|
|
|
|
লড়াকু বৌদি, দাদা ঠাঁইহারা |
আসছে পুরভোট। ফিরছে রাজনীতির লড়াই। কিন্তু কেমন আছে দুর্গাপুর?
ওয়ার্ডে ঘুরে-ঘুরে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। আজ ওয়ার্ড ২৯ ও ৩০।
সুব্রত সীট |
‘দাদা-বৌদির হোটেল।’
বাঙালির পা পড়েছে, অথচ এ হেন সাইনবোর্ড চোখে পড়েনি, এমন জায়গা হাতে গুনে বলা যায়। সে হরিদ্বার হোক বা অমরকণ্টক ‘দাদা-বৌদি’ বললেই যেন স্নেহের ফোড়ন দেওয়া গুণমানের গ্যারান্টি।
আর দাদা-বৌদির ওয়ার্ড?
সে বোধহয় আছে শুধু দুর্গাপুরেই। একটি ওয়ার্ড নয়, পাশাপাশি একজোড়া। ২৯ নম্বরে বৌদি এক বারের কাউন্সিলর, ৩০ নম্বরে দাদা তিন বারের। গত বার দুর্গাপুর পুরসভায় যে তিন ওয়ার্ডে ঘাসফুল ফুটেছিল, তার এক জোড়া এই দম্পতিরই দখলে। তবে ‘গুণমানের গ্যারান্টি’ কতটা মিলেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে ‘দাদা’র ভবিষ্যৎ নিয়েও।
‘নোটিফায়েড এরিয়া’ থেকে দুর্গাপুর পুরসভা হয় ১৯৯৬ সালে। পরের বছর প্রথম নির্বাচন। ৩০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হন বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। ২০০১ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। এর পরে ২০০২ ও ২০০৭ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। ২০০৭-এই ২৯ নম্বরে তৃণমূল প্রার্থী হন তাঁর স্ত্রী রুমা পাড়িয়াল। তাঁকেও নিরাশ করেননি ভোটারেরা। কিন্তু এ বার?
শশাঙ্কপল্লি, উত্তরায়ণ, শ্রমিকপল্লি, ডেয়ারি কলোনি, সগড়ভাঙা হাউজিং কমপ্লেক্স, দেশবন্ধু নগর কলোনি, ঘুষিকডাঙা, জোনাল সেন্টার নিয়ে ২৯ নম্বর ওয়ার্ড। রুমাদেবীর দাবি, তিনি যখন প্রথম কাউন্সিলর হন, সব রাস্তাঘাট ছিল ভাঙাচোরা। গত কয়েক বছরে সেই সব রাস্তা হয় পিচের নয় কংক্রিটের করে দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দা তুহিন দাস, সৌমেন মিত্র, পবিত্র কালিন্দিরা কিন্তু পাল্টা বলেন, “বস্তি অঞ্চলে উন্নয়নের কাজ তেমন হয়নি। ঘুষিকনগর, শ্রমিক পল্লি, ডেয়ারি মোড়, পুকুরপাড় সংলগ্ন বস্তিতে রাস্তা ও নিকাশি নেই।”
রুমাদেবীর দাবি, দেশবন্ধু নগরের বাসিন্দাদের একাংশকে ব্যস্ত রেলগেট পেরিয়ে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে পানীয় জল আনতে হত। এলাকায় জলের সেংযাগ এনে দিয়ে তাঁদের সুবিধা করে দিয়েছেন। জোনাল সেন্টার এলাকায় বৃষ্টি হলে জল ঢুকে যেত। পাকা নর্দমা করে দেওয়া সে সমস্যা মিটেছে। ৪২১টি বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার সুবিধা পাচ্ছে। বার্ধক্যভাতা পাচ্ছেন ৬৪ জন। বিধবা ভাতা পান ৩৪ জন। বিএসইউপি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন ২৫ জন। জে পি অ্যাভিনিউয়ে দু’টি প্রতীক্ষালয় তৈরির কাজ চলছে। তবে দেশবন্ধু নগর কলোনি থেকে ইউসিআরসি পর্যন্ত বড় নর্দমা তৈরি করার কাজ যে বাকি রয়েছে বা সগড়ভাঙ্গা হাউসিং কলোনির এ, বি, সি ব্লক এবং এনএন বসু রোড এলাকায় সব বাড়িতে যে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি।
|
|
|
২৯ নম্বরে রাস্তার উপরেই পড়ে জঞ্জাল। |
৩০ নম্বরে জঞ্জালে বোঝাই নর্দমা। |
|
