দেড় দশক আগে পুরসভার মর্যাদা পাওয়া ইস্তক যিনি দুর্গাপুরের মেয়র ছিলেন, সেই রথীন রায়কে বাদ রেখেই এ বার নির্বাচনে যাচ্ছে সিপিএম। টানা তিন বার একই পদে থাকায় দলের রাজ্য কমিটির এই প্রবীণ নেতাকে সরানো হল বলে সিপিএম সূত্রে বলা হচ্ছে। প্রাক্তন বিধায়ক, গত বিধানসভা নির্বাচনে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে পরাজিত বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীকে পুরসভায় দাঁড় করানো হচ্ছে। রথীনবাবু-সহ ৩৪ জন কাউন্সিলরকে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে।
|
রথীন রায় |
আগামী ৩ জুন রাজ্যের আরও পাঁচ পুরসভার সঙ্গে দুর্গাপুরেও পুর নির্বাচন হতে চলেছে। রাজ্যে ১১ মাস আগে কংগ্রেস-তৃণমূল যে ভাবে জোট গড়ে ‘পরিবর্তন’ এনেছিল, একই ভাবে এই শিল্পশহর থেকেও বামফ্রন্টকে উৎখাত করতে চাইছে তারা। বাকি পাঁচ পুরসভায় এখনও জোট না-হলেও দুর্গাপুরে তারা জোটবদ্ধ হয়েই লড়ছে। জোটের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে বলেই আরও ‘সতর্ক’ হয়ে এগোতে হচ্ছে সিপিএমকে। প্রার্থী-তালিকায় ‘পরিবর্তন’ এনে তারা এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চাইছে বলে বাম সূত্রের ব্যাখ্যা।
সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। পুরসভার ৪৩টি আসনের মধ্যে ৩৮টিতে সিপিএম, তিনটিতে সিপিআই, একটি করে আসনে আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক লড়ছে। এক মাত্র ফ ব প্রার্থী ছাড়া বাকি ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষিত হয়েছে। ডেপুটি মেয়র শেখ সুলতান এবং চেয়ারম্যান গগনচন্দ্র ঘোষকেও বাদ দিয়েছে সিপিএম। বাদ পড়েছেন চার মেয়র পারিষদও। রথীনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “দল যা নির্দেশ দেবে, সেই মতোই কাজ করে যাব।”
বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকায় এ বার আনকোরা মুখ ২৫টি। পাশাপাশি, ২০০২ সালের পুরভোটে প্রার্থী হয়েছেন বা জিতেছেন, এমন ৯ জনকেও ফের দাঁড় করানো হয়েছে। দুর্গাপুর ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ থেকে পুরসভা হওয়ার পরে ১৯৯৭ সালের প্রথম নির্বাচনে জিতে মেয়র পারিষদ হয়েছিলেন বিপ্রেন্দুবাবু। সরাসরি ‘মেয়র’ না-হলেও উন্নয়ন-সহ সমস্ত কাজে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ২০০২ সালে পুননির্বাচিত হওয়ার পরে তাঁর আরও দায়িত্ব বাড়ে। কিন্তু ২০০৬-এ বিধায়ক হয়ে যাওয়ায় আর তাঁকে পুরসভায় দাঁড় করানো হয়নি। এ বার তাঁকেই মেয়র করা হতে পারে বলে দলের অন্দরে জল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে অমলবাবু বলেন, “নির্বাচনে আমরা জিতলে মেয়র ঠিক করতে পাঁচ মিনিটও সময় লাগবে না।” তবে বারবার প্রশ্নের মুখে শেষমেশ তাঁর মন্তব্য, “নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন!” অমলবাবুর দাবি, “গত এক বছরে রাজ্যে গণতন্ত্রের বিপদ নেমে এসেছে। মানুষ তা বুঝছেন।” শাসক-জোট এখনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে না-পারায় তাঁর টিপ্পনী, “এখন আমরা বিরোধী। ভেবেছিলাম, ওরা আগে ঘোষণা করুক, তার পরে আমরা করব। সে জন্যই দেরি হয়ে গেল!” কংগ্রেস-তৃণমূল জোট প্রসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “আব্দুল মান্নানকে যে ভাবে রাজ্যসভার প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করতে হল, তাতেই বোঝা যায় পরিস্থিতি আসলে কী!” জেলা তৃণমূল সভাপতি (শিল্পাঞ্চল) নেতা অপূর্ব মুখোপাধ্যায় অবশ্য পাল্টা বলেছেন, “আমরা যথা সময়েই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করব। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে সিপিএম নেতারা এখন এলোমেলো কথা বলছেন!”
|