এত দিন নতুন সিগন্যাল ব্যবস্থায় বারবার আটকে যাচ্ছিল মেট্রো। এ বার যান্ত্রিক গোলমালে ট্রেন থামলই না প্ল্যাটফর্মে। ফলে প্রশ্ন উঠল মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ নামার জন্য দরজার কাছে চলে এসেছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু নির্ধারিত গীতাঞ্জলি স্টেশনে না থেমে হু হু করে বেরিয়ে গেল ট্রেন। চিৎকার করে উঠলেন দমদমগামী ওই ট্রেনটির যাত্রীরা। কেউ কেউ অ্যালার্মের চেনও টানতে গেলেন। চালকের যখন টনক নড়ল, ততক্ষণে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে অনেকটাই বেরিয়ে গিয়েছে ট্রেনটি।
খবর গেল কন্ট্রোলে। ঠিক হল, ট্রেনটিকে ফিরিয়ে আনা হবে স্টেশনে। বেশ কিছুক্ষণ পরে ট্রেনটি গীতাঞ্জলিতে ফিরিয়ে এনে নিরাপত্তার জন্য যাত্রীদের নামিয়ে দিলেন কর্তৃপক্ষ। খালি ট্রেনটি পাঠানো হল কবি সুভাষ স্টেশনে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় দেড় ঘণ্টা ব্যাহত হয় মেট্রো চলাচল।
মেট্রো সূত্রে খবর, ঘটনাটি বিকেলে হওয়ায় সমস্ত স্টেশনেই অফিস-ফেরত যাত্রীরা তখন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আচমকা পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাঁদের। কিন্তু কী কারণে এমন ঘটল, তা জানাতে পারেননি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেনারেল ম্যানেজার পেরি ভাস্কর মূর্তি। তার পরেই জানা যাবে, ঠিক কী ঘটেছে।”
তবে রেলের কর্তারা জানাচ্ছেন, ট্রেনটি সিগন্যাল উপেক্ষা করে থাকলে অথবা ট্রেনের ব্রেক ফেল করলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া, সিগন্যালের ত্রুটি কিংবা ট্রেনচালকের মাস্টার কন্ট্রোলে গোলমালও এই ঘটনার কারণ হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে চালকের মাস্টার কন্ট্রোলেরই গোলমাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর। তাঁর কথায়, “গীতাঞ্জলি স্টেশনে এমনিতেই ট্রেন থামার কথা। ফলে সিগন্যাল ভুল হলেও চালক ট্রেনটি থামাতেন। তা ছাড়া, বিকেলে তাঁর ঘুমিয়েও পড়ার কথা নয়। ফলে এই সমস্যার উৎপত্তি ট্রেনের মাস্টার কন্ট্রোল থেকেই বলে মনে হয়।”
মেট্রো সূত্রে খবর, এই ঘটনার জেরে এ দিন প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রেন চলাচলে সমস্যা হয়েছে। তবে ওই সময়ে দমদম থেকে মহানায়ক উত্তমকুমার পর্যন্ত ট্রেন চালানো হয়েছে। মহানায়ক উত্তমকুমারের পরে আপ ও ডাউন লাইনের বাকি পথে ট্রেন বন্ধ ছিল। সাড়ে পাঁচটার পরে ফের স্বাভাবিক হয় পরিষেবা।
এ দিনের ঘটনার পরে ফের প্রশ্ন উঠেছে মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। অভিযোগ, এমনিতেই মেট্রোর বেশির ভাগ রেক বহু পুরনো। তার মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথ না হলে সাধারণের ভোগান্তির অন্ত থাকে না। এ দিন ফের তা প্রমাণ হল বলে মনে করছেন বহু যাত্রী। এ ব্যাপারে মেট্রো কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সম্প্রতি বারো কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোয় নতুন সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ মে মাস থেকে পাঁচ মিনিট অন্তর মেট্রো চলবে বলেও জানিয়েছিলেন। রেলমন্ত্রী মুকুল রায় আরও এক ধাপ এগিয়ে সে ব্যবধান চার মিনিট করার কথা বলেন। কিন্তু এখনও আগের মতো ৬ মিনিট অন্তরই চলছে ট্রেন। তবে নতুন ব্যবস্থায় যাত্রীদের কি আদৌ কোনও সুবিধা হয়েছে, এ প্রশ্ন তুললেন বহু যাত্রীই। তাঁদের আরও বক্তব্য, ১২ কোটি দিয়ে নয়া সিগন্যালের বদলে আগে অন্তত একটি নতুন রেক আনলেও যাত্রীদের অনেকটা সুবিধা হত। |