মাস পয়লায় বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষকেরা |
অরুণ মুখোপাধ্যায় • সিউড়ি |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা সত্ত্বেও বীরভূম জেলার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, জুনিয়র ও হাইমাদ্রাসা স্কুলের শিক্ষকেরা মাস পয়লায় বেতন পাচ্ছেন না। পূর্বতন বাম সরকারের আমলের মতোই এখনও স্কুল শিক্ষকদের বেতন পেতে ৭-১৬ তারিখ পর্যন্ত গড়িয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের অভিযোগ।
ভারপ্রাপ্ত জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “স্থায়ী জেলা স্কুল পরিদর্শক নেই। কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু পদ্ধতিগত সমস্যাও রয়েছে। তাই এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের মাসের এক তারিখে বেতন দেওয়া যাচ্ছে না।”
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে ঘোষণা করেন, শিক্ষকদের মাস পয়লায় বেতন হবে। এই খবরে ডান-বাম শিক্ষক মহলে খুশির হাওয়া বয়ে যায়। কয়েকটি জেলায় শিক্ষকদের ইতিমধ্যেই মাস পয়লায় বেতন দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বীরভূম জেলার শিক্ষকরা এখনও সেই সুবিধা পাননি। কংগ্রেসের শিক্ষক সংগঠন ডব্লউবিটিএ’র জেলা সম্পাদক অধীর দাসের অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রীর আশারবাণী শুনে জেলার প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী তড়িঘড়ি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ‘জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট’ খোলেন। কিন্তু সেই অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা জমা পড়েনি। তার বদলে সাবেক নিয়মেই ট্রেজারির মাধ্যমে বেতন হচ্ছে। ফলে আগের মতোই এখনও শিক্ষকদের বেতন পেতে মাসের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে।” তাঁর আশঙ্কা, অ্যাকাউন্ট গুলি চালু না হওয়ায় এ বার বোধহয় বাতিল হয়ে যাবে।
সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক সমরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “মুখ্যমন্ত্রী তো ঘোষণা করেছিলেন মাস পয়লায় শিক্ষকদের বেতন দেবেন। কিন্তু এই জেলায় তা আর হল কই? জেলা বিদ্যালয় স্কুল পরিদর্শককে জানিয়েও কাজ হয়নি।” সম্প্রতি বোলপুরে তৃণমূল শিক্ষা সেলের একটি আলোচনা সভাতেও এ নিয়ে কথা ওঠে। তবে তৃণমূল শিক্ষা সেলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা বোলপুরের বাসিন্দা দেবব্রত সরকারের দাবি, “ব্যাঙ্কের গাফিলতির জন্য মাস পয়লায় শিক্ষকদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। তবে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” যদিও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলি তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মানতে চাননি। ক্ষুদ্ধ শিক্ষকরা জানিয়েছেন, অন্য জেলার শিক্ষকরা মাস পয়লায় বেতন পাচ্ছেন। অথচ বেতন পেতে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।
সমস্যা কোথায়? বীরভূম জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলায় নানা কারণে বেশ কয়েক মাস ধরে স্থায়ী ভাবে জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নেই। এ ছাড়া সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের পাঁচটি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। কর্মীর অভাবও রয়েছে। মাস পয়লায় শিক্ষকদের বেতন চালু হওয়া একটি জেলার আধিকারিক জানান, প্রতি মাসের গোড়ায় স্কুলগুলি শিক্ষকদের বেতনের ‘রিক্যুইজেশন’ জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে জমা দেন। কর্মীরা মাসের ২০ তারিখের মধ্যে তা যাচাই করে নেন। ইতিমধ্যে ট্রেজারি থেকে শিক্ষকদের বেতনের টাকা জেলা শিক্ষা দফতরের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যায়। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক শিক্ষকদের ‘জিরো ব্যালান্সের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে’ বেতনের টাকা জমা দেওয়ার জন্য জেলার লিড ব্যাঙ্কে ‘চেক’ জমা দেন। সেখান থেকে মাসের ১ তারিখে ইসিএসের (ইলেকট্রনিক ক্লিয়ারিং সিস্টেম) মাধ্যমে শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে যায়। ওই আধিকারিক বলেন, “স্কুলগুলি থেকে ঠিক সময়ে বেতনের রিক্যুইজেশন চলে এলে এবং স্কুল পরিদর্শকের অফিসের কর্মীরা সঠিক সময়ে যাচাই করলে শিক্ষকদের মাসের ১ তারিখে বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।”
ভারপ্রাপ্ত জেলা স্কুল পরিদর্শক সন্তোষবাবু বলেন, “কয়েক মাস আগে আমি অস্থায়ী ভাবে জেলা স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্ব পেয়েছি। সমস্যাগুলি মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” |