছিলেনও না।
তবু সিপিএমের কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসই যোগসূত্র গড়ে দিল তিন পুরনো সহকর্মীর। প্রথম দু’জন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য। আর তৃতীয় জন এক দশক আগে সিপিএম ছেড়েছেন। তবু তিনি সৈফুদ্দিন চৌধুরী বামপন্থী এবং মার্ক্সবাদের ফলিত চর্চা করেছেন বলেই সিপিএমের রাজনৈতিক এবং মতাদর্শগত অবস্থানের প্রশ্নে তাঁর মতামত এখনও ‘গ্রহণযোগ্যতা’ পায়। সিপিএমের ভিতরে। বাইরেও।
ক্যান্সারের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য বছরের অধিকাংশ সময়ই সফি এখন দিল্লির বাসিন্দা। সেখানে বসেই সিপিএমের সাম্প্রতিক পার্টি কংগ্রেসের আলোচনার খোঁজখবর রেখেছেন। রাজনৈতিক এবং মতাদর্শগত দলিল আনিয়ে পড়েছেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মতামত এবং প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, তার কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্যসভা টিভি-র এক অনুষ্ঠানে সফি মুখোমুখি হয়েছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরির। যিনি এ বারের পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত মতাদর্শগত দলিলের খসড়া করেছিলেন। সিপিএমের বর্তমান নেতার কাছে প্রাক্তন সাংসদ সফির প্রশ্ন ছিল, “এত বিভ্রান্তি কেন সিপিএমে? নতুন বাস্তবতাকে দূর ছাই করতেও পারা যাচ্ছে না। আবার পুরনো চিন্তার মোহও কাটছে না। এই দুইয়ের মাঝে আটকে গিয়েছে কেন সিপিএম?”

সীতারাম ইয়েচুরি

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

সৈফুদ্দিন চৌধুরী
ইয়েচুরি প্রাক্তন সহকর্মীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সিপিএম পাল্টাচ্ছে। বহুত্ববাদে তারা সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করছে। সেই মতো দলিলে পরিবর্তনও আনা হয়েছে। কিন্তু প্রাক্তনের মতে, সিপিএম সত্যিই বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে বিশ্বাস করছে, এতটা ‘বিশ্বাস’ তাদের করা যাচ্ছে না! সিপিএমের মতাদর্শগত দলিল এবং চিন্তাভাবনা বিশ্লেষণ করে ‘প্রাক্তন’ সফির প্রশ্ন, ‘বুর্জোয়া’রা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে গণতন্ত্র খতম করছে। তাকে পরাজিত করে আমি গণতন্ত্রকেই কবরে পাঠাব এই নীতি কী করে চলতে পারে? ‘বর্তমান’ আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন, তা নয়। বহুত্ববাদী চিন্তাকে এখনকার সিপিএম কোনও ভাবেই অস্বীকার করছে না। অনেক দিন পর প্রাক্তন সহকর্মীর সঙ্গে আলাপচারিতায় মুখোমুখি কথাটা সফি বলেননি। কিন্তু মনে মনে তাঁর ধন্দ রয়েই গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বা রাষ্ট্রে ক্ষমতা পেলে এ সব কথা সিপিএমের মনে থাকবে তো? যে সংশয় সিপিএমের বাইরে অজস্র মনে আছে!
এর পরের ঘটনা কলকাতায়। কয়েক দিনের জন্য শহরে থাকাকালীনই তাঁর যোগাযোগ হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে। পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের পর সফি তাঁকে বলেছেন, ভাল থাকুন। নতুন চিন্তা মানুষের সামনে উপস্থাপিত করুন। ব্যক্তিগত ভাবে সফি মনে করেন, এই সিপিএমে নতুন ভাবনাচিন্তা নিয়ে আসার মানুষ বুদ্ধবাবুই। তাই সুস্থ থেকে তাঁর সক্রিয়তা দেখতে চেয়েছেন।
কমিউনিস্ট পার্টির রেওয়াজ অনুযায়ী, কেউ দল ছেড়ে দিলে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখা চলে না। সফি কি তবে ব্যতিক্রম? ঘনিষ্ঠ মহলে সফি বলে থাকেন, “আমায় অনেকেই এখনও সিপিএম ভাবে! ওঁরাও (সিপিএম নেতৃত্ব) হয়তো ভাবেন। খোঁজখবর নেন। কমিউনিস্ট পার্টি নীতি আর আদর্শের উপরেই তৈরি। আমি তো নীতির প্রশ্ন তুলেই দল ছেড়েছিলাম। তাই হয়তো সুতোটা ছেঁড়েনি!”
ছেঁড়েনি বলেই সিপিএমের সঙ্কট এবং বিভ্রান্তি নিয়ে মতামত দিতে এখনও কোথাও ‘অধিকার বোধ’ কাজ করে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্যের। তাঁর দল পিডিএসের মুখপত্রে সফি প্রশ্ন তুলেছেন, পার্টি কংগ্রেসের মতাদর্শগত দলিলে সংসদীয় ও সংসদ-অতিরিক্ত (এক্সট্রা পার্লামেন্টারি) যে সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে, তার অর্থ কী? তাঁর মতে, ‘বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে সংসদে যাওয়া আর একই সঙ্গে মানুষকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা একেবারে ন্যায্য। এই সংগ্রামকে গণসংগ্রাম বলা যেতে পারে। কিন্তু সংসদ-অতিরিক্ত সংগ্রামের কী অর্থ? এই কথাটাকে সংসদ-বহির্ভূত সংগ্রাম বলা হয়। এই আখ্যা ভুল’। একই ভাবে সিপিএমের রাজনৈতিক অবস্থানের প্রশ্নে তাঁর মত, বিজেপি এবং কংগ্রেসের বিপরীতে বাম-গণতান্ত্রিক জোট গড়ার চেষ্টায় কোনও ভুল নেই। কিন্তু বিজেপি-র মতো ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’কে কংগ্রেসের ‘সমান বিপদ’ বলার কী প্রয়োজন ছিল? সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঠেকাতে নিজেদের জন্য পথ খুলে রাখতে কী অসুবিধা ছিল?
আরও অনেকের মতো উত্তর খুঁজছেন সিপিএমের প্রাক্তন। কারও নাম না-করেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সফি লিখেছেন, নতুন চিন্তার কথা বলতে গিয়ে সিপিএমের এক শীর্ষ নেতাকে তাঁর অনুরোধ ছিল, সিগারেটটা ছেড়ে দিন। উত্তর এসেছে, আর ছাড়তে পারব না! ‘কঠিন অভ্যেস’!
জবাব পেয়ে গিয়েছেন সফি!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.