বিদ্যুৎ থেকেও লণ্ঠনই ভরসা বনশঙ্কায় |
গ্রামগুলিতে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। গ্রাহকরা সময় মতো বিদ্যুৎ বিলও মেটান। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগের উপযুক্ত পরিষেবা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। বেশিরভাগ সময় জুড়েই ভোল্টেজ। যার ফলে তাতে বাল্বের ফিলামেন্টটুকুই কেবল জ্বলে। বিদ্যুৎ পরিষেবার এমন বেহাল অবস্থায় কার্যত ক্ষুব্ধ সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের বনশঙ্কা পঞ্চায়েত এলাকার তাহালা, বাশঙ্কা, কোয়েলা গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসা এই সমস্যা মেটাতে বহুবার সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করেও কোনও কাজ হয়নি। এই অবস্থায় তাঁদের একটাই জিজ্ঞাসা, স্বাভাবিক পরিষেবাটুকুও কি তাঁরা আশা করতে পারেন না? |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনশঙ্কা পঞ্চায়েত এলাকার তাহালা, বাশঙ্কা, বাশঙ্কা দাসপাড়া ও কোয়েলা গ্রামগুলিতে প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষের বাস। এদের মধ্যে তাহালা গ্রামে বনশঙ্কা পঞ্চায়েত, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে। কিন্তু সঠিক ভোল্টেজের অভাবে দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি অন্যান্য পরিষেবাগুলিও বিঘ্নিত হয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় মহম্মদ জাকির হোসেন, মহম্মদ রফিকুল আলম, দিবাকর দাসদের অভিযোগ, “আমাদের অঞ্চলে ভোল্টেজের যা অবস্থা, তাতে বাল্বের পাশাপাশি আমাদের মোমবাতি, লণ্ঠনও জ্বালাতে হয়। এ রকম বিদ্যুৎ পরিষেবার জন্য ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষতি তো হচ্ছেই। সেই সঙ্গে রান্নাবান্না করা, টিভি দেখার মত দৈনন্দিন কাজগুলিও বিঘ্নিত হয়।” এলাকায় কেউ কেউ পয়সা খরচ করে ভোল্টেজ স্টেবিলাইজার কিনে অবস্থা কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তি স্বাভাবিক ভাবেই তার সংখ্যা খুবই কম। সকলের পক্ষে ওই যন্ত্র কেনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, চাষের কাজে যুক্তদের অভিযোগ, লো ভোল্টেজের কারণে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য সাবমার্সিবল পাম্প চালানো যায় না। ফলে প্রয়োজনের সময় জমিতে জল গিতে না পেরে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। সম্প্রতি লো ভোল্টেজের সমস্যা মেটাতে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ট্রান্সফরমার লাগানো হয়েছে। যদিও বাসিন্দাদের দাবি, তাতেও কাজ হয়নি। বিদ্যুৎ পুরিষেবার বেহাল দশার কোনও পরিবর্তন হয়নি।
বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতা মেনে নিয়েছেন স্থানীয় বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান খুরদা টুডু। তিনি জানিয়েছেন, লো ভোল্টেজে কাজ করতে অসুবিধা হয় পঞ্চায়েত দফতরেও। তবে সমস্যা মেটাতে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সে অর্থে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য বিদ্যুত বন্টন বিভাগের পাড়ুই সাবস্টেশন থেকে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। মূলত দু’টি কারণে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এক, এই সময় অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য এলাকায় প্রচুর সাব-মার্সিবল পাম্প চলে। সেই জন্য ভোল্টেজের সমস্যা প্রকট হয়। অন্যদিকে রয়েছে, পাড়ুই সাবস্টেশনের উপর অতিরিক্ত চাপ। পাড়ুই সাব-স্টেশনের চাপ মেটাতে সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের পুরন্দরপুরে একটি নতুন সাবস্টেশন তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎবন্টন দফতরের দাবি, ওই সাব-স্টেশন তৈরি হলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে। এ দিকে বিদ্যুত বন্টন বিভাগের জেলা আধিকারিক কৃষ্ণকান্ত মিশ্র বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
নতুন সাবস্টেশন তৈরি হয়ে কবে পুরন্দরপুর থেকে বনশঙ্কা পঞ্চায়েত এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হবে সেই আশায় দিন গুনছেন এলাকাবাসী।
|