কড়ঙ্গপাড়া, দুর্গাপুর বাজার, শান্তিবন পার্ক, স্কুলপাড়া, সিনেমা রোড, অম্বেডকর কলোনি, এসবিএসটিসি কলোনি, বিওজিএল সংলগ্ন বস্তি, নিউ গোবিন্দ পল্লি, ভগৎপল্লি, এসবি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সংলগ্ন বস্তি, পি অ্যান্ড টি কলোনি, লিলুয়াবাঁধ নিয়ে ওয়ার্ড ৩০। তিন বারের কাউন্সিলর বিশ্বনাথবাবুর দাবি, তিনি বস্তি এলাকায় রাস্তা, নিকাশি, পানীয় জলের সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছেন। প্রতিটি বস্তিতে গড়ে দু’টি করে কমিউনিটি শৌচাগার হয়েছে। রায়রানী দেবী স্কুলে গড়া হয়েছে নতুন ক্লাসঘর। বিএসইউপি প্রকল্পে ২৫ জন বাড়ি পেয়েছেন। ৩০০ জন বিধবা ও বার্ধক্যভাতা পাচ্ছেন।
বিরোধীরা অবশ্য নালিশ করছেন, বিধবা ভাতা থেকে বার্ধক্য ভাতা, সব ক্ষেত্রেই দলের রং দেখে কাজ করেন তিনি। তাই দেড় দশকে যত উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, হয়নি। বিশ্বনাথবাবুর জবাব, “বহু কাজ হয়েছে। অত মনে নেই। সব সময়ে মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকার চেষ্টা করি।” এ বার কিন্তু তাঁর সামনে অন্য বিপদ। ৩০ নম্বর এ বার তফসিলি জাতির প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত। অর্থাৎ, বিশ্বনাথবাবু আর নিজের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারছেন না। কাউন্সিলর হতে হলে তাঁকে অন্য কোনও ওয়ার্ডে যেতে হবে। সেখানে আবার নতুন লড়াই। পুরসভার বিরোধী দলনেতার সংক্ষিপ্ত উত্তর, “দল যেখানে প্রার্থী করবে, সেখানেই লড়ব।”
দু’জনেই যখন রাজনীতিতে, কেমন চলে ‘দাদা-বৌদি’র সংসার?
সকাল ৮টা নাগাদ বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তখনই ছেলের জন্য দুধ কিনে বাড়ি ঢুকলেন বিশ্বনাথবাবু। তত ক্ষণে বাড়িতে অন্তত দশ জন এসে বসে আছেন। কেউ এসেছেন জলের সংযোগ নেওয়ার জন্য, কেউ এসেছেন শংসাপত্র নিতে, কেউ এসেছেন জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে। বাড়ির কর্তা ফিরেই বসে গেলেন তাঁদের নিয়ে। কিন্তু লোকে যে বলে, গিন্নিকে সব সময়ে পাওয়া যায় না?
রুমাদেবী মেনে নেন, “অভিযোগ আংশিক সত্য। বাড়িতে শ্বশুরমশাই জটিল রোগে ভুগছেন। আমাদের বছর পাঁচেকের মেয়ের হার্টে সমস্যা। সে সবও তো সামলাতে হয়।” তার পরেই যোগ করেন, “ব্যক্তিগত সমস্যার ছাপ কাজে কোনও দিন পড়তে দিইনি।”
বিচার করবেন ভোটারেরা। |
নজরে নগর |
ওয়ার্ড ২৯ |
ওয়ার্ড ৩০ |
• একশো দিনের কাজ শুরু হয়নি
• কিছু এলাকায় আংশিক বিদ্যুদয়ন হয়েছে
• বস্তি এলাকার সার্বিক উন্নয়ন হয়নি |
• রাস্তা ভাঙাচোরা, সংস্কার হয় না
• নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল
• দুর্গাপুর বাজারে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই |
ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়নের জন্য
পাঁচ বছর সময় যথেষ্ট নয়।
রুমা পাড়িয়াল, তৃণমূল কাউন্সিলর |
কথা দিয়ে কথা রাখি।
এই ভাবেই এগিয়ে চলেছি।
বিশ্বনাথ পাড়িয়াল, তৃণমূল কাউন্সিলর |
বস্তি এলাকার কোনও উন্নয়ন হয়নি।
পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য।
গোপন দাস, সিপিএম কর্মী |
সরকারি ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক
পক্ষপাত করেছেন কাউন্সিলর।
প্রকাশ দাস, সিপিএম কর্মী |
|
ছবি: বিশ্বনাথ মশান। |
|
|
|
|
|